উদ্যোগ শুরু ৬০ টাকায়, বর্তমানে মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

0
উদ্যোক্তা ফাউজিয়া ফারহা রেশমী

সময়টা ২০২০ সালের জুন মাস। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন ফাউজিয়া ফারহা রেশমী। ডায়িং থেকে শুরু করে প্যাকিং পর্যন্ত শিখেছেন এবং অনুপ্রাণিত হয়েছেন। পাশাপাশি চাকরির দাসত্ব থেকে মুক্ত হবার পথ খুঁজছিলেন।

নিজে নিজে চিন্তা করেছিলেন কীভাবে গুণগত-মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহে কাজ করা যায়। সেই দুর্দান্ত সময়ে কাকতালীয়ভাবে উই পরিবারের সন্ধান পেলেন এবং যুক্ত হয়ে গেলেন সাথে সাথে। বলা যায় উইয়ের হাত ধরেই তার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু।

উই প্ল্যাটফর্মে প্রথমে পোস্ট করেছিলেন হাতের কাজের কুশন কভার। দুটো কুশন সেলাই করেছিলেন নিজের হাতে তীব্র মমতায়। তারপর পোস্ট এপ্রুভ হবার পর দেখেন ১১ হাজার রিয়াক্ট এবং ৮টি অর্ডার। সেদিনের আনন্দ আজো তাকে সুখী করে তোলে। শুরুটা সেখান থেকেই এবং তিনি আত্মবিশ্বাসী হলেন, একদিন সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করবেন।

উদ্যোক্তা ফাউজিয়া ফারহা রেশমীর গ্রামের বাড়ি নাটোর জেলার বনপাড়ায় কিন্তু তার বেড়ে ওঠা শৈশব স্মৃতি সমস্তটা খালার বাড়ি লালপুর গোপালপুরে। চকনাজিরপুর ভোকেশনাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তারপর গোপালপুর কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন এবং বর্তমানে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেছেন। প্রথমে ‘ডার্ড কম্পোজিট’ প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর এর দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর ‘আমানটেক্স লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানে আট মাস কোয়ালিটি অডিটর এর দায়িত্ব পালন করে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা জীবনে প্রবেশ করেন।

উদ্যোক্তা হবার জন্য খুব যে ভারী আয়োজন দরকার এমনটা মনে করেন না রেশমী। তিনি নিজে প্রথমে ৬০ টাকার এক গজ কাপড় কিনে দুইটা কুশন দিয়ে শুরু করে জেনেছেন, উদ্যোক্তা হবার জন্য প্রথমে প্রয়োজন নিষ্ঠা, সততা, আন্তরিকতা আর পরিশ্রমের মানসিকতা।

মনে আছে প্রি-অর্ডারে ৫০% টাকা অগ্রীম নিয়ে গ্রাহকদের পছন্দমতো নকশা ও রঙ ব্যবহার করে চারটা কুশন প্রস্তুত করে সরবরাহ করেছিলেন এবং গ্রাহক নিজেরাই হয়ে উঠেছিলেন তার সবচেয়ে বড় প্রচার মাধ্যম। তখন থেকে এখন পর্যন্ত বেশীরভাগ সময়ে প্রি-অর্ডারে কাজ করছেন তাই তাকে খুব বেশি মূলধন যুক্ত করতে হয়নি ।


মূলত অগ্রীম টাকা নিয়ে গ্রাহকের টাকা দিয়েই কাঁচামাল সংগ্রহ করে যথা সময়ে পণ্য সরবরাহ করেই তিনি সুনাম ও বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে মনে রেখেছেন সততা এবং কমিটমেন্টই তার উপরে উঠবার সিঁড়ি।

তিনি দেশি শাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ফিউশন, কাস্টমাইজড কুর্তি , হাতের কাজের পাঞ্জাবি, ব্লাউজ, বিভিন্ন ধরনের ট্রেডিশনাল ফিউশনে পোশাক ও মাস্ক নিয়ে কাজ করছেন। কাপড়ে রঙ ও সুতোর নকশায় ভিন্নতা আনা তার নেশায় পরিনত হয়েছে। গ্রাহকের সন্তুষ্টির চেয়ে নিজের সন্তুষ্টি আগে খুঁজবার চেষ্টা করেন।

তিনি নিজেই তার তৈরি পণ্যের কোয়ালিটি অডিটর এবং কাজে ফাঁকি দেন না কারণ নিজেকে ফাঁকি দেয়াটাই তার কাছে মূর্খতা। এই কথাটি তিনি তার কর্মী সঙ্গীদেরকেও বলেন এবং তার এখানে কাজ করার পাশাপাশি তাদেরকে উদ্যোক্তা হবার জন্যও উৎসাহ প্রদান করেন। উদ্যোক্তা রেশমীর অনলাইন পেইজের নাম ‘নিব্রিতা’। বাসায় বসেই তিনি পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ এবং উদ্যোগ পরিচালনা করছেন।

তার পণ্যগুলো দেশের সীমানা পেরিয়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও জাপানে রপ্তানি হচ্ছে। তাছাড়া দেশের প্রায় সব জেলাতেই তার উদ্যোগের পণ্য পৌঁছেছে এবং মানুষ ব্যবহার করে প্রশংসা করেছেন। মাসে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় করছেন কিন্তু অন্যের অধীনে চাকরি করতে হচ্ছে না এটাতেই তার সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি।
উদ্যোক্তা বার্তার সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উদ্যোক্তা জানান, ‘যেহেতু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারিনি তাই বারবার এমন কিছু করতে চেয়েছি যেনো আমি আমার পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরতে পারি। আমি ছোটবেলা থেকেই পোশাকের ব্যাপারে সচেতন ছিলাম এবং ৪র্থ শ্রেণি থেকে হাতের সেলাই পারতাম এবং ৯ম শ্রেনীতে সেলাই মেশিনে জামা কাপড় সেলাই করতে শিখেছি। গার্মেন্টসে চাকরি করে প্রোডাকশন ও কোয়ালিটি কিভাবে ঠিক রাখতে হয় সেটা শিখেছি এবং বিশ্বাস করি এই শিক্ষা আমাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে’।

উদ্যোক্তা স্বপ্ন দেখেন, ভবিষ্যতে তার উদ্যোগ বাংলাদেশের নাম করা ব্র্যান্ড হবে, কারখানা থাকবে। সেখানে কর্মহীন মানুষের রোজগারের জায়গা থাকবে। সেগুলো ঠিক চাকরির মতন হবে না, সবাই নিজেরাই হয়ে উঠবে ছোট ছোট উদ্যোক্তা এবং প্রত্যেকেই পাবে মুনাফার লভ্যাংশ। ফ্যাশন জগতে ট্রেন্ডে থাকবে “নিব্রিতা’র পণ্য মানে অনন্য”।

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here