উদ্যোক্তা আইরিনের প্রথম পছন্দ সৃষ্টিশীল তাঁত ফিউশন

0
উদ্যোক্তা আইরিন সুলতানা কেয়া

উদ্যোক্তা আইরিন সুলতানা কেয়ার চোখজুড়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। শুরুটা ছিল একেবারেই শুন্য থেকে, মূলধন বলতে শুধুই সেই স্বপ্ন, সাহস এবং প্রবল আত্মবিশ্বাস। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এক নতুন পরিবেশে প্রবেশ করেন উদ্যোক্তা আইরিন সুলতানা কেয়া। কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই সংসার নামক বিশাল দায়িত্ব চলে আসে কাঁধে৷ পড়াশুনায় বরাবরই ছিলেন প্রথম সারির একজন। তাই বিয়ের পরও জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। আজ উদ্যোক্তা কেয়ার পৃথিবী জুড়ে শুধুই তার সন্তান এবং কাজের অস্তিত্ব।

গ্রাজুয়েশন করার পর বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করেছিলেন সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিন্তু আজ তার চোখে শুধুই একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠার স্বপ্ন। তাই একমাত্র ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করতেই অনার্স চলাকালিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কিংবা পরীক্ষার নাম করে লুকিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিসিক এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ব্লক,বাটিক,স্ক্রীন প্রিন্ট এবং ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর কোর্স কমপ্লিট করেন। ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয় বিভিন্ন মেলায় অংশ নেয়া। বিসিক, এসএমই ফেয়ারসহ বিভিন্ন মেলায় তার ডিজাইন করা পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে উদ্যোক্তা জীবন শুরু হলেও পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করেছেন অনেকদিন। সংসার জীবনের বিভিন্ন কাঠখড় পুড়িয়ে একমাত্র ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ২০২০ সালে শূন্য হাতে নতুন করে আবার ও জীবন শুরু করেন উদ্যোক্তা আইরিন সুলতানা। সমাজের বিধি নিষেধের শিকল ভেঙ্গে নতুন পথের যাত্রায় সাহস সঞ্চয় করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ্য হয়ে পড়েও থেমে থাকেননি তিনি। ছেলেকে মানুষ করতেই হবে। পরিবার পরিজন কেউ পাশে নেই। লড়াইটা শুধুই নিজের সাথে। জীবনের কঠিন সময়ে দুইজন বন্ধুর সহযোগীতায় শুরু করেন নতুন স্বপ্নের পথ চলা।

উদ্যোক্তা আইরিন বরাবরই তাঁতকে ভীষণ পছন্দ করতেন কিন্তু বাংলাদেশে তাঁতশিল্প বিলুপ্ত প্রায়, তাঁতীরা আজ বেকারগ্রস্থ। তাঁতের প্রতি প্রবল ভালবাসা থেকেই উদ্যোক্তা তাঁতশিল্পকে বেছে নেন তার স্বপ্ন পূরণের সঙ্গী হিসেবে, যেখানে তার স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে আছে তৃণমূল পর্যায়ের তাঁতিদের স্বপ্নও। চাকরি করে সামান্য কিছু জমানো টাকা দিয়ে স্বল্প পরিসরে কিছু বেকার তাঁতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন তিনি। তাঁতীদের কাছ থেকে কোয়ালিটি সম্পন্ন তাঁতের ফেব্রিক তৈরি করেন তারপর এই ফেব্রিককে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ফিউশনে নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করছেন আনস্টিচ থ্রী পিস,ওয়ান পিস, ফতুয়া, কাপ্তান ও শাড়িসহ আরো বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও গহনা। তাঁতের এই ফিউশনগুলো ক্রেতামহলে বেশ সাড়া ফেলেছে৷

উদ্যোক্তা আইরিন “কিষাণী” নামক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তার উদ্যোগ পরিচালনা করছেন৷ তাঁতকে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করে দেশীয় পন্যের প্রতি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই উদ্যোক্তার এই ভিন্ন আয়োজন। কখনো পেইন্টিং, কখনো জামদানির সংমিশ্রণ, কখনো বা সুই সুতার নিঁখুত কারুকার্য দিয়ে তাঁতকে ফুটিয়ে তুলছেন এক ভিন্ন আঙ্গিকে। তাঁত ফিউশন নিয়ে উদ্যোক্তা বলেন, “দেশীয় পণ্যকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে এর চাহিদা এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই তাঁত নিয়ে কাজ করা। বিলুপ্তপ্রায় তাঁতীদের কাজে লাগানো গেলে একদিকে তারা যেমন উপকৃত হবে, সেই সাথে তাঁতশিল্পকেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে “

উদ্যোক্তার স্বপ্ন তার উদ্যোগ “কিষাণী” একটি ব্র্যান্ড হবে। তাঁত ফিউশনের মাধ্যমে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও সুপরিচিতি পাবে। এছাড়া তিনি তার উদ্যোগ দিয়ে আরো অনেককে সাবলম্বী করতে চান।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here