বৃহত্তর বরিশালে আগৈলঝাড়ার পয়সার হাঁটের ছোট্ট একটি গ্রাম । চারদিকে ছায়াঘেরা সবুজ গ্রাম। বর্ষার পানি থৈ থৈ করছে, প্রাকৃতিক দৃশ্য যেন মন ছুয়ে যাচ্ছে! কিন্তু প্রকৃতির রুপে তো খাবার জোটেনা!  বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ, মানুষের আর্থিক হাহাকার!  ঠিকভাবে আয়ের উৎস নেই অধিকাংশ পরিবারের। সেই মুহুর্তে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত  উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমিন পাশে এসে দাঁড়ান, তার বহুমুখী পাটজাত পণ্যের প্রোডাকশন হাউস “তরঙ্গ” এর মাধ্যমে।

‘তরঙ্গ’ নামক প্রতিষ্ঠানটি পয়সারহাঁটের কদমবাড়িতে উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমিন ১৯৮৪ সালে  প্রতিষ্ঠিত করেন। এখানে পাট দিয়ে  বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেন নারী কর্মীরা। প্রায় দুইশ কর্মী ‘তরঙ্গে’ কাজ করেন। উদ্যোক্তা একসময় এই এলাকায় এসে দেখতে পেলেন একমাত্র মাছ ধরে সংসার চালান পুরুষ, আর নারীরা ঘর সামলাতে হিমসিম খান। নারীদের কোন মূল্যায়ন করা হয় না! অসুখে ৮/১০ দিন পরে থাকলেও স্বামীরা খোঁজ নিচ্ছে না। সেখান থেকেই উদ্যোক্তা ঐ সকল অসহায় নারীদের কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেন। তাদের উপার্জনের পথে হাটতে শেখান।

বর্তমানে পাটজাত পণ্য তৈরি করে তারা ১০/১২ হাজার টাকা, কখনও তার থেকে বেশি টাকা রোজগার করে তাদের সংসার, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও বিভিন্ন ধরনের আর্থিক যোগান দিচ্ছেন এই সকল নারীরা। এমনকি অসুস্থ হলে তৎক্ষনাত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তাদের স্বামী। পয়সারহাঁটের কদমবাড়ি ছাড়াও তরঙ্গে বরিশালের উজিরপুর, কোটালিপাড়া, আগৈলঝাড়ার সাতলা তার আরো নারী কর্মী রয়েছে।

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে তিনি এই সকল নারী কর্মীদের জন্য কিছু উপহার সামগ্রীর ব্যবস্থা করেন। যার মধ্যে রয়েছে ১ মন পাট এবং খাদ্য সামগ্রী (চাল, ডাল, তেল, লবন, সাবান, মাস্ক এবং বয়স্কদের জন্য ভিটামিন ওষুধ)। প্রায় ৩৬৫ জন কর্মীকে তিনি এই সকল সামগ্রী নিজ হাতে পৌঁছে দেন। শুধু তাই নয়, করোনাকালীন সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাজ অর্থাৎ আয়ের উৎস বন্ধ থাকলেও তার কর্মীরা রোজগারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল না। উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমিন বলেন, “বর্তমান করোনা কালীন সময়ে এ সকল অসহায় নারীদের কোন সমস্যা না হয় সেজন্য তাদের অগ্রিম টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছি”।

উপহার হিসেবে যে পাট দিয়েছেন সেই পাটের পণ্য উদ্যোক্তা নিজেই আবার ক্রয় করে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবেন। তিনি বলেন আমি আমার নারী কর্মীদের ১মন পাট উপহার দিয়েছি যার মূল্য ৩৫০০ টাকা। যেটা এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে ক্রয় করা অসম্ভব। কিন্তু এই পাট দিয়ে তারা প্রায় ৪০/৪৫ হাজার টাকার পণ্য তৈরি করবে এবং আমিই টাকা দিয়ে কিনে বিভিন্ন দেশে সোনালী আঁশ পাট পণ্যের  চাহিদা পূরণ করব। উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমিন তার পাটজাত পণ্য ২৭ টি দেশে রপ্তানি করেন। নারীদের জীবন মানোন্নয়নে উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমিন সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং তৎপর থাকেন সবসময়।

কে.এম. সুলতান
সিনিয়র এসএমই প্রতিনিধি, গৌরনদী, বরিশাল 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here