উদ্যোক্তা সামিয়া তারান্নুম দুই ভাই বোনের মাঝে প্রথম সন্তান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহে। স্কুল কলেজ সবই ময়মনসিংহে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রী।
Cambridge International certificate in teaching and learning (CCITL), Cambridge International diploma in teaching and learning (CDITL) এই কোর্সগুলো সম্পন্ন করেন। পড়াশোনা শেষে দীর্ঘ ১০ বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন শিক্ষক হিসেবে। মাতৃত্বের কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মোটামুটি রাগ করেই চাকরি ছেড়েছেন। শিক্ষকতা বিষয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তার।
চাকরি ছাড়ার পর থেকে খুব অল্প পরিসরে নিজের বাসায় কয়েক জন মহিলাকে স্পোকেন ইংলিশের ট্রেনিং দেওয়া শুরু করেন। উদ্যোক্তার হাজব্যান্ড এর প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তার সহধর্মিণী উদ্যোক্তা হবেন। তিনি নিজেও বারো বছরের উপর একটি স্বনামখ্যাত রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকরি করার পর চাকরি ছাড়ে শুধুমাত্র নিজে কিছু করতে চায় এর জন্য। উদ্যোক্তা নিজে চাকরি ছাড়ার পর দুইজন একসাথে কাজ শুরু করেন। একটি ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করার লক্ষ্যে। দুর্ভাগ্যবশত কোভিড পরিস্থিতিতে এবং এর লকডাউনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
লকডাউনে পুরো তিন মাস সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকে। নিজেদের সামনে নিতে তাদের একটু সময় লাগে, ফিজিক্যাল ক্লাসকে তারা কনভার্ট করেন অনলাইন ক্লাসে। অনলাইনে ফেসবুকের পেইজটিকে কাজে লাগিয়ে খুব ছোট পরিসরে প্রচারণা শুরু করেন। শুরু করেন স্পোকেন ইংলিশের অনলাইন ক্লাস। শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে কাজ শুরু হয়।
৬টি ব্যাচকে ট্রেনিং দেয়া শুরু করেন।উদ্যোক্তা ক্লাস করাতেন আর তার হাজব্যান্ড দেখতেন ডিজিটাল মার্কেটিং এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পার্ট। তাদের কোন পুঁজি ছিলনা ২০১৯ থেকে তাদের জীবনে অনেকগুলো ঝড় হয়। শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স আর সামান্য এডভার্টাইজিং ছাড়া কোন পুঁজি তাদের ছিল না। এখন তাদের প্লাটফর্মে লাইভ কোর্স আছে চারটি •ফিমেল স্পোকেন •কিডস স্পোকেন •টিনেজার্স স্পোকেন •আইইএলটিএস প্রিপারেশন
এখন তাদের মোট ট্রেইনার এর সংখ্যা প্রায় ১০জন এবং সাথে আছেন ১৪জন মডারেটর। ছোট একটি একরুমের অফিস আছে। অফিস রুমটা শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স এর জন্যই প্রয়োজন ছিল কেননা তাদের সমস্ত ইনস্ট্রাক্টর রা এবং যারা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সাইডে আছেন সবাই কাজ করেন যার যার বাসা থেকে।
যেহেতু অনলাইন ক্লাস, সারা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা তাদের কার্যক্রম চালান। সাধারণত তাদের প্রতি মাসে ৬ থেকে ৮টি ব্যাচের মত থাকে।
উদ্যোক্তার হাজব্যান্ড নিজে কিছু করতে চেয়েছিল আর উদ্যোক্তা সামিয়া মাতৃত্বের কারণে উদ্যোক্তা হয়েছেন। উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আমাদের প্রয়োজনটাই বেশি ছিল। দেয়ালে পিঠ আটকে গিয়েছিল। তাই সর্বশক্তি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো টাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
উদ্যোক্তা জানান “নিজের চাকরি ছাড়ার পর প্রচণ্ড রকম আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতাম। আমার অফিস আমাকে ফিল করিয়েছিল যে “Nothing left of me” যেহেতু আমি দুই বাচ্চার মা। ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৬ মাস। আমার মনে হচ্ছিলো আসলেই আমি মনে হয় আর কোনদিন উপার্জন করতে পারবোনা।”
এত শক্তিশালী একটি প্রোফাইল থাকার পরেও শুধুমাত্র মাতৃত্বের কারণে কিছু করতে পারবেন না তিনি।
তার মত কত হাজার মা আছে যারা শক্তিশালী প্রোফাইল থাকার পরও কিছু করতে পারেনা। তিনি তার ভেতর থেকে তাদের ক্রাইসিসটি ফিল করেছিলেন। সেই ভাবনাটি থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে কাজ করবেন। তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার মাধ্যমে তাদেরকে কনফিডেন্ট করবেন। তাদের ভেতরে শক্তিকে জাগিয়ে তুলবেন এবং তাদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তুলবেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তিনি জানান “আমরা আমাদের ছোট্ট ইটিটিএ বিডি ফেইসবুক পেইজকে ওয়েবসাইটে এক্সপান্ড করেছি। এটিকে একটি পুরোপুরি ই-লার্নিং প্লাটফর্মে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। “
আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন ই লার্নিং প্ল্যাটফর্ম গুলোতে আগে থেকেই আমরা ইংলিশ রিলেটেড বিভিন্ন কোর্স দিয়ে আসছিলাম। এখন আমাদের ওয়েবসাইটে আমরা কিছু প্রি-রেকোর্ডেড ভিডিও কোর্স রেডি করেছি এবং আরো অনেকগুলো কোর্স রেডি করার কাজ চলছে। আমাদের প্ল্যাটফর্মের অনেকজন ট্রেইনার নিজেদেরকে এই বিষয়ে প্রস্তুত করছেন। আশা রাখছি সামনে লাইভ ক্লাসের পাশাপাশি ফ্রী রেকর্ডেড ভিডিও কোর্স ও আরো আসবে। আমরা অত্যন্ত ধীরে ধীরে আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”
মাসুমা সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা