২০০৫ সাল, সম্বল মাত্র ২০০০০ টাকা। ৫ জন কর্মী আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চরাইকোল গ্রামের সফল উদ্যোক্তা হালিমা খাতুন মুক্তা শুরু করলেন হস্ত শিল্পের কাজ। স্বামী জনাব মকসেদ আলী সহকারী প্রধান শিক্ষক। হালিমা খাতুন মুক্তার উদ্যোক্তা হবার স্পৃহা জন্ম নিয়েছিলো তার স্বামীর শারিরিক অসুস্থতার সময়, পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে। দৃঢ় মানসিকতাই ছিল নিজেকে একজন উপার্জক হিসেবে গড়ে তোলার প্রাণশক্তি এবং তার বিরতিহীন দশ বছরের কঠোর পরিশ্রম আজ ‘মৃদুলা হস্তশিল্প’ নামে সকলের কাছে পরিচিত।
শাড়ি, বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা, সালোয়ার কামিজ সহ উৎসবে মানুষ নানান ঝলমলে শাড়ি পড়ে আর এই ঝলমলে শাড়িতেই যেন নিজের ঝলমলে ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন হালিমা খাতুন মুক্তা। মুক্তা স্বামীর অসুস্থতার সময় শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষক হতে যে পরিমান টাকার প্রয়োজন, তার পরিবর্তে নিজে পরিশ্রম করে সফল উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নটিই যেনো ডাকছিলো হালিম খাতুন মুক্তাকে।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2018/10/f.jpg)
উদ্যোক্তা হবার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার মধ্যে সবসময়ই আত্মনির্ভরশীল হবার একটি প্রবল স্পৃহা কাজ করতো। আমার স্বামী যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন পরিবারকে আর্থিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে আমার উদ্যোক্তা হবার জগতে পদার্পণ ঘটে। কিন্তু তা চাকরি করে নয়, নিজের জ্ঞান ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে একটি উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। তার পাশাপাশি নিজের দেশের, সমাজের বেকারদের কর্মসংস্থান করবার একটা অগাধ সাহস জন্মেছিলো”।
প্রথম দিকে নিজে পোশাকের বড় বড় বিপণী বিতানগুলোতে গিয়েছেন, নিজের উৎপাদিত পণ্যকে চিনিয়েছেন, বিক্রি করে দেখেছেন সফলতার আঙিনায় নিজের পদছাপ। একটি দিন দুটি দিন করে নয়, নয় একটি মাস দুটি মাস কিংবা একটি-দুটি বছর। উদ্যোক্তা হালিমা খাতুন মুক্তা ১০টি বছরে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘মৃদুলা হস্তশিল্প’ কে আজ চরাইকোল গ্রামের মোকাম বা দোকান করবার পাইকারি পয়েন্ট হিসেবে চিনাতে সক্ষম হয়েছেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2018/10/e.jpg)
প্রায় নিয়মিত ৫০০ জনের মত কর্মী মৃদুলা হস্তশিল্পে কর্মরত আছেন এবং তারা খুঁজে পেয়েছেন জীবনে তাদের নিজস্ব স্বচ্ছলতার পথ। তারা সকলে কাজ করছেন একসাথে; ফুল তুলে, মেশিনে আওয়াজ তুলে, ছাপ মেরে, নকশা এঁকে, সুতোর নানান বুননে নানান রঙে তারা আঁকেন তাদের স্বচ্ছলতা ও স্বাবলম্বীতার গল্প প্রতি মুহুর্তে।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2018/10/b.jpg)
৩০ লক্ষ টাকার ব্যবসা মুল্যমান আজ ৪০০ জন কর্মী কাজ করছেন নিয়মিত। আজ বিয়ের শাড়ি, বিয়ের সম্পূর্ণ পোশাক, প্রচলিত লেহেঙ্গা শাড়ি, ফেন্সি শাড়ি, পার্টি শাড়ি প্রতি মাসে তৈরি হয় ১০০ পিস, ২৫ পিস নানান ভাবে তৈরি হচ্ছে অহরহ। অর্ডার যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভারত থেকে কাঁচামাল ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানী করে তৈরি করা হয় ও অর্ডার নেওয়া হয় এবং অর্ডার মোতাবেক সরবরাহ করা হয়। আজ ৪০০ থেকে ৫০০ জন পুরুষ ও মহিলা কর্মী তথা কারিগর দিয়ে হালিমা খাতুনের নিজস্ব ডিজাইনে কারুকার্য খচিত মূল্যবান পোশাক কুষ্টিয়ার স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে, যশোর, ফরিদপুর ছাড়িয়ে স্থান করে নিয়েছে ঢাকার মিরপুরের বেনারশি পল্লীতেও। হালিমার বাজার আজ ঢাকার নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, বঙ্গবাজার, চট্টগ্রামের প্লাজা শপিংমল সহ সারা দেশ।
হালিমা খাতুন মুক্তা আগামী দিনের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনার দেশ। চাকরীর পেছনে না ছুটে যদি আমরা কোন উদ্যোগ নিয়ে, তা বাস্তবায়নের কাজটি শুরু করতে পারি, তাহলে সফলতা আসবেই এবং আমরা নিজেদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান করার মাধ্যমে বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করতে পারবো বলে আশা করি।”
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2018/10/d.jpg)
আত্মপ্রত্যয়ী, উদ্যমী হালিমা খাতুন মুক্তা, আজ মুক্তার আলো ছড়িয়েছেন চরাইকোল গ্রামে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। একজন সফল উদ্যোক্তা পারেন আত্মপরিচয়ে পরিচয় করাতে নিজ গ্রাম, নিজ দেশকে। চরাইকোল গ্রাম আজ পরিচিত আলোকিত সফল নারী উদ্যোক্তা হালিমা খাতুন মুক্তার সফলতার পরিচয়ে।
মুক্তা উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, নিজের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি কর্মসংস্থান করার চেষ্টা করবেন এবং শাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করবেন।