২০১১ সালে ৮০০ টাকার বেতনে প্রথম স্টুডেন্ট পড়ানো শুরু করেন নুসরাত জাহান মীম। টাকার অংকটা এখন কম মনে হলেও তার কাছে মোটেও কম মনে হয়নি। সবসময় বিশ্বাস করেছেন, টাকাটা বড় কোনো বিষয় নয়, শুরুটাই সবচেয়ে জরুরি।
১৫ বছর আগে শুরু করা বাবার একাডেমিক ও ভর্তি কোচিং এর হাল ধরলেন মীম। প্রতি বছর ২ টা ব্যাচ এ ২৫ জন স্টুডেন্ট পড়াতেন। বর্তমানে যেখানে শিট আর এ প্লাসই মুখ্য বিষয়, সেখানে তার কাছে মূখ্য ছিল পাঠ্য বই, গল্পের বই আরভবেসিক নলেজ। নিজের প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করিয়েছেন। প্রতি মাসে ভ্যাটও দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানে আছেন ৬ জন শিক্ষিকা, ২ জন গার্ড এবং ২ জন আয়া।
বাবা মোঃ গিয়াস উদ্দিন ২০০৪ সালে যেই প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন ক্লাস ওয়ানে ভর্তি কোচিং হিসেবে, সেটারই এক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নুসরাত জাহান মীম ২০১৬ সালে শুরু করেন “মীম প্রিপারেটরী স্কুল” ৩ থেকে ৭ বছরের বাচ্চাদের জন্য। এসময় লেখাপড়া বাচ্চাদের জন্য যাতাকল ছাড়া আর কিছুই না, ঠিক এই সময়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাচ্চাদের সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য তিনি উদ্যোগ নেন “মীম প্রিপারেটরি স্কুল” এর।
এখানে আছে বাচ্চাদের জন্য বিশাল এক খেলার ঘর। এখানে লেখাপড়া করানো হয় প্রচলিত নিয়মের বাইরে যেয়ে, খেলার ছলে, গল্পের ছলে, বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস এর মাধ্যমে।
বাধা ছিলো অনেক। অভিভাবক দের বুঝানো, তাদের আস্থা অর্জন করা ছিলো অনেক কষ্টের। এই কাজে মীমের বাবা শুরু থেকে এখনো মেয়েকে সাহায্য করে যাচ্ছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন উদ্যোক্তার স্বামী রাজীব।
উদ্যোক্তা মীম জানান, “রাজীব আমাকে স্বপ্ন দেখানো শিখিয়েছে, আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে হাত ধরে আমাকে সামনে নিয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসা শুধু ফেসবুকের স্ট্যাটাসে সীমাবদ্ধ না থেকে ডানা মেলেছিল স্বপ্নের পৃথিবী তে আর এই কারণেই শুরু করতে পেরেছিলাম আমার স্বপ্নের ব্যবসা “Back to Childhood Stationery & Accessories Shop”.
২০১৭ এর মে মাসের ১০ তারিখ মীম সিদ্ধান্ত নেন ষ্টেশনারীর ব্যবসা করবেন। বাচ্চাদের পড়াতে পড়াতে তাদের স্টেশনারি সামগ্রীর প্রতি ভালো লাগা দেখে নিজের শৈশবে প্রায়ই ফিরে যেতেন, তখন দোকানের বাইরে থেকেই এইসব দেখে মুগ্ধ হতেন উদ্যোক্তা। সেই অনুভূতি থেকে নিজের কোচিং ও স্কুলের বাচ্চাদের আর ভার্সিটিতে তার অন্যতম প্রিয় একজন জুনিয়র তানিশাকে স্টেশনারি সামগ্রী উপহার দেন আর তাদের প্রচণ্ড খুশিমাখা সেই মুখগুলো স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে মীমকে। তার পাশাপাশি তানিশা প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করে তার এ শখটিকে ব্যবসায়ে পরিণত করতে। যার ফলশ্রুতিতে কিছুদিন পরেই উদ্যোগটিকে বাস্তবতায় রূপ দেয়ার জন্য মাঠে নামেন মীম।
বর্তমানে ফেসবুকের অন্যতম জনপ্রিয় এই অনলাইন স্টেশনারি শপের প্রতিটি জিনিসই ভিন্নধর্মী এবং আকর্ষণীয়, যা সচরাচর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। কি নেই এই অনলাইন শপে? ট্রেন বা স্কুটার ডিজাইনের শার্পনার, বিভিন্ন পুতুল কিংবা খাবারের শেপের ইরেজার, তলোয়ার-মরিচ-ছাতা ডিজাইনের কলম থেকে শুরু করে লাইট কিংবা ফ্যানযুক্ত কলম, হালের হ্যালো কিট্টি কিংবা সুপারহিরোদের থিমে তৈরি পেন্সিল ব্যাগ বা বক্স- এরকম আরও হাজারও সামগ্রীতে পরিপূর্ণ তার এই অনলাইন দোকানটি। শুধু অনলাইনে সীমাবদ্ধ না রেখে মীমের স্বপ্ন এই শপকে বাংলাদেশ এর সবচাইতে বড় হোলসেল ও রিটেইল ষ্টেশনারী শপ এ পরিণত করা।
মীম বলেন, “আমি মেয়ে, তাই বলে আমাকে আমার ক্যারিয়ার বা পরিবার যেকোন একটা নিয়ে এগোতে হবে এই কথাকে আমি নাকচ করে দিয়েছি। আমি মা, আমি মেয়ে, আমি স্ত্রী, বাড়ির বড় বৌ, আমি শিক্ষিকা, আমি ব্যবসায়ী। আমি নারী। আমি পারি।”
সাদিয়া সূচনা