কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা পাচ্ছেন ১৩ জন

0

প্রথমবারের মতো ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি/AIP)’ সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা হওয়ার পর তার আলোকে প্রথমবারের মতো ২০২০ সালের জন্য ১৩ জন এআইপি’র নাম ঘোষণা করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এআইপি সম্মাননা প্রাপ্তরা সিআইপিদের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি। সেসময় কৃষি সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের চিরবঞ্চিত, অবহেলিত ও চিরশোষিত কৃষকের উন্নয়নে স্বাধীনতার পরপরই যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কৃষি গবেষণায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে বঙ্গবন্ধু সরকারি চাকরিতে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করে কৃষির আধুনিকায়নে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাছাড়া, কৃষি এবং কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার তহবিল’ গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি ও কৃষকবান্ধব। তাই তিনি কৃষির সাফল্যের অন্যতম কারিগর কৃষক, কৃষি বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী, খামারিসহ কৃষির সাথে সম্পৃক্তদেরকে প্রতি বছর সম্মাননা জানাতে ও তাদেরকে উৎসাহিত করতে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন: ‘আগামী দিনের কৃষিকে আমরা বাণিজ্যিক ও সম্মানজনক পেশা হিসেবে উন্নীত করতে চাই। কৃষিতে শিক্ষিত, মেধাবী ও সৃজনশীল তরুণদের আকৃষ্ট করতে চাই। সেজন্য কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী, বাণিজ্যিক কৃষিখামার স্থাপনকারী, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও কৃষি সংগঠকদের উৎসাহ ও সম্মান জানাতে এআইপি সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে টেকসই কৃষির উন্নয়নে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।”

‘এআইপি সম্মাননা প্রবর্তন কৃষিখাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। কৃষকদের সম্মান জানানোর নতুন উদাহরণ।

ড. রাজ্জাক জানান, এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর মোট ৫টি বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫জনকে এআইপি সম্মাননা প্রদান করা হবে। এর মধ্যে কৃষি উদ্ভাবন বিভাগে (জাত/প্রযুক্তি) সর্বোচ্চ ১০ জন, কৃষি উৎপাদন/বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বিভাগে সর্বোচ্চ ১৫ জন, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন বিভাগে সর্বোচ্চ ১০ জন, স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি সংগঠন বিভাগে সর্বোচ্চ ৫ জন এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বিভাগে সর্বোচ্চ ৫ জন।

এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে এক বছর। এআইপিগণ সিআইপিদের (CIP) মতো  সুযোগসুবিধা পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; ব্যবসা/দাপ্তরিক কাজে বিদেশে ভ্রমণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে উদ্দেশ্য করে Letter of Introduction; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার এবং বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা।

২০২০ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ১৩জন:

কৃষি উদ্ভাবন বিভাগে (জাত/প্রযুক্তি)বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান (বাউধান-৩ এর জাত উদ্ভাবন), এ আর মালিক সিডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউস সোপান মালিক (২টি বীজ আলুসহ মোট ১০টি সবজির জাত উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণ), ফিউচার অর্গানিক ফার্মের সৈয়দ আব্দুল মতিন (মেহগনি ফলের বীজ থেকে তেল তৈরি যা জৈব বালাইনাশক) আলীম ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের আলীমুছ ছাদাত চৌধুরী (আলীম পাওয়ার ট্রিলার উদ্ভাবন)

কৃষি উৎপাদন/বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বিভাগে: মো. সেলিম রেজা, দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম এন্ড নার্সারি, ডাল সড়ক, নাটোর সদর, নাটোর। মো.মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী, চামেশ্বরী, চৌধুরীহাট, ঠাকুরগাঁও। মো. মাহফুজুর রহমান, এশা ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার ফার্ম, ঝালকাঠি সদর, ঝালকাঠি। মো.বদরুল হায়দার বেপারী, প্রোপাইটার, জাগো কেঁচো সার উৎপাদন খামার, চৌঠাইমহল, নাজিরপুর, পিরোজপুর। মো. শাহবাজ হোসেন খান, নুর জাহান গার্ডেন, শৌলা কালাইয়া, বাউফল, পটুয়াখালী। মো. সামছুদ্দিন (কালু), বিছমিল্লাহ মৎস বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও খামার, নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন সংলগ্ন, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।

স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি সংগঠন বিভাগে: জাহাঙ্গীর আলম শাহ, শাহ্ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘর কালীগ্রাম, মান্দা, নওগাঁ।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বিভাগে নির্বাচিত দুই জন: মোছা. নুরুন্নাহার বেগম, নুরুন্নাহার কৃষি খামার, ঈশ্বরদী, পাবনা এবং মো. শাহজাহান আলী বাদশা, মা-মণি কৃষি খামার, ঈশ্বরদী, পাবনা।

আগামী ২৭ জুলাই সকাল ১০.০০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২০ সালের এআইপি পুরস্কার প্রদান করা হবে। ২০২১ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান আছে।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here