দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য নিজ হাতে কিছু তৈরী করতে পারাটাই বোধহয় একজন উদ্যোক্তার সত্যিকারের স্বার্থকতা। সফলতার মাপকাঠিতে উদ্যোক্তার জীবনে এটা একটি মাইলফলক।
তেমনই একটি মাইলফলক ছুঁতে পেরেছেন উদ্যোক্তা নার্গিস আহমেদ। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উপহার তৈরীর অর্ডারটি সম্পন্ন করে পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন এবং সেই কাজটি সম্পন্ন করতে হয়েছে একটি বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে। যেটাকে বলা হয় একজন উদ্যোক্তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ “টাইমলাইন”। “আমি ঈদের সারাটাদিনও কাজ করেছি”। এমন প্রত্যয়ী এবং দৃঢ় কণ্ঠে আনন্দ ও সফলতার অভিজ্ঞতা উদ্যোক্তা বার্তার সাথে নার্গিস আহমেদের।
কোন পণ্যের ডেলিভারি সম্পন্ন করে এতোটা আনন্দিত নার্গিস আহমেদ, বিস্তারিত পড়ুন রিপোর্টেঃ
“পবিত্র ঈদুল আযহার আগের বুধবার আমার কাছে একটি কল আসে”। বিশেষ দিনের জন্য বিশেষ একটি পণ্য তৈরির কথা বলা হয় সেই ফোন কলে। উদ্যোক্তা হিসেবে এই কলটি আমার কাছে অনেক সৌভাগ্যের, অনেক বড় একটি সুযোগের।
স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের ক্ষেত্রে আন্দোলন সংগ্রামের প্রতিটি মুহুর্তে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী হিসেবে শুধু নয়, একজন নারী নীরবে পর্দার আড়ালে থেকেই দক্ষ সংগঠক হিসেবে নিজেকে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয় সমআসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। সেই বঙ্গমাতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের জন্য গিফট আইটেম তৈরি করতে হবে আমাকে। বিশেষ এই দিনটির অফিসিয়াল স্মারক, ফাইল ফোল্ডার সেই সাথে আরো বেশ কিছু পণ্য। ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর’ এই উপহার সামগ্রীগুলো তুলে দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট এবং আমি এই অর্ডারটি পেলাম আমি। জাতীয় মহিলা সংস্থা থেকে পাওয়া এই অর্ডারটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সফলভাবে ডেলিভারি করতে পেরে খুব ভালো বোধ করছি আমি”।
উচ্ছ্বসিত এবং উল্লসিত কণ্ঠে উদ্যোক্তা বার্তার সাথে টেলিফোনে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন এসএমই উদ্যোক্তা নার্গিস আহমেদ।
সফল এই উদ্যোক্তা শুরুতে অনেক গুলো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও পরবর্তীতে তিনি উদ্যোক্তা হন। মাদারীপুরের মেয়ে তিনি কিন্তু বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন শহরে। স্কুল কলেজ পেরিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামের ইতিহাস থেকে পড়াশোনা শেষে চাকরি করেন। ছোট বেলা থেকেই নার্গিস আহমেদ হাতের কাজে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তার হাতের কাজের প্রশংসা ছিলো প্রচুর। একবার তার অফিসের এক আপু তার নিজ হাতে তৈরী কিছু পণ্য থেকে খুব পছন্দ করেন এবং সেই আপুর পরিচিত কিছু আমেরিকান বায়ারদের নিকট সেই পণ্য গুলো দেখান। যা দেখে তারা খুব পছন্দ করেন এবং অনেক গুলো অর্ডার দেন।
শুরু হলো উদ্যোক্তা জীবনের। অর্ডার গুলো সম্পূর্ণ করে ডেলিভারি দেয়ার পর বিভিন্ন বায়ারদের সাথে তারা পরিচয় হয়। শুরুতে শখে তৈরী করলেও পরে ভালো ফিডব্যাক দেখে জব ছেড়ে পুরো দস্তুর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন। উদ্যোগের প্রধান উপজীব্য হিসেবে বেছে নেন বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাটকে।
কাজ শুরু করেন ২০০৬ থেকে, ২০০৯সালে শোরুম দেন। এখন যা উন্নিত হয়ে ২টা ফ্যাক্টরিও হয়েছে। মাদারীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ এ দুটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন অনেক নারী কর্মীসহ প্রায় ৪০ জন স্থায়ীভাবে আর অস্থায়ী ভাবে প্রায় ১৬০ থেকে ২০০জন। তিনি প্রায় ১৬০ আইটেমের পণ্য তৈরী করছেন। যার মধ্যে লেডিস্-জেন্স ব্যাগ, বক্স, বাসা কিংবা অফিস ডেকর পণ্যসহ বলা যায় সকল ধরনের পাটপণ্য তৈরী করছেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে এই করোনা মহামারীর মাঝেও তিনি জাপানের বড়ো একটা অর্ডার করেছেন, হাতে আছে আরও অনেক কাজ। আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপান, স্পেনসহ পৃথিবীর প্রায় ১১টি দেশে তার পণ্য রপ্তানি হয়। তিনি বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ প্রায় ৮-৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েছেন এবং তার ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার।
উদ্যোক্তা নার্গিস আহমেদ বলেন, সঠিক ভাবে উদ্যোক্তাদের নার্সিং করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি চাই নিবিড় ভাবে। পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান পণ্য পরিহারে আমাদের নিজেদের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সকল সেক্টরকেই এগিয়ে আসতে হবে। রপ্তানি শুল্ক উদ্যোক্তাদের জন্য সহনীয় মাত্রায় রাখতে হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের তৈরী পণ্যেই দেশ রাজত্ব করতে পারবে এবং দেশকে ভালো বেশে আমাদের নিজ ইচ্ছেতেই এগুলো করা উচিৎ বলে আমি মনে করি”।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা