লন্ডনে লেখাপড়া এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে চাকরি। পরে বেছে নিয়েছেন উদ্যোক্তা জীবন। কেন? ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হবেন, মা-বাবাও সেটা চাইতেন। নিজের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছেন। বিশ্বাস ও স্বপ্ন পূরণের গল্পটা তিনি বলেছেন উদ্যোক্তা বার্তার কাছে।
ইলিশ এবং ফুড ওয়ার্কশপ পেজ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে উদ্যোক্তা হয়েছেন ফাতেমা তানজিয়া হোসেন। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন থেকে দুটি অনলাইনে পেজের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যবসা করছেন।
ফাতেমা তানজিয়ার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর, বেড়ে উঠছেন ঢাকায়। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে মানেজমেন্টে মাস্টার্স করে পিজিডিএমএস করতে লন্ডনে গিয়েছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে প্রায় ৯ বছর চাকরি করেন একটি স্কুল ও পরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।
বাবা চাকরিজীবী এবং মা নিজেও ছিলেন একজন উদ্যোক্তা। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় জন। বাবা রিটায়ার্ড করার পর ইচ্ছে ছিল নিজে অথবা বাবার সাথে ব্যবসা শুরু করবেন। হঠাৎ বি.কম ফাইনাল পরীক্ষার একমাস আগে বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তখন তাদের কোন ব্যাংক ব্যালান্স ছিল না। তাই মা নিজের হাতের কাজের ড্রেস বিক্রি করে সংসার চালাতেন।পাশাপাশি তারাও তিন বোন ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে শুরু করেন।
ফাতেমা তানজিয়া বলেন: আমার মা সেলাই ও হাতের কাজের উদ্যোক্তা। মা যখন এইসব কাজ করতেন তখন পাশে বসে আমিও কাজ শিখে নিতাম। মায়ের কাজ অসাধারণ লাগতো। একটা সময় যখন চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন মায়ের শেখানো কাজকে আমার ব্যবসার কাজে লাগিয়ে দিলাম। যদিও ছোটবেলা মায়ের কাছ থেকে কাজ শেখার কারণই ছিল আমি মায়ের মতো সেলাই ও হাতের কাজের দক্ষ উদ্যোক্তা হতে চাইতাম।
লন্ডন থেকে ফেরার পর তিনি দেখলেন ছোটদের হাতের কাজের ড্রেস বেশ জনপ্রিয় উঠেছে। তা দেখে তিনিও অনুপ্রাণিত হন। চিন্তা-ভাবনা করে বুঝতে পারলেন হাতের কাজ ও খাবার রান্নার প্রতি তার ঝোঁক বেশি। “সিদ্ধান্ত নিলাম অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করি। শিশুদের ড্রেস ও খাবার বিক্রি করবো। ফেসবুকে ওপেন করলাম আমার ব্যবসায়িক পেজ এবং নাম দিলাম ‘Illish’ এবং ‘Food Workshop’.”
ফাতেমা তানজিয়া ২০২১ সালে ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন। বাসায় ডিজাইন করে ও কারিগর দিয়ে বানিয়ে যেসব পণ্য বিক্রি করেন, তার মধ্যে আছে: শিশুদের নিমা, বেবি প্যান্ট, ন্যাপকিন। নিজের মেধা খাটিয়ে নিজে সুতা, রঙ সিলেক্ট করা থেকে ডিজাইন করা সব তিনি নিজেই করেন ‘ফুড ওয়ার্কশপ’ পেজের মাধ্যমে বিক্রির জন্য। পাশাপাশি নিজের হাতে খাবার তৈরি করেন যেমন- পিঠা, আফলাতুন, কোরিয়ান স্যান্ডউইচ, কাপ কেক, মিষ্টিসহ বিভিন্ন স্ন্যাক্স আইটেম। এগুলো সরবরাহ করে থাকেন ‘ইলিশ’ পেজের মাধ্যমে।
ফেসবুক পেজ দুটির মাধ্যমে কিছু পণ্য আমেরিকা, লন্ডন ও অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি করেছেন। দেশের ভেতরে কক্সবাজার, খুলনা, চিটাগাংসহ প্রায় সব জায়গায় তার পণ্য বিক্রি হয় তার। মাসে এখন আয় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। তাকে সহযোগিতার জন্য ৬ জন কর্মী আছেন, টেইলর আছেন একজন।
শিশুদের ড্রেস নিয়ে কাজ কেন? তিনি বলেন: যাদের বেবি আছে তারাই জানেন যে শিশুদের জন্য পছন্দমতো জামা কিনতে কতোটা সময় দিতে হয়, ভাবতে হয় এবং মেলাতে হয়! সাইজ মিলে তো রঙ মিলে না, রঙ মিললে সাইজ মিলে না। আবার অনেক বয়সের পছন্দের জামা পাওয়া যায় না।শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক মাসে ড্রেসসহ আনুষাঙ্গিক প্রচুর জিনিস কিনতে হয়। এসব ভাবনা থেকে মূলত আমার শিশুদের ড্রেস নিয়ে কাজ করা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, “জব ছেড়ে এ দুটি এ পেজ নিয়ে যখন উদ্যোগ নিয়েছি, এ ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে করতে চাই, কারখানা করতে চাই। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইচ্ছেও আছে।”
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ফাতেমা তানজিয়ার পরামর্শ: যে কাজ দিয়ে ব্যবসা করতে ইচ্ছা করে, সেটা দিয়েই শুরু করে দেন এন্ড গো অন দ্যা ফ্লোন। জিনিসের কোয়ালিটি ভালো হলে সামনে এগিয়ে যাওয়া সহজ।
মেহনাজ খান,,
উদ্যোক্তা বার্তা