কাটাই মূলত দেশের ঐতিহ্যবাহী সৃষ্টিশীল এক ধরনের কাজ। কাটাই গহনা একটু বেশি স্পেশাল, কেননা এই কাজ হয় শুধুমাত্র অত্যন্ত দক্ষ কারিগরদের দিয়ে। মেটালের পাতলা পাতকে হাতে কেটে কেটে ফুল, লতা, পাতার নকশা করা হয়। ঐতিহ্যবাহী কাটাই গহনা ডিজাইনের ধারাটি ফিরিয়ে আনতে চান ‘Heaven Desire” এর স্বত্ত্বাধিকারী সৈয়দা সিফাত মুছভী।
উদ্যোক্তা সিফাত ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন। ১৯৯৮ সালে বিয়ে হয়ে। পরিবারের পেছনে অনেক সময় দিতে হতো, তাই কখনও চাকরি করা হয়নি। তারপরও প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও দক্ষতা দিয়ে শুরু করেন অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ ‘হ্যাভেন ডিজায়ার’। গহনার জন্য উদ্যোগটি এখন পরিচিত। ট্র্যাডিশনাল সীতাহার, ঝুমকা, টিকলি, ঝাপটা আর আংটিসহ ফুল ব্রাইডাল সেট তৈরি করছেন।
শুরুর গল্প জানতে চাইলে উদ্যোক্তা সিফাত বলেন: ছোটবেলা থেকেই গহনা পরতে খুব ভালো লাগতো। মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে প্রথমে ইন্ডিয়ান জয়পুরি গহনা নিয়ে শুরু করি। বেশ ভালো সাড়া পাই। নিজেদের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুদের মধ্যে বিক্রি করার পর আরও চার/পাঁচবার অর্ডার পেয়েছি। তারপর একদিন আমার একজন আত্মীয়র মাধ্যমে একটি মেলার খোঁজ পাই। মেলায় ভালোই সেল হয়, পণ্যগুলোর কোয়ালিটি দেখে ক্রেতারা বেশ প্রশংসা করেন। ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটা মেলায় অংশগ্রহণ করি। এখন মেলার আয়োজকরাই আমাকে খুঁজে নেন। এখন আমি উদ্যোক্তা নামে পরিচিত।
উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন, ‘প্রথমে ইন্ডিয়ান গহনা নিয়ে কাজ করলেও এখন নিজের দেশীয় কারিগর দিয়ে গহনা তৈরি করাই। ফ্যাশন ট্রেন্ডে এখন রূপালি প্রলেপের গহনা জনপ্রিয়। কখনও সরাসরি রুপার ব্যবহার, কখনও আবার ধাতবের ওপর রুপালি রঙের প্লেটিং করে এসব গহনা তৈরি হচ্ছে। সিলভার কালার ছাড়াও অক্সিডাইস, অ্যান্টিক কালারও খুব চলছে। একটু ট্র্যাডিশনাল ধাঁচের গহনার প্রতি এখন আগ্রহটা বেশি। বিভিন্ন ধরনের গহনার মধ্যে চোকারের অর্ডার ভালোই পাওয়া যায়। এছাড়া সীতাহার, লম্বা চেইনের নেকলেস, চার-পাঁচ লেয়ার নেকলেস, ট্র্যাডিশনাল ঝুমকা, কানবালি, চাঁদের শেপের কানের দুল-এ ধরনের গহনায় সাজে ভিন্নতা আনতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন। এ সব গহনা ওয়েস্টার্ন এবং দেশি সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে সুন্দর মানিয়ে যায়। তাই এ ধরনের পণ্য নিয়েই কাজ করছি।’
সিফাতের “হ্যাভেন ডিজায়ার” অনলাইনভিত্তিক পেজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। গহনাতে ভ্যারিয়েশন আনতে গোল্ড প্লেটেড, মেটাল, স্টোন, পুঁতিসহ নানা ধরনের গহনায় কাটাই ডিজাইনের পণ্য তৈরি করে প্রদর্শন করছেন যা ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও তিনি ট্র্যাডিশনাল সীতাহার, ঝুমকা, টিকলি, ঝাপটা আর আংটিসহ ফুল ব্রাইডাল সেট কাটাই ডিজাইনে তৈরি করান। এভাবে যোগ করছেন নিত্যনতুন ট্রেন্ড। প্রথম পণ্য বিক্রি করেছিলেন একটি ফিংগার-রিং যা বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৪৫০ টাকায়। এখন তিনি মাসে কখনও আয় করেন পাঁচ হাজার টাকা, আবার কখনও ২০ হাজার টাকা। উদ্যোক্তার নিজস্ব কারখানা না থাকলেও কারিগর দিয়ে পণ্য তৈরি করিয়ে বিক্রি করেন। দেশের ভেতরে রাজধানীতেই বেশি সেল হয়। দেশের বাইরে কানাডা, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় কিছু পরিচিত ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করেছেন।
গহনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় কোনগুলো জানতে চাইলে তিনি বলেন: প্রথমেই দেখতে হবে আপনি কোন ধরনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। এরপর গহনাটি আপনার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে কিনা, গহনাটি পরে আপনি আরামে আছেন কিনা এবং আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই কিনা। এই চারটি বিষয় মাথায় রেখে এবং এর সঙ্গে ফ্যাশন ট্রেন্ড মেনে গহনা নির্বাচন করলে গহনাটি সৌন্দর্যের পাশাপাশি আপনার রুচির পরিচয়ও বহন করবে।
সিফাতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আছে নতুন কিছু করা, মানুষের কর্মসংস্থান, দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব রাখা। আর স্বপ্ন দেখেন নিজের একটি আউটলেট ও কারখানা করার।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা