‘কায়াকিং’ দিয়ে বন্ধুদের উদ্যোক্তা হবার গল্প

0

বর্ষার বিকেলের মৃদু ঝিরিঝিরি বাতাসে দ্বীপের রাণী ভোলার ভেলুমিয়া লেকের স্বচ্ছ জলে আপনি নিজেই চালিয়ে আসতে পারেন এই ছোট্ট একটি কায়াকিং নৌকা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির এই লেকে আপনার প্রিয়জনকে সাথে করে ইচ্ছেমতো কায়াকিং নৌকা চালানোটা দারুণ উপভোগ করেত পারেন।

জ্বি পাঠক আজ আমরা এমন পাঁচ বন্ধুর উদ্যোক্তা হবার গল্প জানাবো, যাদের উদ্যোগে কালচারাল ট্যুরিজম হিসেবে ভোলা জেলার ব্র্যান্ড বুকে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাদের উদ্যোগের নাম ‘কায়াকিং’ এই উদ্যোগের সবচেয়ে মূল ভূমিকা পালন করেছেন উদ্যোক্তা মো. এমদাদ হোসেন।

উদ্যোক্তা মো. এমদাদ হোসেন

‘ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট’-এর অন্যান্য উদ্যোক্তারা হলেন সাইফুদ্দিন শামীম, সাইদুল ইসলাম, সুমন মুহাম্মদ এবং এম শরীফ আহমেদ।

ভোলা সদর হয়ে ভেলুমিয়া বাজার তার পাশেই ভেলুমিয়া লেক। এখানেই গড়ে উঠেছে ‘ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট’ নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র। যা কিনা ভোলাসহ সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চলের প্রথম এবং একমাত্র কায়াকিং পয়েন্ট।

উদ্যোক্তা সাইফুদ্দিন শামীম, সাইদুল ইসলাম, সুমন মুহাম্মদ এবং এম শরীফ আহমেদ

”উদ্যোক্তা হওয়া চাকরি করার থেকেও কঠিন। চাকরি করার জন্য যেকোন একটি বিষয়ে দক্ষ হলেই হয় কিন্তু উদ্যোক্তা হতে একটি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের কাজের দক্ষতা থাকতে হয় বা অর্জন করতে হয়, কথাগুলো বলছিলেন, ‘ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট’-এর উদ্যোক্তা এমদাদ। ”

উদ্যোক্তা এমদাদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি শেষ করার পরে একটি চাইনিজ কোম্পানিতে জুনিয়র মার্চেন্ডাইজার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন।

সেসময় এমদাদের মনে সবসময় উদ্যোক্তা হওয়ার একটা প্রবল ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলেন চাকরি জীবনের মূলধন জমিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন।

সকাল নয়টা-পাঁচটা অফিস করার পর উদ্যোক্তার মনে হলো তার দ্বারা এভাবে নিয়ম মেনে চাকরি করা সম্ভব নয়। প্রায় এক বছরের মাথায় চাকরিটা ছেড়ে দেন। উদ্যোক্তা মনের ভাবনার অন্তরালে এমদাদ খুঁজতে থাকেন কি করা যায়?

কি করলে উদ্যোক্তা মনের অস্থিরতা কে শান্ত মনে ফিরিয়ে এনে কিছু একটা করা যায়। ভাবতে ভাবতে কিছু খুঁজে না পেয়ে উদ্যোক্তা আবার একটি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরি করার ছয় মাসের মধ্যে এমদাদ তার দ্বিতীয় চাকরিটা থেকেও ইস্তফা দেন।

মো. এমদাদ হোসেন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ”নতুন কিছু করার জন্য আবার আইডিয়া খোজ করতে থাকি। এর মধ্যে ফেসবুকে বিভিন্ন উদ্যোক্তা গ্রুপের মাধ্যমে বিডার ‘উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প’ প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারি এবং সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভোলা জেলার সম্ভাবনাময় খাত পর্যটন শিল্প নিয়ে কাজ শুরু করি। কায়াকিং পয়েন্ট শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই স্থানীয়ভাবে অনেক সাড়া পাই এবং সফলতা লাভ করি।’

তিনি বলেন, কায়াক শব্দটা এ দেশে অতটা প্রচলিত নয়। ফাইবার, কাঠ ও পাটের তন্তু দিয়ে তৈরি ১০ ফুট লম্বা সরু নৌকাকে কায়াক বলা হয়। চালাতে হয় বৈঠা দিয়ে। কানাডায় প্রথম শুরু হয় কায়াক চালনা। বিদেশে সমুদ্র, নদীতে কায়াক চালনার প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। তবে এ দেশে বিনোদনের জন্যই কায়াকিং চালু হয়েছে।

ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৩জন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পরোক্ষভাবে পর্যটকদের কাছে বেচাকেনার মাধ্যমে পয়েন্ট এর আশেপাশের দোকানদারদের আয় বেড়েছে, পর্যটকদের যাতায়াত এর মাধ্যমে গাড়ি চালক, অটো রিকশার চালকদের আয় বেড়েছে, নতুন নতুন পর্যটক আসার মাধ্যমে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে।

এরই মধ্যে “ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট” কালচারাল ট্যুরিজম হিসেবে ভোলা জেলার পর্যটন ব্রান্ড বুকে লিপিবদ্ধ হয়েছে। যা কিনা ভোলাবাসীর জন্য অনেক গৌরব ও মর্যাদার সম্মান বয়ে এনেছে। প্রায় ৭০ একর জায়গা জুড়ে এই “ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট” লেক এর অবস্থান। প্রাথমিক ভাবে উদ্যোক্তা এমদাদ প্রায় ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। পরে ধাপে ধাপে এই বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ লাখ টাকা।

“ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট” প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। এই উদ্যোক্তাদের দেশে আরো দুটি কায়াকিং পয়েন্ট আছে যার মধ্যে সাভার কায়াকিং পয়েন্ট,নীলাদ্রি কায়াকিং পয়েন্ট সুনামগঞ্জ। খুব শীঘ্রই ঢাকার ধানমন্ডি লেকে এই তারা আরও একটি নতুন কায়াকিং পয়েন্ট উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। ”

উদ্যোক্তা এমদাদ “ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট” সম্পর্কে বলেন, ‘মাত্র তিনটি কায়াক বোটের মাধ্যমে ভোলা কায়াকিং পয়েন্টের যাত্রা শুরু হলেও পরে আরও বোট বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য একটি লাভ পয়েন্ট করা হয়েছে।’

কায়াকিং নৌকার উদ্যোক্তা হবার পেছনের কারণ কী জানতে চাইলে উদ্যোক্তা এমদাদ জানালেন, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করার জন্য চায়না বাংলা বিজনেস ক্লাব থেকে ট্রেনিং গ্রহণ করি এবং তাদের একটি উদ্যোক্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি।

ওই উদ্যোক্তা সম্মেলন এ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন “উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প” এর প্রকল্প পরিচালক আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজউল্লাহ খান স্যার। অনুষ্ঠানে স্যার প্রকল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন এবং প্রকল্পের ওয়েবসাইট এর ঠিকানা দেন।

ওয়েবসাইট থেকে ভোলা জেলা প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক স্যার এর সাথে যোগাযোগ করি। স্যারের আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে ভোলা জেলার সম্ভাবনাময় খাত পর্যটন শিল্প নিয়ে কাজ শুরু করি। গড়ে তুলি “ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট” নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র। যা ভোলাসহ সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চলের প্রথম এবং একমাত্র কায়াকিং পয়েন্ট।

উদ্যোক্তা জানালেন, ‘ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন ধরনের বোট, ওয়াটার সাইকেল, ভাসমান রেস্তোরাঁ সহ বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার স্পোর্টস বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আমি মনে করি এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

সেখ মুসফেক -উস -সালেহীন
উদ্যোক্তা বার্তা
ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here