আড়ং, বিশ্বরঙ, দেশী দশে যাচ্ছে ‘অদম্য’ লিজার বুটিকস পণ্য

1
উদ্যোক্তা - কানিজ ফাতেমা লিজা

সার্টিফিকেট নেই বলে প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি আজ তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন শত শত কর্মীকে। উঠান থেকে উঠানে আজ তার নির্দেশনায় চলছে বুননের কর্মযজ্ঞ। নিজ এলাকার উদ্যোক্তাদেরকেও দিচ্ছেন সাংগঠনিক পরামর্শ। একজন সফল উদ্যোক্তা হবার পাশাপাশি, বর্তমানে তিনি Idea Bangladesh-এর নবনিযুক্ত জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।

বলছিলাম লিজা বুটিকস ফ্যাশন হাউজের স্বত্বাধিকারী কানিজ ফাতেমা লিজার কথা। যিনি কিনা দুঃসময়কে পাশ কাটিয়ে সুসময় ফিরেছে দ্বিগুণ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে।

মা মারা যাবার পর দুই সন্তানকে নিয়ে নতুন পথচলা। দুঃখে জরাজীর্ণ জীবনে নতুন করে বাঁচতে হবে তাই জেগে উঠলেন, কানিজ ফাতেমা লিজা। এবারে সঙ্গী হলেন স্বামী।

শুরুর কথা জানতে চাইলে লিজা উদ্যোক্তা বার্তা কে বলেন, ‘এক সময় সুই ধরতেও জানতাম না। এসএসসির সার্টিফিকেট নেই বলে সরকারি পর্যায়ে অসংখ্য ট্রেইনিং সেশনে সুযোগ পাননি। দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন প্রশিক্ষণের আশায়। বারবার প্রত্যাখ্যানের পরেও দমে যায়নি। কাজ শিখেছি, নিয়েছি দক্ষ হবার ব্রত।’

বর্তমানে নিজ বাড়ির উঠানে নিয়মিত কর্মী আছেন ২০/২৫ জনের মতো। বিশ্বরঙ, আড়ং, দেশী দশের মতো বড় বড় হাউজে ছোট্ট ছোট্ট করে পণ্যের চালান পাঠান এখন। ডিজাইনার কালেকশনেও নিয়মিত যায় তা পণ্য।

লিজার ভাষ্য, আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই আজ এ পর্যন্ত আসা। এখন স্বপ্ন আরও সুদূরের।

লিজা বললেন, ‘‘মূলধনটা সামান্যই ছিল, যা কাজে এসেছে তা কেবলই আত্মবিশ্বাস আর দুঃখভরা জীবন থেকে পাওয়া সুদিনের তাগিদ। উঠান থেকে উঠানে আজ কাজ চলে লিজার। ২০১৯ সালের এপ্রিলে কাজের শুরু। মাঠপর্যায়ের এলাকাভিত্তিক কয়েকশ কর্মীর বাহিনী বানিয়েছি মাত্র কয়েক বছরেই।’’

বাবার পেশাজীবনের অপারগতায় ঢাকার নবীনগর থেকে রাজবাড়ী ফিরে আসার এই যাত্রায় কিশোরী বধূ থেকে লিজা বুটিক ফ্যাশন হাউজের স্বত্বাধিকারী হয়ে উঠার এই সময়টা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার ছিল।

তিনি বললেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা বাবা তখন নবীনগরে চাকুরি করতেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবার ব্রেইন স্ট্রোক করেন। বাবার এই অসুস্থতাই যেন প্রথমবারের মতো একটা ধাক্কা দিলো পরিবারকে। শারীরিকভাবে অক্ষমতা নিয়েও আবার চাকুরিতে ফেরেন বাবা। বেশিদিন চালিয়ে নিতে পারলেন না। অষ্টম শ্রেণীতে পড়া সময়ে বাবা একেবারেই চাকুরি ছেড়ে দেন। ঢাকায় বা তার আশেপাশে থাকার সম্ভাবনা নিভে গেল ভাগ্যের পরিহাসে। এরপর দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে পুরো পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে আসতে হয়। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে।’’

‘‘জীবনযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা বাবার দুঃসময় দেখেছি অনেক, বিয়ের পর স্বামীর সংসারেও একই কঠিন সময় ফিরে আসলো । স্বামীর স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবসায় হঠাত আসা ধ্বসে জীবন যেন নতুন মোড় নেয়। অকূল পাথারের মাঝে পড়ি আমি। এর মাঝেই কোলজুড়ে এলো দু’টো সন্তান। বাড়লো সাংসারিক চাপ। এদিকে স্বামীর ব্যবসার তেমন কোনো উন্নতিও নেই। হঠাৎই পৃথিবীকে আরও অন্ধকার করে যেন চলে গেলেন মমতাময়ী মা। ’’

তবুও যেন অন্ধকারের গানেও আলোর খোঁজ চালিয়েই যেতে থাকলেন কানিজ ফাতেমা লিজা।

তিনি জানালেন, ইচ্ছাশক্তিটা সর্বোচ্চ থাকতে হবে। কাজ করার ইচ্ছাটাই মানুষকে সাফল্য এনে দিতে পারে। পথ তৈরি করতে পারে সব সমস্যা সমাধানের।

সাদিয়া সূচনা
উদ্যোক্তা বার্তা

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here