উদ্যোক্তা জান্নাতুল বাকিয়া চৌধুরী মনি

সিলেটের মেয়ে জান্নাতুল বাকিয়া চৌধুরী, ডাক নাম মনি।  বাবা-মা দুজনেই স্কুল শিক্ষক।সাত ভাই বোনের মধ্যে মনি সবার ছোট। সবেমাত্র মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক এ ভর্তি হয়েছেন ঠিক তখনই জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটা ঘটে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে  বাবাকে হারালেন। মানসিক ভাবে এতই ভেঙে পরেন যে মানসিক চিকিৎসা নিতে হয়েছে দীর্ঘ চার বছর।

তখন ২০০৯ সাল পড়াশোনা বন্ধ। এই অসুস্থতার মধ্যেও তার বিয়ে হয়ে যায়। মনি বলেন, ” আমার স্বামী ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স মাষ্টার্স এবং ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল সম্পন্ন করেছেন। আর তার বউ হিসেবে নিজেকে এত ছোট মনে হতো মাঝে  মাঝে খুব অসহায় লাগতো নিজেকে। যাক আমার স্বামীর সহোযোগিতায় পরবর্তীতে আমি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে H.S.C পাশ করি। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে সমাজ কর্মে অনার্স করি এবং SME ফাউন্ডেশন থেকে ফ্যাশন ডিজাইন এর কোর্স করি।  মন্টেজ থেকে ফ্যাশন ডিজাইন কোর্স করি। এর পর ব্লক,বাটিক, ন্যাচারাল ডাইয়ের উপর SME ফাউন্ডেশন থেকে শর্ট কোর্স করি”।

পরিবেশ অনুকূলে না থাকলেও বিয়ের আগে এবং পরে বিভিন্ন জায়গায় তিনি খণ্ডকালীন চাকরি করেছেন।  অন লাইন পোর্টাল রেড টাইমস বিডিতে বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন কিছুদিন।  তারপর গোল্ডেন হার্ভেষ্ট নামে একটি ডাটা এন্ট্রি অফিসে ডাটা প্রসেসর হিসেবেও কাজ করেছেন। কিছুদিন নাগরিক নাট্যাঙন নামে একটা নাট্য সংগঠনের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। সেখানে তার অভিনিত অনেক গুলো নাটক প্রকাশ হয়। এছাড়াও তিনি টিভি নাটকে অভিনয় করেন।

২০১০ সাল থেকে ভাবনা থাকলেও  বিয়ের পর  ২০১৫ সাল থেকে তারা উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। প্রথমে কাটিং প্রশিক্ষন  তারপর ইলেকট্রিক গার্মেন্টস মেশিন এবং  ফ্যাশন ডিজাইন এর কোর্স করে ২০১৫ সালে jnjfashionbd.com  নামে ট্রেড লাইসেন্স করে শুরু করেন উদ্যোক্তা লাইফ। স্বামীর সাথে আলোচনা করে মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি করেই শুরু করলেন।

তার পন্য গুলো মূলত বেবী ড্রেস , কুশি পন্য, ব্লকের থ্রি পিস, ব্লক,টাই-ডাই এর থ্রি পিস, হাতের কাজের থ্রি পিস এবং ছেলেদের টি-শার্ট, পলো শার্ট। বর্তমানে কর্মী আছে ১৬ জন। বাসায় ছোট পরিসরে ব্লকের একটা কারখানা আছে। অনলাইনে পেইজও আছে J&J Fashion নামে।
তার পন্য গুলো এখনো সেইভাবে  রপ্তানি নাহলেও  বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধুদের মাধ্যমে আমেরিকা, কানাডায় পন্য যায়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই তার পণ্যের প্রচলন আছে। ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট,রংপুর, পঞ্চগড়,পাবনা, বগুড়া,  ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে ফ্যাশন হাউস গুলোতে এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়ে ফ্যাশন হাউস গুলোতে তার পণ্য দেখতে পাওয়া যাবে।

প্রতি মাসে কুশি বেবী নেক উৎপাদন হয় ৫-৬ শত পিস। হাতের কাজের থ্রি পিস প্রায় ৬০টির মতো, ব্লক টাই-ডাই এর থ্রি পিস ২০ পিস এর মত উৎপাদন হয়। টি-শার্ট  এর উৎপাদন অর্ডার এর উপর নির্ভর করে। সবমিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ  টাকার পণ্য বিক্রি করেন উদ্যোক্তা মনি চৌধুরী।

উদ্যোক্তা কেন হলেন সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মনি বলেন, “নিজে কিছু করার তাড়না থেকেই উদ্যোক্তা হওয়া। আমি সবসময়ই চেয়েছি আমার একটা পরিচয় থাকুক। আমাকে আমার নামেই মানুষ চিনুক।।মেয়েদের তো নিজের বলতে কিছু নেই। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে বাড়ি কোথায়? তখন আমাদের বলতে হয় কোন বাড়ি, বাবার, নাকি শশুর বাড়ি? এই বিষয়টি আমাকে খুব নাড়া দেয়। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আমার বাড়ি হবে। আমার পরিচয় হবে। আরেক টা কারন হলো মেয়েদের জন্য কিছু করতে চাই তাদের একটা কর্ম সংস্থান করতে চাই। আমি সমাজকে বুঝাতে চাই মেয়েরা বোঝা নয় সম্পদ। প্রত্যেক্টা মানুষের ভিতরেই একটা প্রতিভা লুকিয়ে আছে সেটাকে বের করে কাজে লাগাতে হবে”।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তিনি ভাবছেন, দেশের পন্যকে বিশ্ব দরবারে  তুলে ধরা। বিবি রাসেলের মত দেশকে উপস্থাপন করা। আর কয়েকটা আউটলেট করা যেখানে কর্মসংস্থান হবে শত অসহায় নারীর।
তরুণদের জন্য তিনি বলেন, “কাজ জানতে হবে আগে তারপর উদ্যোক্তা হওয়া। কাজ জানার বিকল্প নেই। আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে কোন কাজটা তোমাকে টানে কোন কাজটা করতে তোমার ভাল লাগে সেই কাজটাই তুমি শুরু করবে। শুধু শখ করে উদ্যোক্তা হওয়া যায়না। উদ্যোক্তা হতে গেলে সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে পরিশ্রমী হতে হবে। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। মাথায় রাখতে হবে আমার কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর যেমন আমি তেমনি আমি কোম্পানির ঝাড়ুদার”।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here