‘কাগজের বাক্স’ তৈরি করেই তানিসের সফলতা

0
উদ্যোক্তা ওমর তারিক তানিস

কাগজের ফুল কিংবা কাগজের বাক্স নামটা শুনলেই ঠুনকো লাগে। মনে হয় কাগজের ফুলে ঘ্রাণ নেই আর কাগজের বাক্সের দাম নেই।

কিন্তু যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের যুবক ওমর তারিক তানিসের জীবনে উল্টো ঘটনা ঘটে গেছে। তিনি কাগজের বাক্সেই পেয়েছেন লাখ টাকার ঘ্রাণ।

পাঠকেরা অবাক হচ্ছেন! সত্যিই অবাক করার বিষয়, নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী বাজারজাত ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট ব্যবহৃত হয়। এই কাগজের বাক্স তৈরির একটি কারখানা স্থাপন করে তানিসের ভাগ্যের চাকাই বদলে গেল।

‘কাটুন হাউজ’ নামের এই প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী ওমর তারিক তানিসের কাছে শুরুর গল্প জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন, ”ছোটবেলা থেকেই আমার মনে হতো, পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করবো। সে চিন্তা থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি পাশ করে আমি মাত্র ৬০০ টাকা পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসাটা শুরু করি। প্রথমদিকে আমি পাতলা কাগজের তৈরি প্যাকেট বানাতাম। সেখান থেকে কাজের পরিধি বাড়িয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছি।”

কারখানায় কোন রকমের বাক্স তৈরি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তানিস বলেন, “কারখানায় মিষ্টির বাক্স, বিরিয়ানীর বাক্স, হালখাতার বাক্সসহ বিভিন্ন ধরনের বাক্স তৈরি করছেন। মোটা, শক্ত কাগজ দিয়ে এসব বাক্স তৈরি করা হয়।”

বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে উদ্যোক্তা জানালেন, ‘মিষ্টির বাক্স তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে আকার অনুযায়ী শীটগুলো কাগজ কাটার মেশিন দিয়ে কাটা হয়। এরপর ক্রিজ মেশিন দিয়ে ভাঁজ করা হয়। কাটা অংশগুলো এরপর আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। বাক্সের দুইটি অংশ থাকে। বাক্স এবং তার ঢাকনা। মিষ্টির ওজন অনুযায়ী বাক্সের সাইজ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বাক্সের বাইরের খসখসে অংশটুকু বিভিন্ন রঙের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়।’

যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা এই উদ্যোক্তা কখনো চাকরির চেষ্টাই করেননি। বরং ভবিষ্যতে তিনি তার ব্যবসায়ের পরিধি বাড়িয়ে আরও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান।

সরেজমিনে ‘কাটুন হাউস’ কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ২০ জন বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ কাগজের বাক্স তৈরির কাজে ব্যস্ত।

কেউ মেশিন বা কাঁচি দিয়ে কাগজ কাটছেন, কেউ লাগাচ্ছেন আঠা, কেউ বাক্সগুলো লাগাচ্ছেন পিন, কেউবা আবার সেগুলো শুকাচ্ছেন রোদে। বাড়িতে বাড়িতে চলছে কর্মযজ্ঞ।

এখানকার নারীরা সংসারের কাজ সামলে অবসর সময়ে বাড়িতে বসে বিভিন্ন ধরণের কাগজের বাক্স তৈরি করে তাদের ভাগ্যবদল করেছেন। কাগজের বাক্স বানিয়ে তারা প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা উপার্জন করছেন।

প্রতিদিন কতগুলো বাক্স তৈরি করা হয় জানতে চাইলে ওমর তারিক কানিস জানায়, প্রতিদিন এই কারখানায় প্রায় আড়াই হাজার কাগজের বাক্স তৈরি করছেন কর্মীরা। মাসে তৈরি করছেন প্রায় ৮০ হাজারের মতো কাগজের বাক্স। বাক্স তৈরির পর সেগুলো গাড়িতে সাজিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন দোকানে দোকানে।

উদ্যোক্তা জানালেন, “আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যসহ মোট ২০ জন এ-কাজের সাথে জড়িত আছি। আমরা পাঁচ রকমের বাক্স বানাই। প্রতি মাসে আমরা প্রায় ছয় লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন করি।
যা ঝিকরগাছা উপজেলা, মনিরামপুর উপজেলাসহ যশোরের বিভিন্ন জায়গার দোকানগুলোতে আমরা পৌঁছে দেই।”

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here