বৈশ্বিক ফ্যাশনে রাজত্ব করা মালয়েশিয়ান উদ্যোক্তা -জিমি চু

ফ্যাশনেবল নারীরা পছন্দের পোশাকের সঙ্গে পায়ের জুতার প্রতি ও যে সমান তালে সচেতন তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না। আভিজাত্য প্রকাশে শৌখিন মানুষ আস্থা করে ব্র‍্যান্ড ও দামে। দাম ও ব্র‍্যান্ড ভ্যালুর জন্য বিশ্বে যে কয়েকটি জুতার ব্র‍্যান্ড আছে তার মধ্যে অন্যতম জিমি চু।
জুতা প্রেমিকরা অবশ্যই নাম শুনেছেন বিশ্বের অন্যতম শৌখিন জুতা প্রস্তুতকারক ব্র‍্যান্ড জিমি চু এর। হলিউড অভিনেত্রীদের পছন্দের হাই হিল ব্র‍্যান্ড জিমি চু। একটা সময় ডিজাইনার জুতা বলতে শুধু ছেলেদের জুতাই বোঝাতো। কিন্তু যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান জিমি চু যা নারীদের জন্য ডিজাইনার হাতে তৈরি জুতা প্রস্তুত করে এই ধারণা পালটে দেন।

জিমি চু’র শোরুম

এবার চলুন জেনে নিই এই খ্যাতনামা ব্র‍্যান্ডের যিনি মূল পরিকল্পনাকারী তার সম্পর্কে। “জিমি চু’র” প্রতিষ্ঠাতা জিমি চু ইয়াং কিট যিনি জিমি চু নামেই অধিক পরিচিত। বৈশ্বিক ফ্যাশনে রাজত্ব করা মালয়েশিয়ান এ ডিজাইনার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালের ১৫ নভেম্বর পুলাও পিনাং এর জর্জটাউনে। জুতা প্রস্তুতকারক পরিবারে জন্মানোর সুবাদে খুব ছোট থেকেই জুতা বানানো সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞান ছিল। তার বাবাও চাইত ছেলে পূর্বজদের পেশা অনুসরণ করুক। জিমি চু তার জীবনের প্রথম জুতা তৈরি করেছিলেন যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর।

জিমিকে মালয়েশিয়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। মালয়েশিয়ায় পড়াশুনা শেষ করে, উচ্চ শিক্ষার জন্য যায় ব্রিটেনে। ১৯৮৩ সালে হ্যাকনের কর্ডওয়াইনার টেকনিক্যাল কলেজ থেকে জুতা তৈরির ওপর স্নাতক সম্পন্ন করে। পড়াশুনার খরচ মেটাতে জিমি অনেক ধরনের খণ্ডকালীন চাকরি করে যার মধ্যে জুতা কারখানার ক্লিনার এর কাজও ছিল।

ডায়নার পায়ে জিমি চু’র সু

১৯৮৬ সালে পড়াশুনা শেষ করে জিমি হ্যাকনের একটি পুরাতন হাসপাতাল ভবনে তার প্রথম দোকানটি নেন। দোকান নেবার মাত্র ২ বছরের মাথায় ব্রিটিশ লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ভোগ তার জুতা নিয়ে আট পৃষ্ঠার একটি ফিচার করে। তার অনন্য ডিজাইন এবং হস্তশিল্পের কারুকার্য তাকে সফলতার শিখরে নিয়ে যেতে থাকে।

আরও ২ বছর পরের কথা। তার খ্যাতি আরো ছড়িয়ে গেল যখন ওয়েলসের রাজকন্যা প্রিন্সেস ডায়না তার নিয়মিত ক্রেতায় পরিণত হলেন।

১৯৯৬ সাল। জিমি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকলো যখন ভোগ ম্যাগাজিনের ফ্যাশন শুটের জুতার জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ম্যাগাজিনের এডিটর তামারা মেলনের সাথে যৌথভাবে শুরু করেন জিমি চু লিমিটেড। প্রথম “জিমি চো” স্টোর চালু হয় ১৯৯৬ সালে লন্ডনের মোটোকম্ব স্ট্রিটে। ২ বছর পর আমেরিকায় নিউইয়র্ক আর বেভারলি হিলসে ২টি দোকান চালু করা হয়।

জিমি চু’র এক্সক্লুসিভ কালেকশন

২০০০ সালে জিমি চু তার মাতৃভূমি মালয়েশিয়ার সুলতানের কাছ থেকে এওয়ার্ড গ্রহণ করেন। এই স্বীকৃতি তাকে বানিয়ে দেয় “দাতো জিমি চু” বা “দাতুক জিমি চু”। ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অবদান রাখার জন্য জিমি চু ” অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার” এ ভূষিত হন। এছাড়া প্রিন্সেস ডায়ানা এওয়ার্ড এর এম্বাসাডর হিসেবেও নিযুক্ত হন জিমি।

দুর্ভাগ্যবশত তামারার সাথে অংশীদারি শেষ হয়ে যায় জিমির। ২০০১ সালে জিমি তার কোম্পানির ৫০% মালিকানা বিক্রি করে দেন। সিদ্ধান্ত নেন এবার শুধু দামী জুতা প্রস্তুতের উপর মনোযোগী হবেন।

জিমি চু’র এক্সক্লুসিভ সু

জিমি চু নিজের এক্সক্লুসিভ সব কালেকশন নিয়ে ২০০৬ সালে চালু করেন জিমি চু কোটরে লাইন। জুতার পাশাপাশি তৈরি করা শুরু করেন হ্যান্ডব্যাগ, সাইডব্যাগ, ক্লাচ, ওয়ালেটসহ ক্লাসিক সব আইটেম।

২০১৪ সাল। ৩৪টা দেশের ১৭৭টি স্টোর, বিশ্বের প্রথম বিলাসবহুল জুতার ব্র‍্যান্ড পাবলিক কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয়ে যায়। ২০১৭ এর জুলাইতে মাইকেল কোর্সের কাছে ১.২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়ে যায় জিমি চু কোম্পানি।

স্টার ওয়ার্স এর প্রিমিয়ারে জিমি চু’র জুতা

বর্তমানে জিমি চু লিমিটেড এর কো-ফাউন্ডার হিসেবেই জিমি চু বহুল পরিচিত। তার সৃষ্টি আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। আজ ক্লায়েন্ট লিস্টে আছে মিশেল ওবামা, বেয়ন্স এর মত বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গ। বিশ্বখ্যাত সেলিব্রিটি ম্যাডোনা, ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম, কিম কার্দাশিয়ান, লিন্ডসে লোহান, হ্যালি বেরি,সান্ড্রা বুলক, কেট ব্ল্যানকেট, নাটালি পোর্টম্যান, জেনিফার লোপেজ সবার পছন্দের ব্র‍্যান্ড জিমি চু। এছাড়া হ্যারডস, সাক্স ফিফথ এভিনিউ এর মত নামী সব দোকানে শোভা পায় তার জুতা ও অন্যান্য পণ্য।

সু ডিজাইনে ব্যস্ত জিমি চু

নারীদের জন্য জুতা এখনও জিমি চু ব্র‍্যান্ডের মূল পণ্য। এছাড়া ওয়ালেট, সানগ্লাস, বেল্ট, হ্যাট,পারফিউম, পুরুষদের জুতা সবই রয়েছে এই ব্র‍্যান্ডে। স্নিকার থেকে স্কাই হাই পাম্প, সাধারণ জুতা থেকে বিশেষ ডিজাইনের জুতা কি নেই জিমি চুতে।

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

সুরাইয়া আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here