২০০৬ সাল, ২১ বছর বয়সী তরুণ দেলোয়ার হোসেন একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগে চাকরি শুরু করলেন। সেখানে ১০ মাস চাকরি করার পর নিজেই কিছু করার তাগিদ অনুভব করলেন তিনি। মায়ের কাছে গিয়ে বললেন নিজের ভাবনার কথা।
বাবা প্রয়াত আবদুল হামিদ ছোটবেলা থেকেই নিজে কিছু করাকে সাধুবাদ জানাতেন। মমতাময়ী মা আনোয়ারা বেগমও ভীষণ উৎসাহ দিলেন ছেলেকে।
২০০৭ সাল, চাকরি থেকে জমানো ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং পরিবারের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে মোট ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রথম রবির সিম কার্ড, টাচ পয়েন্ট, সিম কার্ড হোল সেল এবং রিচার্জ কার্ড বিক্রয়ের ছোট্ট একটা শোরুম দিলেন তরুণ উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন। ১ লক্ষ টাকা এডভান্স এবং দুই লক্ষ টাকার পণ্য কিনলেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2018/10/B-2.jpg)
কক্সবাজারের লালদীঘির পাড়ের বিলকিস শপিং কমপ্লেক্সে মাত্র ৭০ স্কয়ার ফিটের একটি জায়গায় যাত্রা শুরু করলেন ‘সেবা টেলিকম’ এর। শুরু থেকেই ব্যাপক সাড়া মিললো। এক বছর ধরে এই ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট হয়েই চললো ব্যবসা।
সিম কার্ডের সাথে অত্যাবশ্যকীয় একটা ব্যপার হ্যান্ডসেট। উদ্যোক্তা হ্যান্ডসেটের হোল সেলও শুরু করলেন মাত্র এক বছরের মাথায়। ২০১০ সাল পর্যন্ত তিন বছরে উদ্যোক্তার স্বপ্ন ‘সেবা টেলিকম’ ক্রেতা গ্রাহকদের পছন্দের ঠিকানায় পরিণত হয়।
মাত্র তিন বছরে ৭০ স্কয়ার ফিটের সাথে যোগ হলো আরো ১৫০ স্কয়ার ফিটের একটি শোরুম। প্রথমে স্যামসাং হ্যান্ড সেট ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ শুরু করলেন উদ্যোক্তা। কক্সবাজার থেকে বান্দরবান, প্রায় ১৪০ কিমি. জুড়ে উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেনই হলেন একমাত্র লোকাল ডিস্ট্রিবিউটর। প্রায় ৫০ টিরও বেশি মোবাইলের ছোট বড় শোরুম রিটেইল পয়েন্টে স্যামসাং এর মোবাইল হ্যান্ডসেট ডিস্ট্রিবিউশন করা শুরু করলো উদ্যোক্তার স্বপ্ন ‘সেবা টেলিকম’। সাথে দুই জন সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভও কাজ শুরু করলো।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2018/10/c-3.jpg)
বিখ্যাত মোবাইল হ্যান্ডসেট নকিয়া। উদ্যোক্তা ২০১২ সালে নকিয়ার লোকাল ডিস্ট্রিবিউটরশীপ পেলেন স্বীয় যোগ্যতায়। বাড়তে থাকলো ক্রেতা। বাড়তে থাকলো ব্যবসা। সেই সাথে পণ্য সরবরাহ করতে থাকলেন ৯টি উপজেলায়, পাশাপাশি কক্সবাজারে শ’খানেক এরও বেশি খুচরা মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীর কাছে।
২০১৩ সাল, দেশ এবং দেশের বাইরের কিছু মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড ওয়ালটন, ম্যাক্সিমাস, মাইক্রোম্যাক্স এবং অ্যালকেটেল মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার হলো উদ্যোক্তার স্বপ্ন ‘সেবা টেলিকম’। সরাসরি ক্রেতাদের কাছেও হ্যান্ডসেট সেল করা হবে ডিস্ট্রিবিউশন হাব মেইনটেইন করার সাথে সাথে। পাশেই নেওয়া হলো উদ্যোক্তার নতুন স্বপ্নের ২০০ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে সেবা’স স্মার্টফোন ক্যাফে।
বাংলাদেশের বাজারে ফ্যাশনেবল ক্রেতাদের কাছে স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে তখন। থ্রিজি নেটওয়ার্ক এবং সেই সাথে স্মার্টফোনের চাহিদা। উদ্যোক্তা হিসেবে একজনের সফলতার পথে থাকতে হয় তার স্বীয় উদ্যোগ নিয়ে সজাগ দৃষ্টি, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হয় উদ্যোক্তাকে। কক্সবাজারে স্মার্টফোন ক্রেতাদের জন্য সর্বপ্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাইভ এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার করলেন তিনি। বাড়লো ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়, সাড়া মিললো ব্যাপক।
কিপ্যাড সম্বলিত ফোন এবং স্মার্টফোনের সমাহার নিয়ে তিনটি শোরুম দিলেন ৪৫০ স্কয়ার ফিট জায়গা জুড়ে। মূল ব্যবসার ভিত্তি হয় ১২০ টির মত খুচরা মোবাইলের শোরুমে পণ্য সরবরাহ অর্থাৎ ডিস্ট্রিবিউশন মিলিয়ে সম্মিলিত ব্যবসা।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2018/10/d-2.jpg)
২০১৪ সাল, ২৫০০ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে দেলোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠা করলেন ‘সেবা ডিস্ট্রিবিউশন’।কক্সবাজারে ওয়ার্ল্ড রিনাউন্ড মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ডের ডিস্ট্রিবিউশন হাব।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর, সেবা ব্র্যান্ড শপ ক্যাফের ছাতায় একই দিনে ২৫০ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে অপ্পো এবং ২৫০ স্কয়ার ফিটে হুয়াওয়ে এর দুটি শোরুম উদ্বোধন করলেন তরুণ উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন।
২০১৬ সালে ২০০০ স্কয়ার ফিটের বেশি জায়গা নিয়ে কক্সবাজারে উদ্বোধন করলেন মোবাইল ওয়ার্ল্ড এর। সাথে আসলো ‘ওয়ালটন এক্সক্লুসিভ’ নামের আরো একটি শোরুম। যুক্ত হলো লেনোভো, অ্যাসুস সেই সাথে আরও সব স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। প্রায় ৫০ জন কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে উদ্যোক্তার হাত ধরে।
২০০৭ সালে মাত্র ৭০ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে বুক ভরা স্বপ্ন আর নিজে কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ ৪২০০ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে সফলতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করছেন সফল উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন।