ইউনিভার্সিটি অফ বালারাত, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন নাহিদা। দেশে ফিরে দেশের এক শীর্ষ স্থানীয় মোবাইল টেলিকম অপারেটরে দুই বছর কাজ করেন। একটি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছেন ২০১৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত। ২০১০ সালের পর থেকেই ভাবতে থাকেন আইসিটি সেক্টরে নিজে কিছু করবার। বাবা জনাব নাজির আহমেদ, মেয়েকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক কিছু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে উদ্যোক্তা হতে। নাহিদার স্বপ্ন এগিয়ে যেতে থাকে।
২০১২ সালে ক্রিয়েটিভ সফট টেকনোলজির লাইসেন্স তৈরি সম্পন্ন হয়। ২০১৫ সাল, প্রথম আগারগাঁয়ে ৬০০ বর্গ ফুটের নিজের একটি অফিস দিলেন নাহিদা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে নাহিদা জাহান বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সাব কন্ট্রাক্টে সম্পন্ন করলেন ৭ জন সহকর্মীর একটি টিম নিয়ে। কাজটি সম্পন্ন করলেন যৌথভাবে ফ্লোরা ব্যাংকিং এর সাথে। কাজটি ছিলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১০০ টি ব্রাঞ্চ অটো মেসন। ২০১৭ সাল, ইউএনডিপি’র সাথে মাইগ্রেশন ম্যানেজমেন্টের কাজ পেলেও মাঝপথে কাজ থেমে যায়। ভীষণ চড়াই উৎরাই পাড় করতে হয় নাহিদাকে সে সময়। কিন্তু যিনি উদ্যোক্তা হবেন তিনি কখনো হাল ছাড়বার নয়। দৃঢ় মনোবল আর কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন নাহিদা জাহান।
২০১৭ সাল’র শেষ দিকে ইনফরমেশন এন্টারটেইনমেন্ট এন্ড কমিউনিকেশন লিমিটেডের টেকনিক্যাল পার্ট এর সম্পূর্ণ দায়িত্বভার বুঝে নিলেন নাহিদা, হলেন পরিচালক। নাহিদার উদ্যোগে ক্রিয়েটিভ সফট টেকনোলজি এবং আইইসিএল যৌথভাবে কাজ শুরু করলো। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রজেক্ট অটো মেসন কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন করলেন নাহিদা। প্রায় ১৫ জন সদস্যের দল নিয়ে চলিয়ে গেলেন তাঁর কাজ। বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অত্যন্ত সফলতার সাথে নেতৃত্ব দেবার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই তরুণ উদ্যোক্তাকে। এর পরের কাজটি ছিল নাহিদার জীবনের বড় একটি চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের কাজ সম্পন্নকরণ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ সভায় সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) যেই ট্র্যাকার উপস্থাপন করেন যাকে বাংলাদেশর ডেভেলপমেন্টের মিরোর বলা হয় সেই এসডিজি ট্র্যাকার তৈরি করলেন নাহিদা তার সুবিশাল টিম এবং কর্মযজ্ঞ দিয়ে। ভার্সন টু ডেলিভার করেছেন, ভার্সন থ্রি’র কাজ শুরু হবে খুব অচিরেই। দেশে ও দেশের বাইরে বেসরকারি ক্লায়েন্টের সংখ্যা আজ প্রায় ৫০ এর উপর।
আইইসিএল ও সিএসটি যৌথ ভাবে আজ সরকারি ১২টি মন্ত্রণালয়ের সাথে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। নাহিদা তার স্বপ্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে হয়ে উঠেছেন আইসিটি খাতের একজন সফল উদীয়মান উদ্যোক্তা। একজন নারী উদ্যোক্তা হয়েও আইসিটি সেক্টর কথাটি যেন কর্মগুণে অংকিত এক অলংকার উদ্যোক্তা নাহিদা জাহানের। নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বাংলাদেশে, কোর সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং ম্যানেজমেন্ট ও অপারেশনাল এই দিকগুলোতে ভীষণ পারদর্শী ও কর্মদক্ষতায় এগিয়ে যেতে থাকলেন আইসিটি খাতের এই উদ্যোক্তা। একের পর এক কাজ সম্পাদন করে একটি বড় দায়িত্ব অর্জন নাহিদার কর্মক্ষেত্রকে করেছে আলোকিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় শিক্ষক বাতায়নের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নাহিদা অর্জন করলেন স্বীয় যোগ্যতায়। ২০১৮ সালে জেনেভায় ওয়েসিস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করলো; সেই কাজটিই পেলেন নাহিদা জাহান।
বিশ্ব ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রোহিঙ্গা ক্রাইসিস প্রোজেক্টের ডেটা অটো মেসন এবং ইনফরমেশন রিপোর্টস কাজের কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নাহিদা জাহানকে। এটিও তার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন যা, নাহিদাকে এগিয়ে নিলো বহুদূর। ড্যাশবোর্ডের কাজটি সম্পন্ন করছেন উদ্যোক্তা নাহিদা তার বিশাল দক্ষ কর্মী বাহিনী নিয়ে। দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। আইসিটি সেক্টরে তিনি শুধুমাত্র একজন উদ্যোক্তাই নন, দক্ষ দলনেতাও বটে। নাহিদার স্বপ্ন, অটো মেসন পুরো বাংলাদেশে এগিয়ে যাবে। ই-গভার্নেন্স এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি গৌরবান্বিত অংশীদার হবার।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা