নাট্যকলা বিভাগ, রাজশাহী থেকে পড়াশুনা সম্পন্ন করলেন এক তরুণ। পাশেই চারুকলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অনেক বন্ধু। নাট্যকলা শুধুমাত্র নাটক কিংবা একটি কলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ ব্যাপারটি উপলব্ধি করেন স্পৃহা। চারুকলার অনেক বন্ধু ছিল চারুকলা অনুষদকে ভালোবেসেছেন তরুণ। বন্ধু-বান্ধব তাদের কাজ সব কিছুতেই যেন স্পৃহাকে অনেক ভালোলাগায়।
গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে ঢাকায় ২০১১ সালে ঢাকায় থিতু হলেন স্পৃহা। চাকুরী শুরু করলেন নাটক ও বিজ্ঞাপনের সহনির্দেশক হিসেবে। বছর খানেক কাজ করবার পর দেশের স্বনামখ্যাত একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে সংবাদ বিভাগের বার্তা প্রযোজনা বিভাগে প্রযোজক হিসেবে কাজ শুরু করলেন।
২০১৩। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন স্পৃহা জনাব আমিনুল্লাহ বাবুর সাথে। জীবনে জীবনসঙ্গী মিলে গেলো ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ল্ডের একজন ব্যাক্তিই। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পাশ করেছেন আগে পরে, বিবাহ বন্ধনবে আবদ্ধ হবার পর এক নতুন ভুবন যেন খুলে গেলো স্পৃহার জীবনে। স্বামী গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মরত।
২০১৬। বিয়ের পর ঘরে কোনো রংতুলি দেখেননি স্পৃহা। স্বামী গ্রাফিক্স ডিজাইনার পুরো কাজ কর্মই তো হয় কম্পিউটারে। একদিন স্পৃহা স্বামীকে বললেন একটি শাড়ি বানিয়ে দাও। ভীষণ আনন্দ নিয়ে শাড়ী পরে ফাল্গুন এর উৎসবের দাওয়াতে গেলেন স্পৃহা। শাড়ি দেখে একজন বললেন এমন শাড়ি করে দিতেই হবে। ফোক আর্ট থিমে করা একটি শাড়ি পরেই একজন নারী বদলে গেলেন।
স্বামী আমিনুল্লাহ বাবু পেজটির নাম দিলেন সরলা। মানসুরা স্পৃহা প্রথম শাড়ির অর্ডার নেবার কথা শুনতেই প্রথম পরিকল্পনা করলেন ডিজাইন করলে বা শাড়ির অর্ডার যদি করে দেন তাহলে সেটার জন্য যোগ্যমূল্যই নিয়ে করে দেবেন।
শুরু হল এক নতুন পথচলা। শাড়ি ডিজাইন হল, ডেলিভারিও হল। পরপর ৫টি শাড়ির ডিজাইন করে তা সরলার পেজ থেকেই অর্ডার ডেলিভারি সম্পন্ন করেন স্পৃহা। চাকুরীক্ষেত্রে কাজের সময়টি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে সম্পন্ন করে বাড়ি ফেরার পর শুরু হয় নতুন আরেক স্পৃহার কার্যক্রম। এ স্পৃহা উদ্যোক্তা স্পৃহা।
কনভার্স জুতার উপর ফোক আর্টের কাজ শুরু করলেন। বাংলাদেশের খ্যাতিমান কনভার্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কনভার্স কিনে সেই কনভার্সগুলোর উপর নকশাদার ফোক আর্টে প্রোডাক্ট তৈরী করা শুরু করলেন মানসুরা স্পৃহা। দারুণ অর্ডার মিলতে থাকে। সরলার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শত শত পিসে্র কনভার্স অর্ডার আসতে থাকে। কনভার্সের পর মোবাইল কাভার, লেটেস্ট যেকোন ব্র্যান্ডের যে কোন মডেল এর কাভার ফোক আর্ট বা গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী চিত্রশিল্প ফুটে উঠতে থাকে, উঠতে থাকে রিকশা আর্ট, কিংবা পটচিত্র। সানগ্লাস, বয়াম, রিকশাবেল, ঘড়ি, চায়ের ছোট গ্লাস, টিনের মগ, পটারী, মৃৎ শিল্প,কফিমগ, ট্রে, কাঁচের গ্লাস, স্টিলের গ্লাস, ছাইদানী, কাপ-পিরিচ, জগ, কাঁচের বোতল, বাঁশের ট্রে, কাঠের ট্রে, আয়না, মাটির দুল, প্লেট, মাটির হাফপ্লেট, কয়েলদানী, ব্যাজেস, ফ্রিজ ম্যাগনেট, হাতে বানানো গহনা, গীটার, হারিকেন, ক্যানভাস পেইন্টিং, মাটির ব্যাংক- সব উঠে আসতে থাকলো প্রোডাক্ট হিসেবে। অনলাইনে অর্ডার আসতে থাকে ব্যাপক।
তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং করছেন আজ মানসুরা স্পৃহার সাথে। উদ্যোক্তা ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় আধুনিক জীবনযাত্রায় তার লাইফস্টাইল প্রোডাক্ট নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, জীবনের রঙ সাজাতে, জীবনকে আরও আনন্দময় করে তুলতে। ক্রেতাও বাড়ছে অনেক।
নানান শাখার নানান শিল্পীদের একসাথে নিয়ে কাজ করছেন তরুণ উদ্যোক্তা মানসুরা স্পৃহা। নিজে পায়ে হেঁটে হেঁটে কাঁচামাল থেকে পণ্য, পণ্যের পর পণ্যের রঙ, পণ্যের উৎপাদন পরিপূর্ণতা আনছেন প্রতিনিয়ত। উতকর্ষতায় খাটনি করছেন নিজের পণ্যেকে চেনাতে, তুলে ধরতে দেশ এবং বিদেশের কাছে।
সিটি আলো উদ্যোক্তা সার্টিফিকেট কোর্স করছেন উদ্যোক্তা মানসুরা স্পৃহা। ওয়াই গ্যাপ বাংলাদেশের ওয়াই হার নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে তরুণ উদ্যোক্তা এক্সিলারেশন প্রোগ্রামে সারা দেশের বাছাই করা ১৫জনের মধ্যে হয়েছেন নির্বাচিত এবং সম্পন্ন করেছেন ট্রেনিং ও সার্টিফিকেট কোর্স।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা