উদ্যোক্তা - কেশোয়ারা সুলতানা

কেশোয়ারা সুলতানা পড়াশোনা শেষ করার পরও তিন বছর বসে ছিলেন। চাকরি করা হয়নি ছোট বাচ্চার জন্য। জীবনসঙ্গী দেশের বাহিরে থাকেন। বাচ্চা বড় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কেশোয়ারার মনে হচ্ছিল কিছু একটা করা উচিত। পড়াশোনা কাজে লাগানো উচিত!

কেশোয়ারা সুলতানা সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ (এইচআরএম) করেছেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর বিয়ে হয়ে যায় এই উদ্যোক্তার। পরে শ্বশুড়বাড়ি থেকেই পড়াশোনা শেষ করেন।

তিনি উদ্যোক্তাবার্তা কে বলেন,  যেহেতু বিয়ে অনেক আগেই হয়েছিল বাচ্চাও আছে তো সব মিলিয়ে চাকরিটা করা হচ্ছিল না যদিও আমার স্বামী এবং পরিবারের লোক চাইতো আমি চাকরি করি। কিন্তু আমার মনে হতো বাচ্চা ছোট; চাকরি আমার জন্য না। বাচ্চা রেখে ঘরের বাইরে গিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ করতে হবে তার থেকে ব্যবসা ভাল। আমার জন্য ব্যবসাটাই ঠিক আছে আর অনলাইন ব্যবসা ঘরে বসেই করা যাবে। কষ্ট ও কম হবে বাচ্চার যত্ন এবং আয় দুটোই হবে। স্বাধীনভাবে চলতে পারব।

কেশোয়ারা সুলতানা সিলেট থেকে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৫ সালে ১০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরুটা করেন, মণিপুরী শাড়ী দিয়ে। যা এখন ১০লাখ টাকাতে এসে দাড়িয়েছে। ২-৩ বছর সিলেট থেকেই ব্যবসা চলমান ছিল এবং গত ১ বছর যাবৎ তিনি ঢাকাতে এসে ব্যবসাটা শুরু করেছেন। মিরপুর-১০ এ কড়িডটকম নামে একটা শো-রুমও আছে । অনলাইন পেজ দিয়েই যাত্রা শুরু কড়িডটকম এর।

কড়িডটকম নাম দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে বলেন, বিমল মিত্রের “কড়ি দিয়ে কিনলাম” উপন্যাস আমার অনেক পছন্দের। এইখান থেকেই কড়ি নামটা নেওয়া এবং অনলাইন যেহেতু তাই ডটকম টা নেওয়া।

ঢাকাতে আসার পর মণিপুরী শাড়ির সাথে আরো যোগ করেছেন টাঙ্গাইল, জামদানী শাড়ি, ব্লক, বাটিকের থ্রি – পিস সহ লেদার, জুটের বিভিন্ন পণ্য। অল্প অল্প সব কিছু নিয়েই কাজ করছেন বলে জানান এই উদ্যোক্তা।

তিনি আরো বলেন, ঢাকাতে আসার পর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিচ্ছি, বি’ইয়া, এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে এবং উই গ্রুপ থেকেও অনেক কিছু শিখছি। অনলাইনেও বেশ কিছু প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এই উদ্যোক্তা।

কেশোয়ারা সুলতানা বলেন, এখন আমি পাইকারি টাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। দেশের পাটের, লেদারের পণ্যকে কিভাবে বিদেশে রপ্তানি করা যায় এটা নিয়েই এখন কাজ করছি । পাশাপাশি মণিপুরী শাড়িও দেশের বাইরে রপ্তানি করার জন্য কাজ করছি।

২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই যে ব্যবসা, এই ব্যবসা আসলে একদিনে বা এক মুহূর্তে সফলতার মুখ দেখেনি। পার করে আসতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা। যখন অনেক অর্ডার একসাথে আসে বা পুঁজির দরকার হয় তখন পুঁজি টা অনেক বড় বাধার কারণ হয়ে থাকে। কারণ ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চায় না। আরো একটা বাধার কথা তিনি বলেন, এখানে কেউ কাওকে সাহায্য করতে চায়না। খুব কম মানুষের সাহায্য পেয়েছেন বলে জানান এই উদ্যেক্তা। তাদের মধ্যে নাসিমা আক্তার নিশা আপু, ঈমানা জ্যোতি আপু,আরো বেশ কয়েকজন।

নিজের একটা পরিচয় বানিয়েছেন কেশোয়ারা সুলতানা। কড়িডটকম মানেই কেশোয়ারা সুলতানা সবাই এক নামেই চেনে এই উদ্যোক্তাকে। অনলাইন কিংবা অফলাইন। দেশীয় পণ্য নিয়ে গুণগত মান বজায় রেখে কাজ করার জন্যই হয়তো সবাই এক নামে চেনে এই উদ্যোক্তাকে। কথা বলতে বলতে বলেন, আমি যখন আমার শো-রুমটা উদ্বোধন করি তখন আমি আমার জীবনের সব থেকে আনন্দঘন মুহূর্ত পার করি।

কড়িডটকম এ পাওয়া যায় মনিপুরী পণ্য, লেদার, জুট পণ্য এবং সব ধরণের দেশীয় পণ্য পাওয়া যায়। যার সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে কেশোয়ারা সুলতানা বলেন, যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের প্রথমত সৎ থাকতে হবে। ক্রেতাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। রেগে গিয়ে কোন খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। অনলাইন ব্যবসায় আপনি মুখে যেইটা বলবেন কাজেও সেইটা করবেন। যাতে শুনতে না হয় যে অনলাইন ব্যবসাতে পণ্য দিয়ে ঠকাচ্ছে। সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি সেটি হচ্ছে আমরা যারা উদ্যোক্তা আছি ব্যবসা শুরু করার পর প্রশিক্ষণ নিই। কিন্তু যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চান তাদের আমি বলবো আপনারা আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা করতে নামেন আশা করি সফল হবেন।

অনলাইন ব্যবসাটা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।শুধু মেয়েদের না ছেলেদের জন্যও চাকরির পিছনে না ছুটে চাকরি দাতা হবো এই সুযোগটা করে দিচ্ছে।

সহযোগিতা পেয়েছেন নিজের বাবা,  মা এবং শ্বশুড়বাড়ি  থেকে। অর্থনৈতিক এবং মানসিক ভাবে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন জীবনসঙ্গী হাফেজ মোহাম্মদ সিরাজুল হকের কাছ থেকে ।

অনলাইন ব্যবসা এমন একটা ব্যবসা যেটা আপনি যদি জেনে শুরু করেন তাহলে আপনাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। যার জন্য দরকার শুধু উদ্যোগ। নিজে উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করে দিলে কেউ আর বেকার থাকবে না। সবাই হবে সাবলম্বী যেমনটা হয়েছেন কেশোয়ারা সুলতানা। বিয়ের পরে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না করে দুজনকে চাকরি দিয়েছেন, হয়েছেন সফল নারী উদ্যোক্তা।

চাকরি প্রার্থী হবে চাকরি দাতা এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইয়ুথ এন্টারপ্রাইস এডভাইস এন্ড হেল্প সেন্টার (বি’ইয়া) আয়োজিত ঈদ পণ্য মেলা – ২০১৯ – এ, সম্ভাবনাময়ী তরুণ উদ্যোক্তার পুরস্কার অর্জন করেন কেশোয়ারা সুলতানা।

খাদিজা ইসলাম স্বপ্না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here