আমার সব সময় বলতে ভালো লাগে আমি একজন তাঁতির ছেলে।আমি ছোট থেকেই পড়া লেখার পাশাপাশি সব সময় বাবার সাথে তাঁতের সকল কাজ গুলো হাত দিয়ে সহায়তা করেছি। আমার জীবনের সবচেয়ে হিরো মানুষটি হলো আমার বাবা, যে আমাকে সব সময় আগলে রেখেছেন। কথাই বলে- “তাঁতির কখনো রাগ হয়না” তেমনি আমি আমার বাবার কখনো রাগ দেখিনি তাকে দেখতাম সব সময় সুতার কাজ গুলো নিয়ে বাস্ত থাকতেন আর সুন্দর সুন্দর ডিজাইন ফুটিয়ে তুলতেন। আমার খুব ভালো লাগতো বাবার কাজ গুলো দেখে। বাবা সব সময় স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশে তার দেশীয় পণ্যের বিস্তার লাভ করার জন্য।
আমার জীবনের সফল হিরো মানুষ হলো আমার বাবা, তার হাত ধরেই আমি আমার দেশীয় পণ্যের কারখানা গড়ে তুলতে পেরেছি তার হাত ধরেই আমি আজকে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। সবাই পড়ালেখা শেষ করে চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত আর সেখানে আমি পড়ালেখা শেষ করে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বাবা সব সময় আমাকে বলতেন চাকুরী করার চেয়ে এমন কিছু করো যেখানে তুমি তোমার ক্রিয়েটিভিটি ও ডিজাইন বৈচিত্র্যময়তা তুলে ধরতে পারো, আর কাওকে চাকুরীও দিতে পারো। আজকে আমি বাবার দেয়া কথার সেই কাজটি করতে পেরেছি আর এখন আমার কারখানাতে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করে।

আমি সব সময় চেষ্টা করি নতুন নতুন ডিজাইন এর কাপড় নিয়ে কাজ করতে। আর মানের দিকে সব সময় চেষ্টা করি সর্বোচ্চ ভালো টা দেবার।আমাদের কাপড় গুলো বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি, আমার তৈরি কাপড় গুলো Rajshahi silk (রাজশাহী সিল্ক ) নামে পরিচিত সবার কাছে।
প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকেই আমার ঘুম ভাঙ্গত তাঁতের খটর-খটর শব্দে। আমাদের তৈরি কাপড় গুলো হলো বাহারী রঙ্গের সিল্ক থান (বলাকা থান) সিল্ক কটন, সিল্ক জয়শ্রী, সিল্ক শাড়ী,মসলিন শাড়ি, এন্ডি সিল্ক , সিল্ক ধুপিয়ান কাপড়। যা দেশে ও বিদেশে সব সময় সুনাম অর্জন করে এসেছে। এখানকার তৈরী কাপড় কিনতে বাইরের ব্যবসায়ীরাও আসতেন এখানে।

আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হলো সিল্ক সুতা গুলো চায়না থেকে আসে যা প্রতিনিয়ত মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে যে সুতার মূল্য পূর্বে ছিলো ২০০০টাকা কেজি আজকে তার মূল্য বেড়ে হয়েছে ৫০০০টাকা কেজি, যার কারনে কাপড়ের মূল্য অনেক বেশি হওয়াই বাজারে চাহিদা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তাই আমরা চেষ্টা করছি নতুন কিছু দেশি সুতা নিয়ে কাজ করতে বিভিন্ন ডিজাইনের যা বাজারে চাহিদা অনুযায়ি নতুন পণ্য নিয়ে আসার যাতে আমাদের পণ্য গুলো বিলুপ্তির পথে চলে না যায়।

আমি একজন নতুন উদ্যোক্তা আর সব উদ্যোক্তাই চায় সফল হতে। আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি আর মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। কিন্তু সেই স্বপ্ন কি শুধু দেখলেই হবে? স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে হলে লেগে পড়ে কাজ করতে হবে। কাজকে ভালবাসতে হবে। ব্যর্থ হলেও থেমে না থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করতে হবে। আমি পড়ালেখার জীবনে পরেছিলাম, “ওটা স্বপ্ন নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন তা–ই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।”– এ পি জে আব্দুল কালাম।
পরিশেষে, গোপাল কুমার দাস বলেন-“সফলতা একটা যাত্রা যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই”।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা