“এরা এতদিন শুধু মাতিয়ে রাখতো বাংলাদেশের বাজার আজ পারি জমাচ্ছে ইতালি। দোয়া করবেন একদিন যাতে আমাদের দেশের পণ্য বিশ্ব জয় করতে পারে, ভালোবেসে পাশে থাকুন “এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেন উদ্যোক্তা মাকসুদা খাতুন। দীর্ঘদিন পর আবার সচল ফ্যাক্টরির চাকা। সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে।
মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে লকডাউন শুরু হলেও ফেব্রুয়ারী মাসের শুরু থেকেই করোনার প্রভাবে উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রয়ের পরিমাণ ছিলো কম। তাই ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসে ফ্যাক্টরি চললেও সে মাসগুলোতে তারা তেমন ভাবে উৎপাদন এবং বিপণন করতে পারেননি। তারপরেও কিভাবে উদ্যোগ ধরে রাখলেন এসব প্রশ্ন নিয়ে উদ্যোক্তা বার্তা টিমের কথা হয় সম্মানিত উদ্যোক্তা মাকসুদা খাতুনের সাথে।
আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “ইতালির একটা অর্ডার এসেছিলো জুন মাসের ৫ তারিখ, বেশ কয়েকটি ডিজাইনের লেডিস ব্যাগ যার ডেলিভারি দিলাম জুলাই মাসের ১৫ তারিখ। এছাড়াও আরও কিছু কাজ হচ্ছে।
তবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ, স্পেন, ফ্রান্স এর কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আর যেহেতু আমি এক্সপোর্ট এর বেশির ভাগ কাজই করি বাইং হাউস এর মাধ্যমে, তাই সেই অর্ডার গুলো অনিশ্চিত হয়ে পরে। ব্র্যান্ডের কিছু কাজ ছিলো যার এক্সেসরিজ ও ইনহাউজ ছিলো যেগুলো পরে ক্যান্সেল হয়ে যায়”।
কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও কর্মীদের বেতন, ওভার টাইম দিয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ দিয়েছেন আর আশ্বাস দিয়েছিলেন বাকি দিন গুলোতে কর্মীদের যতটা পারে পাশে থাকার। তখন চলছিলো চট্টগ্রাম বানিজ্য মেলা যা শুরু হতে না হতেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা চরমে ওঠে।
এরপর ২৯শে এপ্রিল ২য় দফায় লকডাউন শেষে সরকার যখন সিমিত আকারে ফ্যাক্টরি খোলা রাখার অনুমতি দেয় তখনই ফ্যাক্টরি খুলে সিমিত আকারে প্রডাকশন এ ঢুকে যায় উদ্যোক্তা। আবারও মনে শক্তি সাহস আর সেই সাথে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে কাজ শুরু করেন। উদ্যোক্তা বলেন, “সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা হচ্ছে আল্লাহ ও আমাদেরকে নিরাশ করেনাই। ফ্যাক্টরি খোলার পরে বায়ার সরাসরি আমার ফ্যাক্টরিতে চলে আসে এই করোনা কালীন অবস্থায়ও কাজের অগ্রগতি দেখে ও প্রডাক্ট এর কোয়ালিটি দেখে ভালো লাগায় স্পেন এর বায়ার তার অর্ডার কন্টিনিউ করে সেই সাথে আল্লাহর রহমতে আরও দুইটা ভালো কোয়ান্টিটির প্রডাক্ট এর অর্ডার কনর্ফাম করে পরবর্তীর জন্য”।
একই সময় ইতালির দুইটা ছোট কোয়ান্টিটির কাজ পান উদ্যোক্তা। পাশাপাশি লকডাউন এর সময় বাসায় বসে অনলাইন মার্কেটটা গুছিয়ে নেন। উদ্যোক্তা আরও বলেন, “অনলাইন ভিক্তিক কাজ শুরু করি, এরই মাঝে ঐক্য স্টোর ও আমাদের পাশে থেকে আমাদের অনলাইন সাপোর্ট দিয়ে এগিয়ে নেয়। আর কাজ করতে গিয়ে যখন বারবার ফান্ড এর জন্য আটকে যাচ্ছিলাম তখনই পেয়ে যাই প্রনোদনার লোনটা। এজন্য আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ, যা না হলে আজ এতটা সহজ ভাবে কাজ চালিয়ে নিতে পারতাম না”।
আজ পুরো বিশ্ব ভিন্ন এক অর্থনীতিকে জানছে। আমাদেরই অর্থনীতিতে অবদান রাখতে হবে। আর এই ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষই উদ্যোক্তাদের পাশে থাকতে পারে, দেশীয় পণ্যের বাজারটাকে সাপোর্ট দিয়ে। দেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ তাই আমাদের নিজেদেরই অনেক বড় একটা বাজার শুধু প্রয়োজন এখন সুন্দর একটা মানসিকতার, হাতে হাত দিয়ে এগিয়ে যাবার।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা