ছোটবেলায় পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে টিভি দেখা, এই নিয়ে বাবা-মা’র কাছে বকা শুনতে হয়নি এমন মানুষ বোধহয় খুব কম! কিন্তু এই টিভি দেখেও যে উপকৃত হওয়া যায় তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নুসরাত জাহান রথী।
টিভিতে যত সৃজনশীল কাজের অনুষ্ঠান হয় তার সবগুলোই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। এমনকি হাতের ছোট্ট ফোন দিয়ে ভিডিও করে রাখতেন যেন পরে আরও ভালো ভাবে সেটা দেখে শিখতে পারেন।
টিভিতে দেখেই ফুড কার্ভিং এর কাজটি রপ্ত করে ফেলেন। অনেক বিয়েতে তিনি কাজও করেছেন এবং প্রতিটি কাজেই সাথে থাকতেন তার বোন ইসরাত জাহান জুথি। কলেজের কয়েকজন বান্ধবী মিলে ফেসবুকে একটি পেইজ খুলেন যেখানে বিয়ের সকল সাজানোর কাজ করতেন তারা।
কেউ অলংকার, কেউ মেহেদী পড়ানো, কেউ ফুড কার্ভিং। এখান থেকেই নুসরাত বিভিন্ন অলংকার তৈরীর কৌশল রপ্ত করেন। আত্মীয়-স্বজন’র বিয়েতে বিশেষ করে হলুদের অলংকার তৈরী করে দিতেন।
এরপর ‘হলুদ ডেকোরেট বাই নুসরাত’ নামে নিজেই একটা পেইজ ওপেন করার তিন দিনের মাথায় হলুদের সকল অর্নামেন্টস তৈরীর একটি অর্ডার আসে। শুরু হলো একের পর এক অর্ডার আসা। একা একা সব কাজ সামাল দিতে না পেরে কর্মী নিয়োগ দিলেন।
পরিবারের সবাই সাপোর্ট দিলেও বাবা দিতেন না। এভাবে প্রায় এক বছর পার হয়ে যায়। হঠাৎ সুদূর কানাডা থেকে পেইজে একটা অর্ডার আসে। সেখানে বাংলাদেশের গায়ে হলুদের সাজসজ্জা’র উপর এক ফ্যাশন শো’র প্রদর্শনীতে তারা নুসরাত জাহান রথী’র গায়ে হলুদের অলংকার নেবেন।
এই কথাটি জানার পর বাবা ভীষণ খুশী হন এবং সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিতে থাকেন। অনলাইনে যখন ব্যবসা অনেক বেড়ে গেল তখন তিনি একটা আউটলেট দেবার প্রয়োজন বোধ করেন। বাবার সহযোগিতায় মিরপুর বেনারসি পল্লীতে ‘বিয়েবাজারডটকম’ নামে একটা দোকান দিলেন। অনলাইনের পাশাপাশি খুব ভালো সাড়া মিলতে শুরু করলো তার ব্যবসায়।
বর্তমানে সব মিলিয়ে নুসরাতের কর্মশালায় ১০ জন কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। গায়ে হলুদ থেকে বিয়ের যাবতীয় সামগ্রী – বটুয়া ব্যাগ, ব্রাইডাল খোপা, হলুদ অর্নামেন্টস, ফ্লাওয়ার বেইজ, মেটাল বেইজ, আয়না, রাখি, শাড়ী, পাঞ্জাবী সব ধরণের পণ্য সামগ্রী পাওয়া যায় এখানে।
তার তৈরী পণ্য সমগ্র বাংলাদেশ সহ নিয়মিত আমেরিকাতেও রপ্তানি হচ্ছে।
উদ্যোক্তা নুসরাত জাহান রথী তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, ‘আমি আর্টিফিসিয়াল ফুল দিয়ে তৈরী অলংকারকে একটি ভিন্ন মাত্রায় রূপ দিতে চাই এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বিয়ের মতো সাজসজ্জার রীতি চালু করতে চাই।’
বিপ্লব আহসান