আয়শা আক্তার, বর্তমানে মিরপুরে থাকেন। তিনি একজন নতুন উদ্যোক্তা। মানুষ যখন তাকে ধীরে ধীরে তার কাজের মাধ্যমে চিনছে ঠিক তখনই করোনা ভাইরাস এসে অন্য সবার মতো তাকেও খুব সমস্যায় ফেলে দেয়। কিন্তু তিনি দমে যাননি। অল্প পরিসরে চালিয়ে গেছেন তার উদ্যোগ।
বেকিং প্রডাক্টের উপকরণ বেশিরভাগই আসে দেশের বাইরে থেকে তাই সব কিছু কিনতে হচ্ছে চড়া মূল্যে কিন্তু আমরা চাইলেই আমাদের প্রডাক্টের দাম বাড়াতে পারিনা। এই সময় ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফুড হোম ডেলিভারি সার্ভিসও দিয়েছি সাধ্যমতো, জানালেন উদ্যোক্তা আয়শা।
তিনি জানান, আমি সবসময় আমার ব্যক্তিগত ডেলিভারি ম্যান দিয়ে আমার ফুড বা কেক ডেলিভারি করে থাকি। তাই এক্ষেত্রে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায়। কেননা তিনি শুধু আমার প্রোডাক্ট ডেলিভারি করছেন খুবই নিরাপত্তার সাথে,স্বাস্থ্যবিধি মেনে। পকেটে থাকছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরে ডেলিভারি করে থাকেন। সব সময়েই সব ধরনের হাইজিন মেন্টেইন করে কাজ করি। একটা পরিচ্ছন্ন সাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহকদের কাছে পৌঁছে দেয়াই আমাদের সব সময়কার লক্ষ্য থাকে। করোনা ভাইরাসের জন্য যেহেতু হাইজিনের উপর খুব জোর দেয়া হচ্ছে তাই আমরা বাইরে থেকে প্রডাক্ট আনার পর খুব সাবধানতা অবলম্বন করি। প্রডাক্ট যথা সম্ভব সেনিটাইজ করে ব্যবহার করি। প্রডাক্ট প্যাকেজিং এ রাখছি বিশেষ দৃষ্টি।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/08/IMG-20200807-WA0007.jpg)
উদ্যোক্তা আয়শা আক্তারের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। ছোট্ট একটি পরিবার। তাদের উৎসাহ থেকেই বিশেষ করে ভাইয়ের কথায় বড় স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা আর সাহস। ‘ভাষানটেক উচ্চ বিদ্যালয়’ স্কুল থেকে ২০১৪ সালের এসএসসি, ‘বাংলাদেশ নেভি কলেজ’ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষা এবং বর্তমানে ‘তেজগাঁও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়’ গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি।
লেখাপড়া করতে একদমই ভালো লাগতো না তার।সবসময় অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করতো, যেটাতে আনন্দ পায় এমন কিছু। চাকরির প্রতিও কোন ইচ্ছে ছিলনা। সৌখিন কাজগুলো করতে তার ভালো লাগতো খুব। ক্লাস নাইনে যখন ব্যবসায় উদ্যোগ বইটি পড়েন সেখান থেকে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে কল্পনা করা শুরু। তার অন্যতম একটি শখ হচ্ছে রান্না করা। পুতুল খেলার বয়সে ঘাস লতাপাতা দিয়ে রান্না করতো তিনি। ছোটবেলায় রান্নার অনুষ্ঠান গুলোর রাঁধুনির জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতেন সে। তাই ছোট থেকে রান্নার উপকরণ গুলোর সাথে খুব পরিচয় তার। পত্রিকাগুলো থেকে রেসিপি গুলো সংগ্রহ করে কেটে রাখতেন। তবে শুধু রান্না নিয়ে প্ল্যান ছিল তা নয়, একেকবার একেক উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছে করত তবে কিছু করার স্বপ্ন ছিল সব সময়ই।
কখনো ফ্যাশন ডিজাইনার কখনো বিউটি এক্সপার্ট। হঠাৎ করে ‘বেকিং’ এর নেশা তাকে আঁকড়ে ধরে। যখন-তখন কেক বানানো বা কিছু বেক করার ইচ্ছে জাগে।পরিবারের মানুষজন খেয়ে খুশি হতো অনেক। বিশেষ করে তার বাবা। খুশি হয়ে ১০ টাকা বকশিশ দিত।বিষয়গুলো খুবই উৎসাহ দিত তাকে।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/08/IMG-20200807-WA0004.jpg)
২০১৬ সালে ভাইয়ের জন্মদিনে প্রথম করা ডেকোরেশন কেক। একদমই আনাড়ি হাত কিন্তু বাসায় সাড়া ফেলে ব্যপক। নেশা পেয়ে বসলো মানুষ কে খুশি করানোর। তখন থেকে কেক, বেকিং, কেক ডেকোরেশন নিয়ে পড়াশোনা। প্রথম দিকে নষ্ট হয়েছে কিন্তু চেষ্টা চালিয়েছে এভাবেই একদিন কেককে বুঝে যায়। কোথায় ভুল হচ্ছে সেটা জানতে হোম বেকারদের কাছ থেকে কিছু ট্রেনিং নেন।
প্রথমে পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং আস্তে আস্তে বাইরে যেতে শুরু করে তার তৈরী কেক। তখন থেকে এটা নিয়ে ভবিষ্যতে কিছু করার স্বপ্ন দেখা শুরু। তারপর একদিন হুট করেই ভাবী কে বলে একটা পেইজ ওপেন করা ‘Bakeology World'(বেকোলজি ওয়ার্ল্ড) বায়োলজি নামটি থেকেই বেকোলজি নাম এর সৃষ্টি। আলপনা আঁকতে খুব পটু হওয়ায় কেকে বেশ বৈচিত্র্য থাকে। ফুটে ওঠে ফুল, লতাপাতা, পুতুল, বিভিন্ন আদলসহ প্রাকৃতিক দৃশ্য। বর্তমানে লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি পেইজটি পরিচালনা করছেন এবং কাস্টমাইজড কেকের অর্ডার পাচ্ছেন।খুব অল্প সময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে খুব পজিটিভ রেসপন্স পাচ্ছেন।
ছোট ছোট রান্নার প্রোগ্রাম গুলোতে, “সেরা রাঁধুনি” রিয়েলিটি শো তে অংশগ্রহণ করার দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হয়। রান্না করে উপহার পাওয়ার সৌভাগ্যও হয়েছে।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/08/IMG-20200807-WA0005.jpg)
উদ্যোক্তা আয়শা আক্তার বলেন, ” এ সেক্টরে কাজ করা আমাদের দেশে একটু কঠিন। কেননা সব কিছুই বাইরের দেশ থেকে আসে, সেক্ষেত্রে দামটা একটু বেশি।সব সময় কাজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো হাতের নাগালে পাওয়া মুশকিল। তাই কেক এর প্রাইসিং টাও বেশি পড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে প্রথম দিকে একটু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। এখন আলহামদুলিল্লাহ গ্রাহকরা খুবই আপগ্রেট। তারা কাস্টমাইজড কেক সম্পর্কে জানে হোমমেড কেকের উপর ভরসা করছেন, আমি এ বিষয় গুলো নিয়ে আশা বাদি এবং কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, “একটা বিষয় আমাকে খুবই ভাবায় কষ্ট দেয় মানুষ কিভাবে খাবারের মধ্যে ভেজাল দেয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করে যেটা আমি নিজে খেতে দ্বিধাবোধ করব সেটা আমি কিভাবে মানুষকে খাওয়াচ্ছি।খাবারের জন্য এতকিছু, এত কষ্ট আর সে খাবারটাই ভেজাল। এদিক থেকে সব সময় আমরা সৎ থাকতে চাই। যতোটুকু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার গুলো তৈরি করা যায় সেটাই চেষ্টা থাকবে আমার”।
বিপ্লব আহসান