তিন মাসে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৫ শতাংশ

0

কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও শিল্পাঞ্চলে শ্রম অসন্তোষ—গত তিন মাসে এ রকম চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি থাকার পরও দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় আছে। এই সময়ে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৫ শতাংশ বা ৫৫ কোটি ডলার।

পণ্য রপ্তানির হিসাবে গলদ ধরা পড়ার চার মাস পর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আজ বুধবার রপ্তানির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই-সেপ্টেম্বরে মোট ১ হাজার ১৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৮২ কোটি ডলারের পণ্য।

সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে ৩৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৩২৯ কোটি ডলারের পণ্য।

ইপিবির সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করেছিল। তখন সংস্থাটি বলেছিল, ওই অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ডলার। তবে আজ প্রকাশিত হিসাবে সংস্থাটি জানায়, গত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলার। তার মানে গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসেই পুরো বছরের চেয়ে ৭০৭ কোটি ডলার বেশি দেখিয়েছিল ইপিবি।

তবে ইপিবি এখন যে হিসাব দিয়েছে, সেটি প্রকৃত রপ্তানি নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত অর্থবছর প্রকৃত রপ্তানি ছিল ৪ হাজার ৮১ কোটি ডলার। তার মানে পুরো বছরের হিসাবে ইপিবি প্রকৃত রপ্তানির চেয়ে ৩৬৬ কোটি ডলার বেশি দেখিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে হঠাৎ করে প্রকৃত পণ্য রপ্তানির ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে। এর ফলে পণ্য রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল দেখা যায়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ইপিবি দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী দেশে আয় আসছে না। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, এত রপ্তানি হয়নি। তাই বেশি অর্থ আসার যৌক্তিকতা নেই। প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। তারপর থেকে ইপিবি পণ্য রপ্তানির হিসাব প্রকাশ বন্ধ রাখে।

এদিকে ইপিবির প্রকাশিত রপ্তানির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদিও এই সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোমটেক্সটাইল ও হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এই সময়ে ৯২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৮২ কোটি ডলার। অর্থাৎ এবার তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৭৮ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশ।

আলোচ্য তিন মাসে ২৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। শুধু সেপ্টেম্বরে ৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি আবার ঘুরে একটু দাঁড়িয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে ২৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি।

আলোচ্য সময়ে হোমটেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি কমেছে। গত তিন মাসে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের হোমটেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এই খাতের রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

নতুন করে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ উপলক্ষে আজ বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ইপিবির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি। এতে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে রপ্তানির তথ্য সংগ্রহ করে ইপিবি। তবে কিছু কারণে সেখানে একই রপ্তানির তথ্য একাধিকবার হিসাব করা হয়েছিল। ইপিবি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে অসংগতিগুলো ঠিক করা হয়েছে। তারপর এনবিআর থেকে নেওয়া সঠিক তথ্যের আলোকে ইপিবি সংশোধিত রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করেছে।

আনোয়ার হোসেন আরও জানান, এখন থেকে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করে প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে রপ্তানি তথ্য প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here