পিঠা শুধু লোকজ খাবারই নয়, ঐতিহ্যবাহী শিল্প হিসেবেও পরিচিত। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির মেলবন্ধন। একটা সময় ছিল যখন বিয়ে-শাদি অথবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হরেক রকমের পিঠা ছাড়া জমে উঠতো না। আবার শীত মানেই বাহারি পিঠার মৌসুম। সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন নকশী করা পিঠা হারিয়ে যাচ্ছে। অথবা যান্ত্রিক জীবনে সময়ের স্বল্পতার কারণে মানুষের শখ-আহলাদে পরিবর্তন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে উদ্যোগী হয়েছেন প্রিয়াংকা তানহা। পিঠার পাশাপাশি অনেক ধরনের সুস্বাদু খাবার নিয়েও তার উদ্যোগ।
প্রিয়াংকা তানহা ‘চাঁদের পালকি পিঠা ঘর’এর স্বত্ত্বাধিকারী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বড় তিনি। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়, তবে বড় হয়েছেন ঢাকাতে। অনার্স করেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ থেকে।

উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন, “যখন আমি ও লেভেলে পড়ি তখন থেকেই চিন্তাভাবনা করে পিঠা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। ছোটবেলা থেকে আমার ব্যবসা করার স্বপ্ন ছিল। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতাম। ২০১০ এ স্কুলের বৈশাখী মেলায় একটি ফুড স্টল নিয়ে প্রথম ব্যবসা। একই বছর জেনেটিক প্লাজায় ১৫ দিনের শীত পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করি। সেখানে আমার তৈরি খাবারে ক্রেতাদের বেশ সাড়া পাই। পাশাপাশি মুঠোফোনের মাধ্যমেও অর্ডার আসতে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ‘চাঁদের পালকি পিঠা ঘর’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ ওপেন করি।”
প্রিয়াংকা তানহা মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এখন মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। তখন থেকে হরেক রকমের বাহারি স্বাদের পিঠা নিয়ে কাজ, বর্তমানে ৫০টি পিঠার আইটেম নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে আছে দুধপুলি, পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, নকশি পিঠা, চিতই, দুধ চিতই, ভাপা পিঠাসহ নানা ধরনের মজাদার সুস্বাদু খাবার সরবরাহ করেন। পিঠা ও দেশীয় খাবারের পাশাপাশি মিষ্টি, ভারতীয় খাবার, চাইনিজসহ বিভিন্ন পদের স্বাস্থ্যকর খাবার পাওয়া যায় চাঁদের পালকিতে। সাতজন কর্মী নিয়ে কাজ করছেন। আমেরিকা ও ইতালিতেও গেছে তার খাবার আইটেম।
পিঠাশিল্পী প্রিয়াংকা তানহা জানান, দাদি ও মায়ের হাত ধরেই শেখা পিঠার নকশা। তার মতে, নকশী পিঠাসহ সব ধরনের পিঠার সৌন্দর্য মূলত প্রস্তুতকারীর শিল্পবোধে, তিনি যেমন চান, সে নকশা ফুটিয়ে তুলতে পারেন। তার সবসময় চেষ্টা থাকে দাদি ও মায়ের হাতের ভালোবাসায় মাখানো স্বাদটা যেন তার প্রতিটি পিঠায় ধরে রাখতে পারেন। দাদি ও মায়ের রেসিপিতে প্রিয়াংকার শখের রান্না এখন সুখে পরিবর্তন এনেছে।

তরুন উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি বলেন: বেশিরভাগ মানুষ তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন না, কারণ তারা ধৈর্য ধরে লক্ষ্য নিয়ে ঠিকমত পরিকল্পনা করেন না। সফলরা জানেন যে তারা ঠিক কোথায় পৌঁছাতে চান এবং কীভাবে পৌঁছাতে চান। তাই নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন, গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে প্রিয়াংকা জানান, নিজের একটি রেস্টুরেন্ট দিতে চান যেখানে তার দাদি ও মায়ের শেখানো পিঠা অনেক বড় পরিসরে পরিচিতি পাবে। দেশী-ভিন দেশী সব ধরনের খাবারে ক্রেতারা যেন তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সেটাই তার চাওয়া।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা