আপনারা যারা ভবিষ্যতের ‘মমপ্রেনিয়ার্স’

0

একজন মা হচ্ছেন সবচেয়ে দায়িত্বশীল মানুষ। মা যখন একটি উদ্যোগ পরিচালনা করেন, তার চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু, অনেকের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, মা হ্ওয়ার পর সন্তান লালন-পালন করার কারণে একজন নারী তার পেশা– হোক সেটা ব্যবসা বা চাকরি– তাতে দরকারমতো শতভাগ সময় ও মনযোগ দিতে পারেন না। ধারণাটি যে কতো ভুল সেটা আমরা পদে পদে দেখতে পাই।

আমাদের চারপাশে শত-সহস্ত্র উদাহরণ আছে যেখানে মায়েরা যেমন তার চাকরি বা ব্যবসায় সফল হয়েছেন, তেমনি তাদের সন্তানকে শতভাগ যত্নের সাথে বড় করে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। আন্তর্জাতিক মা দিবসে সেই মায়েদের প্রতি আমাদের অভিবাদন।

সফল মা এবং উদ্যোক্তাদের সাফল্যের গল্পগুলো জানার পাশাপাশি তাদের সফলতার পেছনে যে বিষয়গুলো কাজ করেছে সেগুলো জানাও খুব জরুরি। সফল নারী উদোক্তা এবং সফল মা যাদেরকে আমরা ‘মমপ্রেনিয়ার্স’ বলি, তারা নেপথ্যের সেই কারণগুলো জানানোর পাশাপাশি ‘মা দিবসে’ কিছু পরামর্শও তুলে ধরেছেন। তাদের পরামর্শগুলো মেনে চলার কথা বলেছেন উদ্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরাও।

যদি আপনি একজন নতুন মা হয়ে থাকেন, কিংবা আপনি একজন মা এবং কিছু করবেন ভাবছেন বা একটি উদ্যোগের পরিকল্পনা করছেন, তাহলে সম্ভাব্য সেই ‘মমপ্রেনিয়ারদের’ জন্য সংশ্লিষ্ট পত্র-পত্রিকার ভিত্তিতে কিছু পরামর্শ:

 নিজেকে আবিষ্কার করুন: প্রথমেই আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে আপনি কী চান এবং কী পছন্দ করেন। এর মানে আপনি যা ভালোবাসেন বা পছন্দ করেন, সেই বিষয় বা বিষয়গুলো আগে নিজের ভেতর থেকেই আবিষ্কার করে নিন। সুতরাং, আর দেরি নয়; এখনই নিজের সাথে নিজে এবং নিজের আশপাশের মানুষগুলোর সাথে কথা বলে বুঝে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি কী করতে আগ্রহী। ব্যবসা বা উদ্যোগ পরিকল্পনটা একদম পরিস্কার করে নিন।
 বন্ধুর পথের জন্য প্রস্তুত হন: একটি উদ্যোগের মালিকানা বা একটি উদ্যোগ পরিচালনা, একটি সন্তান লালন-পালনের মতোই চ্যালেঞ্জিং। আপনার নতুন উদ্যোগটিকেও সেইরকম চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করুন। এই পথ কখনও মসৃণ, কখনও বন্ধুর হতে পারে। সন্তান বড় করার মতো নিজের উদ্যোগের সামনেও যতো বাধাই আসুক, তার জন্য র্সবদা প্রস্তুত থাকতে হবে ।
 সব সময় সামনে পরিকল্পনা রাখুন: আপনার বাড়ি এবং সন্তান সামলানোর পাশাপাশি একইভাবে কাজের পরিকল্পনাটাও করে রাখুন। এটা জরুরী নয় যে আপনাকে সবসময় কম্পিউটারের সামনেই বসে থাকতে হবে। এরকমও নয় যে আপনাকে দিনে ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহের সাতদিনই ব্যস্ত থাকতে হবে। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে নিয়ে পরিবারের সাথেও সময় কাটান।
 নিজেকে সজীব এবং সুস্থ্ রাখুন: একটি ব্যবসার মালিক হওয়া কিংবা একটি উদ্যোগ পরিচালনা কখনও কখনও আপনাকে পরিশ্রান্ত করে দিতে পারে, মাঝে মাঝে তা চাপেরও হতে পারে। তবে সন্তানের মতো নিজেরও যথেষ্ঠ যত্ন নিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব বুঝতে হবে; আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্যকে হালকাভাবে নেন তবে সবকিছু ভেঙে পড়তে শুরু করবে। শত পরিকল্পনা করেও সাফল্য আসবে না।
 বিরতিকেও কাজের অংশ করা: পরিকল্পনা ঠিক থাকলে, প্রয়োজনীয় মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করলে এবং উপযুক্ত মানুষের কাছ থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ নিতে পারলে আপনার উদ্যোগ এগিয়ে যাবেই। তাই প্রয়োজনে সময় সময় আপনাকে কাজ থেকে একটু বিরতিতে যেতে হবে। রুটিনের মতো ওই বিরতি দেওয়া একদম ঠিক আছে। আবার আপনার বাচ্চার যত্ন নেওয়ার বা পরিবারের জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়ার প্রয়োজন হলে নিজেকে দোষী মনে করবেন না। এগুলো জীবনেরই অংশ যা শেষ পর্যন্ত আপনার উদ্যোগকে সফল করবে।
 বাচ্চাদেরও সম্পৃক্ত করুন: আপনার বাচ্চারা যথেষ্ট বয়সী হলে আপনি তাদেরকেও আপনার উদ্যোগ বা ব্যবসাযর কাজে জড়িত করতে পারেন। তাদের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী আপনি তাদের কিছু দায়িত্বও দিতে পারেন। খেয়াল রাখবেন যে, তারা কীভাবে সেই দায়িত্বটা পালন করে। এটি আপনাকে তাদের সাথে আরও বেশি সময় কাটাতে এবং ছোটবেলা থেকেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতে সহায়তা করবে।
 নিজের জন্য পুরষ্কারের পরিকল্পনা: নিজের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি বাড়ানো সবসময় কাজের পেছনে চমৎকার প্রেরণা হিসাবে কাজ করে। সুতরাং, নিজের জন্য বিশেষ কিছু পুরস্কার বা উপহার পরিকল্পনা করুন। যেমন স্পা-তে একটি দিন, কিছু কেনাকাটার জন্য আলাদা সময়, একটি সুন্দর লাঞ্চ বা ডিনার, ইত্যাদি। যখনই আপনি একটি কাজ সফলভাবে শেষ করবেন, তখনই নিজেকে এরকম উপহার দিন, নিজেই নিজের হাতে কোনো পুরস্কার তুলে দিন।
 একবারে একটির বেশি নয়: একসাথে অনেক কাজ করার চেষ্টা করবেন না। একবারে একটি জিনিস পেতে আপনার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করুন। একসাথে অনেক কিছুতে যুক্ত হওয়া সামগ্রিকভাবে আপনার উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

একজন উদ্যোক্তা নিজ থেকেই হয়তো পরামর্শগুলোর কথা জানেন বা বুঝতে পারেন। তারপরও বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা যারা মা তারা পরামর্শগুলো মনে রাখুন যা আপনাকে কর্মজীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং আপনার ব্যবসা উদ্যোগকে আরও দক্ষতার সাথে চালাতে সাহায্য করবে। সন্তানকে বড় করে আপনি যেমন হবেন সফল মা, তেমনি একজন সফল উদ্যোক্তা।

ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here