ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট হয়ে শূন্য হাতে কৃষি খামারের সূচনা করেছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম, নওগাঁর পোরশা উপজেলায় সীমান্তঘেঁষা নোনাহার গ্রামে। ইজারা নেওয়া ১১৭ বিঘা জমির ওপর মুজাহিদের বিশাল খামার ফ্রেশিফার্ম।
সেখানে রয়েছে ১৪ শতাংশ জায়গা জুড়ে খড়ের ছাউনি ও মাটির দেয়ালে তৈরি সুদৃশ্য কটেজ। যা ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। পড়ার পাশাপাশি বিপণনকর্মী হিসেবে চাকরিও নিয়েছিলেন একটি প্রতিষ্ঠানে। কাজের চাপে পড়াটা আর এগোয়নি। নিজের চেষ্টায় গুগল করে করে শিখেন গ্রাফিক ডিজাইন ও ওয়েব ডেভেলপিংয়ের কাজ। একসময় ফ্রিল্যান্সিং থেকে টাকা আসতে শুরু করে। স্বপ্ন বুনতে লাগলেন। শেষমেশ কৃষিপণ্য উৎপাদন, গরুর খামার করার ভাবনাটা মাথায় আসে।
পুঁজি সংগ্রহের জন্য ইন্টারনেটে ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের দ্বারস্থ হলেন। সেখানে নিজের ভাবনার কথা কিছু মানুষকে বললেন। অনেকের মনে ধরল সেই পরিকল্পনা। বাস্তবায়নে পুঁজি নিয়ে এগিয়ে এলেন কেউ কেউ। এভাবে ক্রাউডফান্ডিং বা গণ–অর্থায়নের মাধ্যমে পুঁজি জোগাড় হলো।
কৃষিপণ্য উৎপাদন ও ব্যবসা করতে বিনিয়োগকারী নিয়ে এসেছেন। নিজের বুদ্ধি-শ্রম আর অন্যের টাকা বিনিয়োগ করে মাত্র কয়েক বছরের মাথায় তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। গরুর খামার, ফলের বাগান, কুঁড়েঘর সব মিলিয়ে তাঁর কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প।
মুজাহিদ তাঁর মিশ্র ফলবাগান উদ্যোগটির নাম দিয়েছেন ‘প্রজেক্ট গ্রিনিফাই’। ২০২১ সালে এই প্রকল্পের জন্য ১৪ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আমের বাগান গড়ে তোলেন মুজাহিদ। আমের পাশাপাশি ড্রাগন, ফিলিপাইন ব্ল্যাক সুগার জাতের আখ,ভুট্টা ও কফিবাগানও আছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় গ্রীষ্মের আমের সিজনে এবং শীতকালে এই রিসোর্টে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়৷ অতি স্বল্প খরচে পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেকেই এমনকি ব্যবসায়িক কাজেও এই রিসোর্টে এসে থাকতে পারেন।
২০২২ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয় প্রজেক্ট বর্গা বা গরুর খামার প্রকল্প। প্রজেক্ট বর্গার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর টাকায় কেনা হয় গরু। পরে সেই গরু বেচে লাভের টাকা সবাই ভাগ করে নেন।
নওগাঁয় খামার করলেও বাড়ি তাঁর বগুড়ার শাজাহানপুরে, দুরুলিয়া গ্রামে। কৃষি নির্ভর এই বাংলাদেশে কৃষিকে আরো উন্নতিকরণের লক্ষ্যে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন বগুড়ার মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে বিনিয়োগকারী কিংবা পর্যটকেরা নোনাহার গ্রামে আসেন। তাঁদের থাকা – খাওয়ার জন্য ফ্রেশি ফার্ম প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গ্রামেই আটটি মাটির ঘর তৈরি করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুঁড়েঘর ম্যাঙ্গো রিসোর্ট’। বাঁশের বেড়ার ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে কুঁড়েঘরগুলোর দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। আর খড় ও বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়েছে ছাউনি। ৩০০/৬০০/১০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে দর্শনার্থীরা এখানে থাকতে পারেন।
নওগাঁ কুঁড়েঘর ম্যাঙ্গো রিসোর্ট তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এক উদ্যোক্তা। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছে এই রিসোর্টে৷
বাগান এবং রিসোর্ট ছাড়াও প্রায় ১০ বিঘা জায়গা জুড়ে রয়েছে নওগাঁর সর্ববৃহৎ গরুর খামার, যেখানে প্রায় ৩৮০টির ও বেশি গরু রয়েছে৷ জৈব সার তৈরির মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলে আমসহ বিভিন্ন ফসল চাষে রাসায়নিকের ব্যবহার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করছেন উদ্যোক্তা জাহিদ৷ শুধু তাই নয়, আফ্রিকার জমিকে কাজে লাগিয়ে দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে বাংলার কৃষিকে আরো উন্নত পর্যায়ে নেবার স্বপ্ন দেখছেন এই উদ্যোক্তা।
এই সাফল্যের জন্য ‘আইপিডিসি উদ্যোক্তা সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে নবীন উদ্যোক্তা স্মারক-২০২১-এ ভূষিত হয়েছেন মুজাহিদ।
যুগোপযোগী এবং সুদূরপ্রসারী কাজের মাধ্যমে কৃষি খাতকে আরো উন্নতকরার লক্ষ্যে আগামীতে নতুনদের নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে এই উদ্যোক্তার৷ শিক্ষিত তরুণদের মাধ্যমেই কৃষিকে আরো উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা