ঐক্য হেলথ টিম

ঐক্য হেলথ্ টিম খুব দ্রুততার সাথে এবং সফল ভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক। গত বৃহস্পতিবার  ‘ঐক্য হেলথ্’ টিম গিয়েছিল মিরপুরে একটি উদ্যোক্তার ফ্যাক্টরিতে এবং সেখানে প্রতিটি কর্মীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে এসেছে।

বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে ‘ঐক্য ফাউন্ডেশনের’ একটি সহযোগী সংস্থা ‘ঐক্য হেলথ্’ টিম।

ঐক্য হেলথ এর এবারের ক্যাম্পেইনের সাথে ছিলেন জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের একটি টিম। টিমে ছিলেন একজন ডাক্তার, এক জন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট , একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান। এছাড়াও দি ব্লু স্কাই চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের অন্য একটি টিমও ছিল। যাদের পক্ষে থেকে একজন ডাক্তার সহ আরও তিন জন অংশগ্রহণ করেছিলেন।

সারা দিন তারা কর্মীদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করেন। যেমন, দি ব্লু স্কাই চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন থেকে মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার চেকআপ করানো হয়। একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার এই ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন এবং নিজেই কিভাবে প্রাথমিক লক্ষণ নির্ণয় করবেন সে সম্পর্কেও অবগত করেন। এছাড়াও তারা কর্মীদের রক্তচাপ পরিমাপ, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, বাত জ্বর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, পরিচ্ছন্নতা সহ সাম্প্রতিক ডেঙ্গু প্রতিরক্ষা সেবা প্রদান করেন।

মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন সম্পর্কে সচেতন করা, পরিবার-পরিকল্পনা এবং কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কেও ধরণা দেন। হেলথ ক্যাম্পে মোট ৫৯ জন কর্মীর স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। তাদের অনেকেই জানতেন না শরীরে কি অসুখ বাসা বেঁধেছে।

ফ্যাক্টরিতে নিয়মিত সেবা দেওয়ার মতো কোন চিকিৎসক নেই। কর্মীরা জানান বড় অসুখ হলে ম্যাডাম চিকিৎসা করান কিন্তু ছোটখাট সমস্যায় তারা এমন সেবা পান না। সেই খোঁজ নিয়ে ‘ঐক্য ফাউন্ডেশন’ পাঠিয়ে ছিলেন ঐক্য হেলথ টিম। তাদের অনেকেই কর্ম পরিবেশের গুরুত্ব জানে না। পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন নয়। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের উপকারিতা জানেনা। । তারা হয়ত কোনদিন ভাবতেও পারেনি যে তাদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে কোন সংস্থা ভাবতে পারে! সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে কেউ এগিয়ে আসবে! বিনা মূল্যে কারখানায় এসে তাদের স্বাস্থ্য-সেবা দিতে পারে!

সেবা নেয়া উর্মি (৩২) নামের এক মহিলা কর্মী বলেন, “আমার ওজন অনেক আগে মেপেছিলাম। ওজন কম হলেই কি বা বেশী হলেই কি? আমার কাছে সব এক। কিন্তু ডাক্তার আজ আমাকে ওজন সম্পর্কে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বেশী ওজন হলে কি কি সমস্যা হবে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।”

অঞ্জনা গমেজ (৩০) নামের এক মহিলা বলেন, “আজ ডাক্তার আমার প্রেশার মেপে ঠিকঠাক ভাবে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। আবার বলেছেন টেনশন করা যাবে না। কী কী ঔষধ খেতে হবে তা লিখে দিয়েছেন।”

পারভিন (২৫) নামের এক কর্মী ফিক করে হেসে বললেন, ” আমি রক্তের গ্রুপ জানিনা আজ জানলাম আর আমার ডায়াবেটিস আছে সেটাও ডাক্তার বলে দিয়েছেন সাথে প্রেসক্রিপশনও লিখে দিয়েছেন।”

কাইয়ুম (২৪) নামের এক তরুণ কর্মী জানান,”ডাক্তার অনেক কিছু পরীক্ষা করেছে এবং বলেছে সব ভালো আছে। আজ আমি রক্তের গ্রুপও জানতে পেরেছি।”

পারভিন (৪০) নামের এক মহিলা বলেন, “আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার ছিল আজ আবার ডাক্তার চেক করে ঔষধ লিখে দিয়েছে এবং একা একা কিভাবে সমস্যা বোঝা যাবে তা শিখিয়ে দিয়েছেন।”

সেবা প্রদান শেষে কর্মীদের মাঝে একটা উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হয়েছে এবং প্রতি মাসেই এমন সেবা পাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। শেষে তারা সবাই ‘ঐক্য হেলথ্’ টিমকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে ‘ঐক্য হেলথ্’ টিম উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমিনের সাথে আলোচনা করেন। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রথমেই আমি বলব ‘ঐক্য হেলথ্’ এর এটা একটা গুড ইনিশিয়েটিভ। বিনামূল্যে এসে কর্মীদের সেবা প্রদান অবশ্যই বিষয়টি খুবই ভালো। ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আজ সবাই জানতে পেরেছে। এটা খুবই ফলপ্রসূ একটা উদ্যোগ। আসলে এভাবে সেবা দেয়া হয়ে ওঠেনি, বেশ কয়েক বছর আগে আমেরিকার একটি সংস্থা এসে এমন ভাবে সেবা দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কিন্তু এতো কর্মীর সেবা একসাথে দেয়া সম্ভব হয়নি তাই সেটি আর কন্টিনিউ হয়নি। তবে বড় কোনো সমস্যা হলে তখন আমি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। কিন্তু সবাইকে এত ভাল ভাবে একসাথে চিকিৎসা দেয়াটা হয়না। যেটা ‘ঐক্য হেলথ্’ করলেন। এভাবে নিয়মিত তাদের চিকিৎসা প্রদান করলে তারা মানুষিক দিক থেকেও স্ট্রং থাকবে। আর তারা স্ট্রং থাকা মানে আমরা উদ্যোক্তারা ভালো থাকি। সর্বোপরি দেশের উন্নয়ন হচ্ছে বলে আমি মনে করছি। কাজেই ‘ঐক্য হেলথ্’ কে আমি ইনভাইটেশন জানাচ্ছি আমাদের এখানে এসে আবারও আমার কর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য। আর আপনাদের এমন মহৎ উদ্যোগ যেন থেমে না যায়। সব মিলিয়ে আমি অভিভুত।

ডাক্তার মলয় কান্তি মন্ডল বলেন, “সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা কর্মীদের অনেক ধরণের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি এবং সেগুলো তারা বিনামূল্যে পেয়েছে। আসলে ‘ঐক্য হেলথ্ ‘ এর এই সেবা দেয়ার ব্রত দেখে আমার খুবই ভাল লেগেছে। যদি ভবিষ্যতে আমাকে ডাকে আমি অবশ্যই সময় দেয়ার চেষ্টা করব। আর আমি চাইবো ‘ঐক্য হেলথ্’ টিম এটা যেনো বন্ধ না করে।”

ঐক্য হেলথ সকল এসএমই উদ্যোক্তা ও কর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ও সুস্থ কর্ম-পরিবেশ তৈরি করতে বাংলাদেশের সকল গ্রাম, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় শহর সহ রাজধানীর সর্বত্র কাজ করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে আজ আমাদের দেশের সিংহভাগ কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। তাই অবশ্যই ‘ঐক্য হেলথ্’ একটি মাইল ফলক।

 

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here