কোভিড-১৯ এর কারণে এসএমই খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নীতি সহায়তার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এফইএস বাংলাদেশ আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে এ কথা জানান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের এসএমই খাত, বিশেষ করে পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সংকটে পড়েছেন গ্রামীণ উদ্যোক্তারা।

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এসএমই খাতের রাজস্ব ৬৬% ভাগ কমে গেছে-গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনের এ তথ্য তুলে শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য এসএমই খাতকে সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ওয়েবিনারে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বছরে বিক্রির সবচেয়ে বড় দুই মৌসুম বাংলা নববর্ষ এবং ঈদুল ফিতরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উদ্যোক্তারা। অনেক অবিক্রিত পণ্য মজুদ হয়ে আছে। তিনি আরো জানান, এজন্য উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যে পাঁচশ’রও বেশি উদ্যোক্তাকে ই-কমার্স বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এসএমই উদ্যোক্তাদের ওপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব খতিয়ে দেখতে এসএমই ফাউন্ডেশন একটি গবেষণা পরিচালনা করবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশের এসএমই খাতে কোভিড-১৯ এর ক্ষতি উত্তরণে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায় এসএমই ফাউন্ডেশন এবং জার্মান সংস্থা এফইএস বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এই আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘জুম’ এ অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে আলোচনার বিষয় ছিল The Pendamic and SMEs: Shock-absorbing policy measure and future debates impacts in Bangladesh and Lessons from responses around the World।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম। প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান এবং জার্মানির ক্র্যাফট ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারন্যাশনাল এর ভাইস চেয়ার মাইকেল রজলার। আলোচক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক রাশেদুল করীম মুন্ন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম, অর্গানাইজেশন স্ট্রাটেজি এন্ড লিডারশীপ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহ, বার্লিন স্কুল অব ইকোনমিক্স এন্ড ল’র এমিরেটাস অধ্যাপক ড. হ্যান্সজর্গ হার এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্টাস্ট্রির সভাপতি মিসেস মনোয়ারা হাকিম আলী। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এফইএস বাংলাদেশ-এর আবাসিক প্রতিনিধি মিস টিনা ব্লুম।

সেমিনারের মূল আলোচক এসএমই খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রশংসা করেন, তবে প্রণোদনার পরিমাণ আরো বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোট প্রণোদনার শতকরা ২২ ভাগ এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় এই হার শতকরা ২৪ ভাগ, থাইল্যান্ডে ৩৩ ভাগ এবং ভারতে মোট প্রণোদনার শতকরা ৩৮ ভাগই এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের জন্য নিম্নোক্ত পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন:
১. এসএমই নীতিমালা ২০১৯ বাস্তবায়ন;
২. এসএমই উদ্যোক্তাদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ নজর দেয়া;
৩. ডিজিটাল আর্থিক সেবা শক্তিশালীকরণ;
৪. ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড তৈরি করে সিএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ বিতরণ নজরদারি করা; এবং
৫. এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

ওয়েবিনারে আলোচকগণ করোনায় এসএমই খাতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ করণীয়-এই দুই বিষয়ে আলোচনা করেন:
১. এসএমই খাতকে টিকিয়ে রাখতে এবং তাদের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে কী ধরনের নীতি সহায়তা সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়?
২. তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবন কী বাংলাদেশের এসএমই খাতের ভবিষ্যতকে টেকসই করতে পারে? এক্ষেত্রে নীতি সহায়তা কী হতে পারে। দেশভিত্তিক সীমানার বাইরে গিয়ে বিশ্ব বাজারের ভ্যালু চেইনের সাথে এসএমই খাত কীভাবে যুক্ত হতে পারে?

বাংলাদেশ, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, বুলগেরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞগণ ওয়েবিনারে দু’টি প্যানেলে আলোচনা করেন:
১. বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রথম প্যানেলের আলোচকগণ করোনা মহামারীতে বাংলাদেশের এসএমই খাতের অবস্থা, এসএমই খাতকে সরকারের নীতি সহায়তা, প্রযুক্তি ও নীতির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকার ও অংশীজনের পক্ষ থেকে এসএমই খাতকে সহায়তার নজির বিষয়ে আলোচনা করেন।
২. বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিট থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দ্বিতীয় প্যানেলের আলোচকগণ করোনা মহামারী পরবর্তী চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা, নীতি সহায়তা, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবন এবং এসএমই খাতকে বিশ্ব বাজারের সাথে সংযুক্ত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

ওয়েবিনারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তা, গবেষক, নীতি নির্ধারক, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বর্তমান পরিস্থিতিতে নীতিগত সহায়তার ধরন এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। ওয়েবিনারে দেশ-বিদেশের শতাধিক গবেষক, পেশাজীবী, এসএমই উদ্যোক্তা এবং গণমাধ্যমকর্মী অংশগ্রহণ করেন। ওয়েবিনার থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করবে এসএমই ফাউন্ডেশন।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here