জন্ম চট্টগ্রাম জেলায়। সেখানেই বেড়ে ওঠা। বাবা ইঞ্জিনিয়ার, মা গৃহিনী। চার ভাইবোনের সবার ছোট রোজিনা হোসেন ঝুমা। পড়াশুনা করেছেন চট্টগ্রামেই। দর্শনশাস্ত্রে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করে প্রথমে বেশ বিপাকে পড়ে যান। দর্শন বিষয়টা সবাই খুব একটা ভালোভাবে নিত না, সবাই ভাবতো এই সাবজেক্টে পড়ে কি হবে। কিন্তু অনার্স প্রথম বর্ষেই চেষ্টা করে একটা স্কুলে জয়েন করেন ঝুমা। ওখানে কিছুদিন চাকরী করার পর অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে চট্টগ্রাম ইপিজেডের ইউনিভোগে এইচ আর ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেন। এর পরবর্তীতে কর্ণফুলী ইপিজেডের ক্যানপার্ক এ্যাপারেল প্রাইভেট লিমিটেডেও জব করেছেন তিনি।

এর মাঝে বিয়ে হয়ে যায়, বিয়ের পর চট্টগ্রামের চাকরি ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন। আত্মনির্ভরশীল থাকাটা ঝুমার সবসময়ই ফার্স্ট প্রায়োরিটি ছিল। আর তাই ঢাকা এসেও জব কন্টিনিউ করেছিলেন। কিন্তু সন্তান হলে সেটি আর কন্টিনিউ করা সম্ভব হয়নি। আত্মনির্ভরশীল থাকার সেই প্রচন্ড ইচ্ছা থেকে এবং ছোটবেলার বুটিকের টুকটাক হাতের কাজের অভিজ্ঞতার সাহসে স্বামীর সাথে পরামর্শ করে শুরু করে দিলেন কাজ। ‘ডিজাইনার কালেকশন’ নামে অনলাইন পেজটির মাধ্যমে।

অনলাইনে ব্যবসা করা সহজ নয়। একজন অন্টারপ্রেনিউর হতে হলে অবশ্যই পণ্যের নতুনত্ব থাকতে হবে। চেয়েছিলেন সবার চেয়ে নিজেকে একটু আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে । কিন্তু মূলধন স্বল্পতার কারনে একা এগোনো সম্ভব হচ্ছিল না। তখন সহযোগী হয়ে তার এক বড় ভাই যুক্ত হন। দুজনে মিলে হ্যান্ডব্লক প্রিন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। নিজেদের ডিজাইন করা পণ্যে কারিগর দিয়ে কাজ করিয়ে তৈরী করছেন আর সেই বড় ভাইয়ের টেইলারিং শপ থেকে তারা তাদের পণ্যে অফলাইনে ও সেল করছেন।

ঝুমা তার ফেইসবুক পেইজের প্রচারনা শুরু করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তাদের ফেইসবুক গ্র্রুপগুলো থেকে সাহায্য নেন। তার মধ্যে বিশেষ করে সফল উদ্যোক্তা উর্মির রহমানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।যার সাহায্যে আরো বেশী আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠছেন।

তার মূল লক্ষ্য দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করা। হ্যান্ড ব্লক প্রিন্ট দিয়ে সব রকমের পণ্যে কাজ করার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও হোম ডেকর আইটেম ,বিছানার চাদর, কুশন কাভার,ডাইনিং ক্লথে ব্লক দিয়ে ডিজাইন করছেন।

খুব দ্রুত একটি আউটলেট দিতে চান এ উদ্যোক্তা। নতুনদের জন্য উদ্যোক্তা বলেন, ” অবশ্যই গদবাঁধা আইডিয়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং নিজের আইডিয়াতে নতুন কিছু উপস্থাপনের চেষ্টা করতে হবে।তবেই তারা এই প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারবে। অনলাইন বিজনেস পুরোটাই নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যাপার।তাই যতো বেশী মানুষের সাথে মিশবে তত ভালোভাবে মানুষকে জানতে পারবে এবং ব্যবসায় গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হবে”।

উদ্যোক্তার চাওয়া, তরুণ উদ্যোক্তাদের পাশে তাদের পরিবার যেন সব সময় থাকে কারণ তিনি মনে করেন তার পরিবার যদি তাকে সাপোর্ট না দিতেন তিনি আজকের এই পরিবেশে আসতে পারতেন না এবং তার চাইতেও তার বড় চাওয়া উদ্যোক্তাদের কাজ করার জন্য থাকবে একটি সুন্দর দেশ একটি সুন্দর অনুপ্রেরণামূলক কর্মপরিবেশ যেখানে কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত হবে এবং ব্যস্ত থাকবে। যা উদ্যোক্তার জন্য ফলপ্রসূ এবং উপযুক্ত হবে।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here