উদ্যোগের চেয়েও বেশি কিছু ‘খাদি’

0
উদ্যোক্তা ফাতেমা তুজ জোহরা নুভিয়া

স্বদেশী আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত খাদি কাপড়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় এক টুকরো কাপড়ের সঙ্গে দেশপ্রেমের যে নিদর্শন উপমহাদেশে শুরু হয়েছিলো একশ বছর আগে, তাকে এগিয়ে নিতেই উদ্যোক্তা নুভিয়ার ‘খাদি’।

বাংলাদেশে খাদি কাপড়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি নাম– (প্রয়াত) শৈলেন্দ্রনাথ গুহ। তাঁর হাত ধরেই কাপড়টি প্রথম কুমিল্লাতে আসে। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা একসময় যে কাপড়কে ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়’ হিসেবে গর্ব ও সম্মানের বস্তু হিসেবে গায়ে জড়িয়েছেন, সময়ের পালা বদলে এই প্রজন্মকে সেই খাদির কাপড়ের মাধ্যমে নিজেদের শেকড়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি দেশীয় পোশাকের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি করার লক্ষ্যেই নুভিয়ার ভিন্নধর্মী উদ্যোগ।

উদ্যোক্তা ফাতেমা তুজ জোহরা নুভিয়া আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। লেখাপড়া শেষে স্থাপত্য অধিদপ্তরে দুই বছর প্রজেক্ট আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করলেও পরে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি উদ্যোক্তা জীবনের শুরু।

নিজের চলার পথটা নিজে তৈরি করতে চেয়েছেন সবসময়। তাই ২০১৮ এর শেষদিক থেকে খাদি নিয়ে কাজ শুরু করেন।

উদ্যোক্তা চাচ্ছিলেন বাংলাদেশের প্রায় হারানো শিল্পটাকে সবার মাঝে পৌঁছে দিতে। তাই কাপড়টা নিয়ে কাজ শুরু করে খাদি নামটা যেন সবার মাঝে বেঁচে থাকে সেই উদ্দেশ্যে ‘খাদি’ নাম দিয়েই তার উদ্যোগ শুরু করেন।

শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, শ্রাগ, শাল ইত্যাদি পণ্য রয়েছে তার ঝুড়িতে।
উদ্যোক্তার উদ্যোগ যেহেতু এখনও অনলাইনভিত্তিক, তাই অনেকে একটা ধারণা করেন যে, ঘরে বসেই সবকিছু হয়ে যায় বিনা পরিশ্রমে। কিন্তু, তিনি বলেন: অনলাইনের ক্ষেত্রে শুধু বিক্রিটাই অনলাইনে হয়। এর পেছনে যে পরিশ্রম, ডিজাইন করা, কাপড় কেনা, ঘন্টার পর ঘন্টা কারখানার কাজ তদারক করা, প্যাকেজিং ইত্যাদির জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়।

আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মেয়ে হিসেবেও তাকে বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। তবে সবকিছু পার করে প্রতিনিয়ত তিনি তার কাজকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

নুভিয়ার ‘খাদি’ উদ্যোগে ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ১০-১২ জন কর্মী কাজ করছেন।

দেশের ভেতরে সব জায়গাতেই তার পণ্য যায়। দেশের বাইরে এখনও পাঠানো শুরু করেননি। নুভিয়া জানান, তার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে নিজের ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি পরিবারেরও যথেষ্ঠ ভূমিকা ছিলো।

তিনি ভবিষ্যতে কাজের পরিধি আরো বাড়াতে চান। অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে চান।

নতুনদের জন্য তার পরামর্শ হলো: আমাদের দেশে ঐতিহ্যবাহী পণ্য রয়েছে। সেগুলোকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা আমাদেরই করতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যে ঐতিহ্য ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলোকে সবার সামনে নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের পণ্য যে বিশ্বসেরা সেটা পুরো পৃথিবীকে জানাতে হবে।

মাসুমা শারমিন সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here