সফল নারী উদ্যোক্তা- তাহারিমা বেগম লাকী

শ্বাশুড়ি মিসেস বারিরা ফজেলের উৎসাহে নতুন বিয়ে হয়ে আসা ডিগ্রী পাশ করা বৌমা তাহারিমা বেগম লাকী চাকরি খুঁজলেন না। শ্বাশুড়ি মা বললেন, সমাজে পিছিয়ে পরা অনেক নারী আছে তাদের নিয়ে কাজ করতে। তাহারিমা বেগম অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্য সেলাই। সেই সেলাই কম বেশি সকল নারীর জানা। ২০ হাজার টাকা পরিবার থেকে স্বামী এস এম বাকের স্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন।

এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছেন উদ্যোক্তা তাহারিমা বেগম

১২-১৩ জন নারীকে নিয়ে কাজ শুরু করলেন তাহারিমা বেগম। নতুন চিন্তা কাজে লাগালেন। প্রথাগত ভাবে যে কাঁথা তা বহরে ছোট হতো এবং ছিলো অনেক পুরু। এই দুটি প্রথাকে ভাংলেন। সেই সময় কঠিন চ্যালেঞ্জ নিলেন  পরিবারের বৌমা তরুণ উদ্যোক্তা তাহারিমা বেগম।

উদ্যোক্তা তাহারিমা বেগম এবং স্বামী এস এম বাকের কাঁথা কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন

খুব দ্রুত ফল পেলেন তাহারিমা। বিদেশের একটা ট্রেনিং প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত হলেন। সেই সময় কাঁথা সেলাইয়ের কর্মী ৩০ জনের জন্য রোলমডেল হলেন এমব্রয়ডারির একটি বিশ্বসাহিত্য কোর্স করে নিজের সৃজনশীল চিন্তায় ডিজাইন এবং কাঁথার সাইজ ভিন্ন হওয়ায় সব ঋতুতেই ব্যবহার করা যায়। এমন কাথার বিক্রি বাড়তে থাকলো হুহু করে। প্রথম ৪০ পিস কাঁথার একটি বাল্ক অর্ডার বলে দিলো আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়, সফলতা আসবেই। বাসায় বাসায় কাজ দিতে থাকলেন বিভিন্ন নারীদেরকে তাহারিমা বেগম। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরলো তাহারিমা বেগমের কাঁথার সুনাম। বিক্রি বাড়তে থাকলো যেকোন উৎসবে কিংবা সরকারি অনুষ্ঠানে। দাওয়াতে, ব্যাক্তিগত উপহার হিসেবে তাহারিমা বেগমের নূর নকশির কাঁথা বিক্রি হতে থাকলো এক এক করে। কর্মী সংখ্যা বাড়তেই থাকে। একদিকে যেমন কর্মী সংখ্যা বাড়তে থাকলো তেমনি বাড়তে থাকলো কাঁথার বিক্রি।

কর্মব্যস্ত কর্মীদের কাজ দেখছেন উদ্যোক্তা তাহারিমা

বিসিকের ট্রেনিং নিলেন তাহারিমা বেগম। তারপর বিসিকের মেলায় অংশগ্রহণ। চমকপ্রদ অংশ এই যে, সকাল ১০ টায় মেলা উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে ২ ঘণ্টার মধ্যে সব কাঁথা বিক্রি শেষ। মুগ্ধ, হতচকিত উদ্যোক্তা তাহারিমা। মনের মাঝে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় উদ্যোক্তার। উদ্যোক্তা দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ শুরু করন। অকল্পনীয় হারে কাথার বিক্রয় উদ্যোক্তাকে উদ্যোক্তার কর্মে হাজার কর্মীতে উপনীত করে।

কর্মীদের মধ্যমনি হয়ে তাদের কাজ দেখছেন

কোলকাতার মেলায় গেলেন উদ্যোক্তা। সেখানেও বাজিমাত। বাংলাদেশের নকশি কাঁথার বিক্রি রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলো। প্রথম মেলাতে ৯০ এর দশকে উদ্যোক্তা কোলকাতাতে অনেক দর্শনার্থীকে চিনিয়েছেন নকশি কাঁথা কি। কার্পেট কাঁথা, সুজনী, বকুল কাঁথা, ঝিলিক কাঁথা, লহরি আধুনিক, নয়নমনি, চেইন, স্যাথা, সোবলা। এছাড়াও নিউ লহরি নানান সময়ে নানান রঙ্গের নানান সুতোই কাজ উঠতে থাকে। তৈরি হতে থাকে নকশি কাঁথা। হাজার হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান এবং আনন্দ আর হাসি গানে সুঁই সুতার টান, উদ্যোক্তার জীবনে সফলতার গান।

উদ্যোক্তা তাহারিমা কাঁথার সেলাই দেখছেন

বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় আজ হোল সেল এবং ব্যাক্তিগত ক্রয়, বাল্ক সেলে হাজার হাজার পিস কাঁথা। ২২০০ থেকে-২৫০০ নারী আজ কাজ করছেন নূর নকশি জাগরণে। উদ্যোক্তা তাহারিমা বেগম এক আত্মপ্রত্যয়ী এক তরুণী এক বৌমা যাত্রা শুর করেছিলেন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে। উদ্যোক্তা হব বলে স্বপ্নে, প্রত্যয়ে যাত্রা শুরু করে আজ এক সফল এসএমই উদ্যোক্তা।

কর্মীরদের কাজ দেখছেন উদ্যোক্তা তাহারিমা বেগম

জেলা প্রশাসন আত্মপ্রত্যয়ী নারী পুরস্কার, ভারত থেকে উড়িষ্যা এমএসএমই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার-২০১৯ সম্মাননা, BWCCI- EBL প্রগ্রেসিভ অ্যাওয়ার্ড এবং বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তা এসএমই ফাউন্ডেশন-২০১৯ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন উদ্যোক্তা তাহারিমা বেগম। জয় করেছেন স্বপ্ন, হয়েছেন উদ্যোক্তা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এক নামে নিজেকে চিনিয়ে ঐতিহ্যকে ধারণ করে আজ সফল এসএমই উদ্যোক্তা তাহারিমা বেগম লাকী সফলভাবে তার ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here