ক্রেতার হাতে খাঁটি পণ্য তুলে দিতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ রায়হান মাহমুদের

0
উদ্যোক্তা - রায়হান মাহমুদ

তেলের সাথে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের প্রথম পরিচয় একদম শিশুকালে, নানি-দাদির হাতে। তারা সকালের কোমল রোদে নাতি-নাতনিকে নিয়ে পা ছড়িয়ে বসেন আয়েশ করে। পাশেই থাকে তেল ভর্তি বাটি। যদিও এ-দৃশ্য দেখে আধুনিক মায়েরা তেলে-বেগুনে জ্বলতে থাকেন। এ-পদ্ধতিতে তাদের প্রবল আপত্তি। ফলাফল – অভিজ্ঞতা বনাম আধুনিকতার মুখোমুখি সংঘর্ষ। এ-যাত্রায় চাইলেই দাদিমার দল জিততে পারেন। শুধু ঠোঁট টিপে বললেই হবে, ‘বউমা, তোমার মতো টানা টানা চোখ, ওরকম টিকালো নাক; তেল দিয়ে একটু টেনে না দিলে হবে কী করে?’

ব্যস হয়ে গেল। এ-হলো কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো ব্যাপার। তেলবিষয়ক এই যুদ্ধে তেলই হলো ব্রহ্মাস্ত্র। কিন্তু ভেজালের ভিড়ে সেই নির্ভেজাল ব্রহ্মাস্ত্রটা খুঁজে পাওয়াটাই এখন বড় দায় হয়ে উঠেছে।

তাই এই ভেজালের রাজ্যে নির্ভেজাল পণ্য চোখের সামনে উৎপাদন করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেবেন, যাতে স্বস্তি মেলে ক্রেতাদের – এমন পরিকল্পনা থেকে রায়হান মাহমুদ উদ্যোগ নিলেন ভ্রাম্যমাণ সরিষার তেলের। রাজশাহীর মতিহার এলাকার বাবলুর রহমান এবং রেহেনা বেগম দম্পতির পুত্র রায়হান মাহমুদ গ্রহণ করেছেন এমন ভিন্নধর্মী উদ্যোগ।

মাসকাটা দীঘি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, অগ্রণী বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন রায়হান মাহমুদ। এরপর রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে স্নাতক শেষ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু করোনা মহামারী এসে সবকিছুই থমকে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সকল কাজ। রায়হান মাহমুদ এবং তার পরিবার করোনায় ক্ষতির সম্মুখীন হন। সকল কাজ বন্ধ হওয়ায় তারা ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং ভাবতে থাকেন নতুনভাবে কী করা যায়।

করোনা মহামারী আঘাত হানার অনেক আগে থেকেই তাদের পরিকল্পনা ছিলো নির্ভেজাল পণ্য উৎপাদন করবেন এবং সেটি সকলের চোখের সামনেই, যাতে স্বস্তি নিয়ে ক্রেতারা পণ্যটি গ্রহণ করে। কিন্তু এই কাজটি শুরু করতে পারছিলেন না বিভিন্ন কারণে।করোনাকালে কী কাজ শুরু করা যায় এমন ভাবনাতে যখন পুরো পরিবার চিন্তিত ছিলেন তখন তার বাবাকে জানান সরিষার তেল নিয়ে কাজ করার কথা। তবে সেটা ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে। বাবাও ছেলের সাথে একমত হলেন। গাড়ি এবং তেল ভাঙানোর মেশিন সেই সাথে সরিষা কেনার জন্য মূলধনের ব্যবস্থাও করে ফেললেন তারা। প্রায় ৪/৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হলো উদ্যোগটি শুরু করতে।

রায়হান ভ্রাম্যমান এই প্রতিষ্ঠানটির নাম দেন ‘আমায়রা অয়েল মিল’। ভদ্রার মোড়, অক্টোর মোড়, উপশহর নিউমার্কেটসহ নগরীর প্রধান সড়কে উদ্যোক্তা রায়হান এবং তার বাবা মোঃ বাবলুর রহমান তাদের ভ্রাম্যমাণ সরিষার তেলের প্রতিষ্ঠান আমায়রা অয়েল মিল নিয়ে যান এবং সেখানে সকলের সামনে তেল ভাঙিয়ে ক্রেতাদের হাতে খাঁটি সরিষার তেল তুলে দেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে তারা সরিষা সংগ্রহ করেন। সেগুলো সকলের সামনে ভাঙিয়ে সেখানেই তেল ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন।

দেশের প্রতিটি প্রান্তে আমায়রা অয়েল মিলের খাঁটি সরিষার তেল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা রায়হান মাহমুদ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতায় ‘আমায়রা অয়েল’ নামে একটি পেজ চালু করেছেন তিনি। যেখান থেকে অল্প সময়েই দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমায়রা অয়েল মিলের খাঁটি সরিষার তেল পৌঁছে দিচ্ছেন। বাবা ছেলের এমন ভিন্নধর্মী উদ্যোগের বয়স কয়েক মাস হলেও এরই মধ্যে তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে সুনাম কুড়াচ্ছেন এবং তাদের ব্যয় করা মূলধন দ্বিগুণে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে ধারণা করছেন।

বাঁধা তো চলার পথে আসবেই। তা যারা জয় করতে পারবেন তারাই জীবনে সফলতা স্পর্শে সক্ষম হবেন। এ-জন্য ধৈর্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা যারা ইতোমধ্যে উদ্যোক্তা রায়হানের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বা ভাবছেন করবেন, তারা ধৈর্য রেখে সামনে এগিয়ে যান। বাধা আসলে ভয় নয় বরং জয় করতে শিখুন। তবেই উদ্যোক্তা জীবনে সফলতা সম্ভব।

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক ,উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here