ক্যামেরার ফ্রেমে ৫০০০ কাপল, উদ্যোগের ১ যুগ- তমাল দাস

0
উদ্যোক্তা তমাল দাস

রাজশাহীর তমাল দাস। ১১ বছর আগে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন ওয়েডিং ফটোগ্রাফি। সেময় নিজের ক্যামেরা ছিল না। অন্যের ক্যামেরা ধার নিয়ে ছবি তুলতেন। আজ তমালের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০টা সেটআপ। তার ‘স্বপ্নের ফ্রেম’-এ ৩০ জন সহযোদ্ধার কর্মসংস্থানও হয়েছে।

গত ১১ বছরে ৫ হাজার ইভেন্ট কাভার করেছেন তমাল এবং তার দল। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতেও স্বপ্নের ফ্রেমের কাজের কদর বেশ ভালো। অসংখ্যবার তারা সেসব এলাকায় ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করেছেন। বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকটি জেলা বাদ দিয়ে বাকিসবগুলোতে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে ‘স্বপ্নের ফ্রেম’ টিমের।

২০১১ সালে স্বপ্নের ফ্রেম-এর ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নগরীর মালোপাড়া এলাকায় প্রথম অফিস নিয়েছিলেন তমাল। সেসময় ওয়েডিং ফটোগ্রাফির চাহিদা ছিলো খুবই কম। যে কারণে তমালের প্রতিষ্ঠানের প্রথম জায়গাটি মাত্র ৬/৭ মাস রান করে। এরপর ২০১৫ সালে নগরীর আলুপট্টিতে ২ হাজার স্কয়ার ফিটের অফিস নেন উদ্যমী এই তরুণ। খুব ভালোভাবে কয়েকবছর পার করতে না করতেই করোনার ভয়াল আঘাত। লকডাউনে কাজের পরিমাণ কমতে-কমতে একসময় সে অফিসও ছেড়ে দিতে হলো। কিন্তু যে অন্যের স্বপ্ন ফ্রেমে বন্দি করেন তার স্বপ্নকে দমিয়ে রাখা কি সহজ? লকডাউন শেষ হতে না হতেই আবারও নতুন অফিস নিলেন অলোকাড় মোড়ে। এ প্রতিষ্ঠান ঘিরে ইতোমধ্যে অনেক ছেলেমেয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উদ্যোক্তা বার্তাকে তমাল বলেন, “আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। তৃতীয় বর্ষেই আমি কাজ শুরু করি। টুকটাক কাজ করতে করতে ঢাকা থেকে চিত্রনায়ক আরেফিন শুভ ভাইয়ের বিল বোর্ডের ছবি উঠানোর কাজে ডাক পাই এবং খুব খুশিতে চলে যাই সেখানে। খুব ভালোভাবে কাজ শেষ করে ফিরে আসি এবং ক্লাস মিস দেওয়ার কারণে আমার শিক্ষক আমাকে ডেকে পাঠান। স্বাভাবিকভাবে আমাকে রাগান্বিত ভাবে জিজ্ঞেস করেন কেন ক্লাস মিস দিয়েছি। সেসময় একজন বলেন, ‘তমাল পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফিও করে। খুব ভালো একটা কাজ করতে ঢাকায় গিয়েছিল। ওর কাজ বিলবোর্ডে উঠবে।’ শিক্ষক খুব খুশি হয়ে বলেছিলেন, ‘আমার ফেসবুকে অ্যাড হয়ে যাও। তোমার কাজ ফলো করবো, ফটোগ্রাফি ভালো করলে মার্কস ভালো পাবে নতুবা পাবে না।’ মজার ছলে সেদিন শিক্ষক এসব কথা বললেও আরও একটি কথা বলেছিলেন, ‘তমাল স্ট্যাটিস্টিক্স-এ পড়ছো মানে এই না তোমার এই বিষয় রিলেটেড কাজই করতে হবে। তুমি যেটা ভালোবাসো সেটা নিয়ে এগোও।’ স্যারের কথায় ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। তখন থেকে আরও ভালোভাবে কাজে মন দিয়েছি আমি।”

শুধু ফটোগ্রাফি নয়, বেহালা বাজাতেও বেশ পটু তমাল। দাদু এবং বাবার থেকে বেহালা বাজানো শিখে পরবর্তীতে বেহালাবাদক হিসেবে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন তিনি। স্নাতক অধ্যয়নরত অবস্থায় বাবা মারা যায় তমালের। বাবার মৃত্যুর একবছর না পেরোতেই বড়দা’র অ্যাকসিডেন্ট। পরিবারটি সেসময় ভীষণ ভেঙে পড়ে। সকলের দায়িত্ব কাঁধে এলে তার কর্মক্ষেত্রে আরও দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে উঠেন তমাল।

তমালের কাজ দেখে একের পর এক দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্লায়েন্টরা বুকিং দিতে থাকেন। এভাবে ১১ বছরে পাঁচ হাজার যুগলের স্বপ্নকে ফ্রেমে বন্দি করেছেন তমাল। ফটোগ্রাফির জন্য স্থান নির্বাচন এবং আলো নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় সচেতন তিনি। নতুন প্রোগ্রামে নতুন স্থান নির্বাচন, জেলার বাইরে ইভেন্টে গেলে ইউটিউব বা গুগলে সার্চ করে ভালো জায়গার তথ্য সংগ্রহসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে পুরো টিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বারবার বাধা এলেও তমাল একটি বারের জন্যেও দুর্বল হয়ে পড়েননি, বরং বরাবরই তিনি সাহসিকতার ছাপ রেখেছেন তার কাজে।

রাজশাহী যেহেতু শিক্ষা নগরী, তাই তার প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্ট দের কাজ দেওয়ার চেষ্টা করেন তমাল যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি তারা হাত খরচটা চালিয়ে নিতে পারেন। তারা বয়সে ছোট হলেও তমাল তাদের মতামতও গুরুত্বের সাথে দেখেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে তমাল বলেন, “তারা আমার বয়সে ছোট হলেও অনেক সময় তাদের থেকেও নতুন অনেক কিছু শিখতে পারি। আবার আমার থেকেও তারা শিখছেন। সকলে মিলে স্বপ্নের ফ্রেম-কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। শুধু ৩০ জন নয়, আরও অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান সিল্কসিটির তরুণ প্রজন্মের ফটোগ্রাফারদের মধ্যে অতিপরিচিত এবং সফল মুখ তমাল দাস। ‘স্বপ্নের ফ্রেম’-কে শুধু রাজশাহীর অলিগলি নয়, সারা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিতে চান তমাল।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here