রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে- National Level Policy Advocacy Workshop on Universal Salt Iodization (USI) শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিক চেয়ারম্যান জনাব মোঃ মোশতাক হাসান, এনডিসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিকের পরিচালক ( প্রকৌশল ও প্রকল্প বাস্তবায়ন) জনাব মোহাম্মদ আতাউর রহমান ছিদ্দিকী, জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন) এর পরিচালক ডাঃ এস এম মোস্তাফিজুর রহনাম এবং নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (এনআই) এর এ্যাক্টিন ন্যাশনাল প্রোগাম অফিসার, ফর্টিফিকেশন জনাব মোঃ গুলজার আহম্মেদ। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জনাব অখিল রঞ্জন তরফদার, মহাব্যাস্থাপক (বিপণন) এবং প্রকল্প পরিচালক সিআইডিডি প্রকল্প। কর্মশালায় বিসিক এবং এনআইয়ের প্রধান কার্যালয় এবং মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন , “লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, যা খাদ্যে ব্যবহৃত এক প্রকার দানাদার পদার্থ; যার প্রধান উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)। সমুদ্রের পানি কাজে লাগিয়ে অথবা খনি থেকে লবণ আহরণ করা হয়। আমাদের দেশে পুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতি অন্যতম প্রধান সমস্যা। মানুষের মধ্যে আয়োডিনের প্রয়োজনীয়তা ও সঠিক মাত্রার আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের বিষয়ে এখনও সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি বরং নতুন কলেবরে শুরু হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই কর্মশালা” ।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর সিআইডিডি প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগীসংস্থা নিউট্রিশান ইন্টারন্যাশনাল (এন.আই), ইউনিসেফ ও গেইন এর আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় ‘‘সর্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ তৈরি কার্যক্রমের মাধ্যমে আয়েডিন ঘাটতি পূরণ প্রকল্প” বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। এই প্রকল্পের আওতায় আটটি জোনাল কার্যালয়ের মাধ্যমে কারখানা পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। সঠিক মাত্রায় আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদনে সব ধরনের সহায়তার পাশাপাশি নিয়মিত পটাসিয়াম আয়োডেট সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আয়োডিনযুক্ত লবণ সম্পর্কিত সচেতনতা বিষয়ক নানামুখী প্রচার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু এখনও আমরা শতভাগ পরিবারের মধ্যে সঠিক মাত্রার আয়োডিনযুক্ত লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দেশে উৎপাদিত সকল ভোজ্য লবণ সঠিক মাত্রায় আয়োডিনযুক্ত করে বাজারজাত করার কথা থাকলেও সেটি সর্বক্ষেত্রে যথাযথভাবে হচ্ছে না।

আজকের এই কর্মশালা আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো, মানসম্পন্ন ক্রুড লবণ উৎপাদন ও সর্বজনীন আয়োডিনযুক্ত ভোজ্যলবণ তৈরি কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে এবং প্রকল্পের সাফল্যকে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে দিতে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। প্রকল্পটি বিসিকের হলেও ভোক্তা পর্যায়ে আয়োডিনযুক্ত ভোজ্যলবণের সুফলভোগী আমরা প্রত্যেকেই। তাই আমাদের পাশাপাশি প্রকল্পের মনিটরিং ও অন্যান্য আইনগত সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে আপনাদেরকে সক্রিয় অংশিদার হিসেবে আরও অধিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাই।

মানবদেহে আয়োডিনের স্বল্পতাজনিত সমস্যা শুধু বাংলাদেশের কোন সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই জাতির জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। আমাদের দেশের জনস্বাস্থ্যের প্রেক্ষিতে এই ধরনের কর্মসূচিগুলো অত্যন্ত সময়োপযোগী উদ্যোগ। এই উদ্যোগ সফলভাবে আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিসিকের পরিচালক (প্রকৌশল ও প্রকল্প বাস্তবায়ন) জনাব মোহাম্মদ আতাউর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, “আমাদের দেশে পুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতি অন্যতম প্রধান সমস্যা। বিভিন্ন অনুসন্ধান ও জরিপে দেখা গেছে এখনও সাধারণ জনগণসহ বিভিন্ন মহলে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়ে গেছে। ফলে বিরাজমান এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আমাদের নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কোন বিকল্প নেই। পূর্বের জরিপের ফলাফলে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের যে চিত্র দেখা গেছে তা বর্তমানে অনেক ভালো অবস্থানে গেছে । এখন এ বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করা প্রয়োজন”।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাঃ এস এম মোস্তাফিজুর রহনাম বলেন, “এই বিষয়টি অনস্বীকার্য যে একটি দেশের সার্বিক ও টেকসই উন্নয়ন নির্ভর করে সেই দেশের জনগণের সঠিক মেধাশক্তি এবং কর্মদক্ষতার উপর। সুস্থ-সবল ও মেধাবী জাতিই তৈরি করতে পারে একটি সমৃদ্ধ দেশ। আয়োডিনের অভাবে বাংলাদেশের জনগণের এক বিপুল অংশ উৎপাদন ক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না। অথচ সামান্য একটু আয়োডিন নিয়মিত গ্রহণের মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। আয়োডিনযুক্ত লবণের সর্বজনীন ব্যবহারে দেশের মানুষ তাদের কর্মদক্ষতা ও চিন্তাশক্তি বাড়িয়ে একই সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে সক্ষম হবে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই আমরা সকলে মিলে একটি সময়োপযোগী কর্মকৌশল নির্ধারনের মাধ্যমে আগামীতে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি”।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (এনআই) এর এ্যাক্টিন ন্যাশনাল প্রোগাম অফিসার, ফর্টিফিকেশন জনাব মোঃ গুলজার আহম্মেদ বলেন, “সকলের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি গ্রহণযোগ্য কর্মকৌশল নির্ধারণই হবে এ কর্মশালার সফলতা”।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here