‘মানুষ সামাজিক জীব’। তাই চাইলেই সমাজের কোন অসঙ্গতি দেখলেও আমরা পারিনা এ সমাজ থেকে আলাদা থাকতে। এই সমাজের ভালো-মন্দ দিক গুলো মেনে নিয়েই আমাদের বসবাস করতে হয়। কখনও কাওকে এগিয়ে আসতে হয় সমাজের হাল ধরতে। কেউ অনেক ধনী, কেউ খেতে পায়না তাদের মাঝেও একটু সমতা বিধানের চেষ্টা করতে হয়। নিতে হয় নিজ উদ্যোগ সমাজকে সেই অসামঞ্জস্যতার হাত থেকে বাঁচাতে। সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণে তেমন-ই এক নিবেদিত প্রাণের নাম রিবানা হক।
শুরুটা ছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। রিবানা তখন আর্কিটেকচারে ৪র্থ বর্ষের স্টুডেন্ট৷ মাত্র অনলাইনের সময় শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ভাবনা আসে অনলাইনেই পিছিয়ে পড়া মেয়েদের নিয়ে কিছু করা যায় কি না। ভাবা মাত্রই ‘বুনন’ নামে একটা পেজ খুলে ফেললেন রিবানা। মূলধন মাত্র ৫০০টাকা আর সাথে ছিল সুবিধাবঞ্চিত ২জন মেয়ে। শুরুতে নিজেও সেলাই করে ডেলিভারী করেছেন। বাসার সবাই রিবানার উদ্যোগের বিপক্ষে ছিলো কিন্তু সেলাই করতে তার যেমন ভাল লাগতো তেমনি অর্থকষ্টে আছেন এমন নারীদের জন্য কিছু করবার ইচ্ছা ছিল প্রকট।
সবার ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’ প্রমাণ করতে অনেক সময় লেগেছিল। সাথে ছিল ঠিকঠাকভাবে স্থাপত্য পড়ালেখা শেষ করা। ক্যারিয়ার শুরুর কথা ভাবলে ‘বুনন’ ছাড়া কিছু ভাবতে ই পারতেন না কারণ এর মাধ্যমে তার সামাজিক উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা সার্থক হবে। সত্যিকারের অসহায় নারীদের সহায়তা করতে পারবেন। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে টুকটুক করে এগিয়ে চলে রিবানা হকের সামাজিক উদ্যোগ। শুরুতে রাগ করলেও আজকে সবাই তাকে উৎসাহ দেয় সামনে এগিয়ে যাবার জন্য।
রিবানা হক এ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘ সবার বিপক্ষে হাঁটার ফলে হয়ত জেদটা কাজে দিয়েছিল প্রবল ভাবে। বাবা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাদের জন্য এখন বুনন এবং স্থাপত্য দুটোই সামলিয়ে উঠতে পেরেছি। আমার সামাজিক উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা সফল হয়েছে। এখন আমাদের বুননে ৪৫ জন অসহায় মেয়ে কাজ করছে পুরো সময়। তাদেরকে ট্রেইনিং করানো হয় যাদের আসলেই টাকার দরকার। যাতে করে মেয়ে গুলো নিজের জন্য কিছু করতে পারে কারো সাহায্য ছাড়া’।
বুননে মূলত হোম ডেকোর প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করা হয় যেমন কুশন, টেবিল ম্যাট, বিছানার চাদর, স্পেস ম্যাট ইত্যাদি। তার সাথে বাচ্চাদের জুতা, জামা, ব্ল্যাংকেট ও তৈরী করা হয়। বুননের লক্ষ্য মেয়েদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা যাতে করে তারা নিজেদের স্কিল দিয়ে নিজের এবং পরিবারের সাহায্য করতে পারে। মেয়েদেরকে শুরুতে ১ মাস ট্রেনিং করানো হয় তারপর তারা কাজ শুরু করে। সুতা, কাঁটা সব বুনন সরবরাহ করে। তারা শুধু হাতের কাজ গুলো করে।
উদ্যোক্তা বার্তাকে রিবানা হক আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আগামীতে বুনন দেশের বাইরে রেগুলার প্রোডাক্ট পাঠাবে, যাতে করে আমাদের সাথে এক থেকে দু হাজার মেয়ে কাজ করতে পারে। ৫বছরের এই সময়টুকু আমার জীবনের অনেক সুন্দর চলেছে। স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশের মেয়েরা স্বাবলম্বী হবে আরও অনেক বেশী। আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক খুশি বুনন পরিবার নিয়ে। সবার অনুপ্রেরনায় এখন বুনন দিয়ে আমি ভবিষ্যত দেখি। দোয়া রাখবেন সবাই।
সামাজিক এই উদ্যোগ গুলোকে সফল করার জন্য সম্প্রতি ওয়াই গ্যাপের (Y-gap) এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সারাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করা হাজার হাজার প্রতিযোগিদের মধ্যে সামাজিক উদ্যোক্তা রিবানা হক প্রথম ১২তে স্থান করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের সামাজিক উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিতে এবং তাদেরকে এগিয়ে নিতে ওয়াই গ্যাপ (ygap) কাজ করে চলেছে ২০১৬ সাল থেকে। এ পর্যন্ত তারা প্রায় ৭৫ জন সামাজিক উদ্যোক্তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিপ্লব আহসান
স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা