কে. এম. হাবিব উল্লাহ, চেয়ারম্যান এসএমই ফাউন্ডেশন

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা কর্তৃক উৎপাদিত পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিক্রয় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাজার সম্প্রসারণ এসএমই’দের পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন যোগাযোগ এবং সেতুবন্ধন তৈরিতে সহায়তা পাশাপাশি ভোক্তা ও উদ্যোক্তাদের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক স্থাপন পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভোক্তাসহ বিভিন্ন মহলে সৃজনশীল মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের উদ্দেশ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজন করে জাতীয় মেলার।
এসএমই ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই যৌথ ভাবে আয়োজন করেছিলেন ৬ষ্ঠ জাতীয় এসএমই মেলা যা চলেছিল গত বছরের এপ্রিলের চার থেকে আট তারিখ পর্যন্ত। মেলা উদ্বোধন করেছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুষ্ঠানটি সেই সময় শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমুর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন কে.এম হাবিব উল্লাহ, শিল্প সচিব মোঃ আব্দুল্লাহ এফবিসিসিআই এর সভাপতি শফিকুল ইসলাম মহিউদ্দিন সহ সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম প্রমূখ।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক- সফিকুল ইসলাম

এসএমই মেলায় গত বছর ২৭৪জন উদ্যোক্তা এবং উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তারা ২৯২টি স্টলে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করেন, সারাবছর উদ্যোক্তারা অপেক্ষা করেন যে মেলাটির জন্য এবং তাদের চোখে স্বপ্ন ভাসে যে সময়টির জন্য তা হচ্ছে জাতীয় এসএমই মেলা।
জাতীয় এসএমই মেলার ৬ষ্ঠ বারের যে আয়োজন করা হয়েছিলো সেখানে ১৮৩ জন নারী উদ্যোক্তা ছিলেন এবং ৬৮.২ শতাংশই ছিলো নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ এবং তাদের তৈরি পণ্যের শো-কেস।
গত বছর ৬ষ্ঠ এসএমই মেলা চলেছিলো ৫ দিনব্যাপী। মেলায় উদ্যোক্তার তৈরি নানান পণ্যে শো-কেস মেলায় প্রদর্শিত হয় এবং মেলায় বিক্রয় হয়। মেলায় চেনা জানা হয় অসংখ্য উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য তার মধ্যে ছিলো পাটজাত পণ্য, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য সামগ্রী, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, আইটি পণ্য, প্লাস্টিক ও অন্যান্য সিনথেটিকস হস্তশিল্প, ডিজাইন ও ফ্যাশন ওয়্যারসহ অন্যান্য মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্বদেশী পণ্য।
ভীষণ আলোড়ন সৃষ্টি করে ক্রেতাদের মাঝে প্রদর্শিত হয় পণ্য এবং বিক্রয় হয় ৬ষ্ঠ জাতীয় এসএমই মেলায়।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেশের সামগ্রিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান ও অংশগ্রহণে স্বীকৃতি হিসেবে এসএমই ফাউন্ডেশন ৫ জন এসএমই উদ্যোক্তাকে পুরস্কৃত করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ষসেরা উদ্যোক্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। গতবছর বিজয়ীরা যারা ছিলেন তারা হচ্ছেন, বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তা নারী- সাহিদা পারভীন, বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নারী- মাকসুদা হাসনাত, বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরুষ- মোঃ শাহাবুদ্দিন, বর্ষসেরা মাঝারি উদ্যোক্তা পুরুষ- মোহাম্মদ গাজী তৌহিদুর রহমান ও এ.কে.এম ফাহিম মাশরুর। পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট সম্মাননা ও নগদ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়। সারাবছরের প্রাপ্তির প্রত্যাশা এবং এগিয়ে যাওয়ার যে অনুপ্রেরণা সেই অনুপ্রেরণায় ছিলো ৬ষ্ঠ জাতীয় এসএমই মেলা।
মেলা চলাকালীন সবগুলো দিন জুড়ে থাকে নানান বিশেষ কার্যক্রম। এতে থাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এসএমই ব্যক্তিত্ববর্গ এবং উদ্যোক্তাদের নিয়ে যারা কাজ করছেন সেই সকল ব্যক্তিত্ববর্গ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ, মতবিনিময়, এবং নানান রকম কর্মশালা।
এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৬-২২ মার্চ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে।

৭ম জাতীয় এসএমই মেলা সম্পর্কে এসএমই ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, “এবারের মেলায় আমরা যে সব পণ্যের সম্ভার সাজিয়েছি সেগুলো হলো- লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেক্ট্রনিকস পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, আইটি এবং সেবামূলক পণ্য, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্য, হারবাল পণ্য, হ্যান্ডিক্রাফটস, এবং ফ্যাশন ডিজাইনের নানা রকম পণ্য এবং পণ্যের সমাহার। এই সকল পণ্যগুলোর জন্য যখন আমরা উদ্যোক্তা বাছাই করি তখন জাতীয় পর্যায়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এবং সারাদেশব্যাপী, বিসিক, নাসিব বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যাংক এবং জেলা এসোসিয়েশন রয়েছে, নারী উদ্যোক্তা এসোসিয়েশন রয়েছে, জেলা চেম্বার রয়েছে তাদের সবাই কে পত্র প্রদানের মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দেই যে তাদের সদস্য উদ্যোক্তা যারা আছে তারা যেন এই মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এই মেলার মাধ্যমে তারা তাদের নিজেদের যে ব্যবসায়িক অবস্থান সেই অবস্থানকে বুঝতে পারে কোথায় আছে, তার কোন দিকে যেতে হবে। সুতরাং আমরা মনে করি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আমরা সারা বছরব্যাপী যে কাজ গুলো করছি তার একটি রেজাল্ট কিন্তু এই মেলা”।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর-এসএম শাহীন আনোয়ার

এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ নাজিম আহসান সাত্তার এই মেলা নিয়ে বলেন, “এই মেলাটা উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক জরুরী, সারাবছর উদ্যোক্তারা এই মেলাটার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। কারণ এই মেলার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। নতুন নতুন ক্রেতা খুঁজতে পারে এবং সাথে সাথে তাদের পণ্যগুলোর নতুন অর্ডার পায়। পাশাপাশি উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের সাথে অন্য পণ্যের গুণগত মানের পার্থক্যটা বুঝতে পারে। ক্রেতাদের চাহিদা, ক্রেতারা কি ধরণের পণ্য চায় সেগুলো সম্পর্কে উদ্যোক্তারা ধারণা পায়। এ থেকে উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাসটা বাড়ে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার- মোঃ নাজিম আহসান সাত্তার

এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার ফারজানা খান মেলা সম্পর্কে বলেন, ঢাকার বাইরে যে ২৩ টি জেলাতে মেলা হচ্ছে প্রতিটাতে একটি করে সেমিনারের আয়োজন করছি। যাতে দর্শনার্থী আসছে, মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা আসছেন এবং সম্মানিত বিভিন্ন রিসোর্স পার্সনরা আসছেন এবং সবাই সবার মতবিনিময় করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেমিনার হচ্ছে, এতে করে আমরা দিকনির্দেশনা পাচ্ছি কিভাবে আমরা এসএমই উন্নয়নে আরও এগিয়ে যাব। এর বাইরেও আমরা যে জাতীয় এসএমই মেলাটি করতে যাচ্ছি ১৬ তারিখ থেকে বৃহৎ পরিসরে সেই মেলাতে আমরা সর্বমোট ৪টি সেমিনার করার প্রস্তুতি নিয়েছি। এই সেমিনার গুলো আধাবেলা করে হবে এবং এখানে আমাদের এসএমই ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন উইং, ক্রেডিট হোলসেল উন্নয়ন উইং এবং আমাদের আইসিটি এবং প্রযুক্তি অর্থাৎ টেকনোলোজি ডেভেলপমেন্ট উইং থেকে আমরা ৪টি সেমিনারের আয়োজন করবো। শুধু পণ্য বেচা কেনা না, এই সেমিনারের মাধ্যমে জ্ঞান আহরণসহ শুরু করে আমরা যাতে আরও এগিয়ে যেতে পারি সেই ব্যাপারে আমরা এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে সহায়তা করতে পারবো।

এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার- ফারজানা খান

এসএমই ফাউন্ডেশনের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার ফাহিম বিন আসমত ৭ম জাতীয় এসএমই মেলা সম্পর্কে বলেন, ঢাকার বাইরে প্রায় ৩০ টি জেলা থেকে এসএমই উদ্যোক্তার এই মেলায় আসছে। আর এই মেলার আরও উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো শুধুমাত্র দেশীয় পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের সুযোগ পাবে। আমরা দেশীয় পণ্যটাকেই প্রমোট করার চেষ্টা করি। এই মেলাতে আমরা ক্লাস্টার শিল্পকে প্রাধান্য দিয়েছি। প্রায় ১০টির বেশি ক্লাস্টার এই মেলাতে আমরা অন্তর্ভূক্ত করেছি। তার মধ্যে জামদানি ক্লাস্টার, চামড়াজাত পণ্য, শীতল পাটি, ক্রিকেট ব্যাট, জামালপুরের হ্যান্ডিক্রাফট, নকশি কাঁথা, শতরঞ্জি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্লাস্টারের পণ্য এখানে আছে। তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাকে আমরা এখানে নিয়ে এসেছি।

এসএমই ফাউন্ডেশনের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার -ফাহিম বিন আসমত

অপু মাহফুজঃ সপ্তম জাতীয় এসএমই মেলা সামনে, আজ বাংলাদেশ কতটা আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করছে এই মেলার জন্য?

এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানঃ সমস্ত দেশ থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে সমস্ত উদ্যোক্তাদের আসা এবং এখানে একটা মেলা করা এই উৎসাহটা যেটা বেড়ে গেছে যে পর্যায়ে চলে গেছে তা থেকে নিচের দিকে নেমে আসার আর কোন সুযোগ নেই। আমরা যখন মেলা করি ৬০ টি স্টল ও খুঁজে পেতাম না, মানে জোর করে আনতে হতো। এবার ৬০০ এর উপর দরখাস্ত পরেছি তার থেকে আমরা বাধ্য হয়ে ৩০০ এর বেশী যেতে পারছিনা। কারণ আমাদের জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। এবং এটা একমাত্র উদ্যোক্তাদের দ্বারাই তৈরিকৃত মেলা এখানে বাইরের কোন মাল কিংবা কোন দ্রব্যসামগ্রী সেল হচ্ছে না।

অপু মাহফুজঃ ৮০ লক্ষের ও ওপর এসএমই উদ্যোক্তা আজ বাংলাদেশ, জাতীয় এসএমই মেলা উদ্যোক্তাদের অগ্রযাত্রায় একটি জায়গা, উদ্যোক্তাদের উৎসাহটা এবং উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণাটা কেমন দেখছেন?

এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানঃ নিঃস্বন্দেহে খুবই প্রসংশা করার মত তার কারণ হচ্ছে, এসএমই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি উদ্দেশ্য নিয়ে সেটা হচ্ছে আমার দেশটা ছোট। কিন্তু জনসংখ্যা আমরা বলি ১৭ অথবা ১৮ কোটি। এই এতো মানুষের দেশে আমরা সবাইকে চাকরীজীবি বানাতে পারবোনা, সবাইকে কৃষক বানাতে পারবোনা, সবাইকে শ্রমিক বানাতে পারবোনা। আমরা যদি সমস্ত দেশটাকে আজকে একটা উন্নত রূপ দিতে চাই এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন যে, আমাদের প্রত্যেককে কর্মক্ষম করতে হবে এবং এই কর্মক্ষম করার জন্য যেখানে আমাদের প্রচুর পয়সা নেই। আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে আস্তে আস্তে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে এবং এই উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়টায় এসএমই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে যেহেতু আমরা কাউন্সেলিং থেকে শুরু করে তাদেরকে বাজার পাইয়ে দেওয়া পর্যন্ত কাজ করি। যেখানে প্রথমে ৬টি মেলা হয়েছে, এখন আমরা ২৫টি মেলা করছি আঞ্চলিক আর জাতীয় ভাবে একটা মেলা করছি। এই মেলার মাধ্যমে তারা যে বিনা পুঁজিতে বলা চলে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। এবং বিভিন্ন ফরেনাররা তাদের মালামাল কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য একটা বিরাট পাওনা এবং এভাবেই কিন্তু একসময় জাপান, কোরিয়া, চীন কিংবা মালয়েশিয়া ওদেরকে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারবো। আমাদের এই উদ্যোক্তাদেরকে নিয়ে।

মেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পরা ভিড়

অপু মাহফুজঃ এবারের মেলায় কি কি আয়োজন রয়েছে এবং কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত তার বিস্তৃতি?

এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানঃ আমাদের মেলাটি শুরু হচ্ছে ১৬ তারিখ থেকে এবং চলবে ২২ তারিখ পর্যন্ত চলবে। উদ্বোধন করবেন মাননীয় শিল্প মন্ত্রী মহাদয় এবং প্রতিমন্ত্রী মহাদয় থাকবেন। আমরা মেলাটাকে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন করার জন্য যা যা করণীয় সবগুলি করার চেষ্টা করবো। যেমন সেখানে সাংবাদিকদের বুথ থাকবে। সেখানে ব্লাড ব্যাংক থাকবে, আমাদের ব্যাংক থাকবে। তাদের মাধ্যমে যেমন আমার একটা ব্যাংকের সমস্যা ঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে সেই ব্যাংক সমাধানটা দিয়ে দিতে পারে।
অর্থাৎ উদ্যোক্তা ওরিয়েন্টেড যা যা জিনিস দরকার সেটাকে সুন্দর ভাবে নিয়ে আসার জন্য এবং তাদেরকে সেই সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য আমরা সচেষ্ট।

অপু মাহফুজঃ ৭ম জাতীয় এসএমই মেলায় কেমন মানের উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করছেন?

এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানঃ যেহেতু বাছাই করে আমরা স্টল দিচ্ছি কাজেই নিঃস্বন্দেহে আমরা সেটা চেষ্টা করবো মানটা যেন আপ টু দ্য মার্ক হয় এবং মানটা যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়। সেক্ষেত্রে আমরা বাছাইটা এভাবে করার চেষ্টা করছি যাতে আজকে প্রতিযোগিতা হচ্ছে ভারতের সাথে এবং অন্য দেশের সাথে তাদের যে মানটা সেই মানের চেয়ে আমাদের মান অবশ্যই ওপরে নিয়ে যেতে হবে। তা নাহলে তো আমরা উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারবোনা।

মেলায় সু-সজ্জিত স্টল

অপু মাহফুজঃ জাতীয় এসএমই মেলা পাশাপাশি সারা বাংলাদেশে সারা বছরব্যাপী এসএমই ফাউন্ডেশন কি কি মেলার আয়োজন করে থাকে?

এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানঃ এসএমই ফাউন্ডেশন শুধুমাত্র মেলার জন্য না। এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রথম স্টার্টিং কাজ প্রেরণা যোগানো এবং তার জন্য কাউন্সেলিং করতে হয়। তারপর আমরা বিভিন্ন সেক্টরে ট্রেনিং করাই। এর মাধ্যমে আমরা কিছু উজ্জীবিত এবং উৎসাহিত উদ্যোক্তাদেরকে তৈরি করার চেষ্টা করি। তারপর আমরা তাদেরকে লোন দেয়ার ব্যবস্থা করি। আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে ৮০ কোটি টাকা লোন দেই। আপনি শুনে আনন্দিত হবেন যে ১০০% রিকভারী রেট। এই টাকাটা যখন তারা পায়, তখন আরও বেশি উৎসাহিত হয়। এরপর আমরা চেষ্টা করি যে তাদেরকে যাতে এই জিনিসগুলো বিক্রি করার মার্কেট পায় তাদেরতো অত মূলধন নেই একটা জায়গায় স্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু করবে। সেই জন্যই আমাদের এই মেলার ব্যবস্থা করা যেন সারা বাংলাদেশে তারা তাদের আইটেম গুলো নিয়ে যাবে মেলা করবে, সেখানে বিনা পুঁজিতে বলা চলে যে তাদের দোকান ভাড়া নাই, শুধু ইলেক্ট্রিসিটির খরচ নেয়া হয়, এবং তাতে তারা যে স্টলটা চালাই কিংবা বিক্রি করে সেই বিক্রিতে তারা একটা ভালো পুঁজি পেয়ে যায়। যেটা তাদেরকে আরও উৎসাহিত করে এবং এই জাতীয় মেলায় এসে আমাদের মেলার ধাপগুলো পার হয়ে আসে জাতীয় মেলায় এবং সেখানে আমরা জাতীয় ভাবে ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং মাইক্রো উদ্যোক্তাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করি। একই জিনিস হচ্চে, প্রায়োরিটি দেয়া হচ্ছে অঞ্চলকে। যেমন আমি যদি গোপালগঞ্জের মেলা করি আমরা চেষ্টা করি গোপালগঞ্জের আঁনাচে কাঁনাচে যেসব উদ্যোক্তা রয়েগেছে এবং তারা বেস্ট যে প্রোডাক্ট গুলো করছেন সেটাকে উৎসাহিত করা সেই সঙ্গে আমরা পরবর্তী পর্যায়ে ধারণা পেয়ে যাই কি কি পদক্ষেপ নেয়া দরকার এবং আর কি পদক্ষেপ নিলে আরও উদ্যোক্তা বের হবে।

পাটের তৈরি বর্ণীল সিকা

অপু মাহফুজঃ এবার মেলায় বিশেষ আকর্ষনটি কি রয়েছে?

এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানঃ বিশেষ আকর্ষন হচ্ছে আমরা কিন্তু দরিদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের জন্য এবং তৃতীয় লিঙ্গের জন্য আমরা স্টল বরাদ্দ করেছি এটা অতীতে কোনদিন হয়নি। শুধু তাই নয় আমরা স্টলটি এমন জায়গায় করেছি যেন তারাই প্রথম ক্রেতাদের প্রায়োরিটি পায়। যাতে তারা আরও বেশি উৎসাহিত হয়। আরেকটা যেটা হচ্ছে যে, মাইক্রো, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তা এদের নিয়েই কাজ । এদের প্রত্যেকের মধ্যে থেকে আমরা বাছাই করে প্রতিটা মহিলাদের তিনটা পুরস্কার একটা ক্ষুদ্র, একটা মাঝারি, একটা মাইক্রো ঠিক তেমনই পুরুষদের মধ্যে তিনটি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের মধ্যে বিশেষ একটা। তাদেরকে ১ লক্ষ টাকা পুরস্কার তার সাথে ক্রেস্ট দেওয়া এবং তাদেরকে সম্মানিত করা যাতে তারা উৎসাহিত হয়ে এই সেক্টরে আরও বেশি নিজেদেরকে উৎসাহিত করেন এবং উজ্জীবিত করে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হয়।

উদ্যোক্তার তৈরি চামড়ার পণ্য

অপু মাহফুজঃ এসএমই উদ্যোক্তাদেরকে নিয়ে আজ দূর্বার গতিতে ছুটে চলা একটি দেশ, বাংলাদেশকে আপনি কোথায় দেখেন?

এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানঃ আমার তো মনে হয় আমি যখন চ্যানেল আই এ উদ্যোক্তা সমৃদ্ধির বাংলাদেশ দেখি তখন আমি দেখি আপনারা বিভিন্ন সফল উদ্যোক্তাদের নিয়ে আসছেন তাতে দেখা যাচ্ছে প্রথম তাদের কর্মী সংখ্যা ছিলো ৫ জন এখন তার ৬০ জন কর্মী। প্রথম সে কয়েক লক্ষ টাকার ব্যবসা করে পরে সে কোটি টাকার ব্যবসা করে। তখন তো আমার মন আনন্দে ভরে উঠে। এটাই তো আমরা চাচ্ছি যে আমার দেশের সকল মানুষ কর্মক্ষম হোক, কর্মপ্রেরণা পাক, এবং এক একজন দেশের এক একটা সম্পদ হয়ে গড়ে উঠুক।

উদ্যোক্তার তৈরি পাট পণ্য

অপু মাহফুজঃ তরুণ উদ্যোক্তা এবং উদ্যোক্তাদের সমৃদ্ধির জন্য আপনাদের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানঃ আগে একটা মানুষ যে কষ্টটা করতো তার চেয়ে অনেক বেশি এখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে যাচ্ছে। এই সবকিছুই কিন্তু হচ্ছে একমাত্র নিজেদের মধ্যে সেই উৎসাহ উদ্দীপনা এবং প্রচেষ্টার জন্য। তো আমি দেখতে পাচ্ছি যে আজকে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে। কিন্তু সেই দিন বেশি দূর নয়, যেদিন এই দেশ মধ্যম আয় না এবং দেশ যদি দূর্নীতি মুক্ত কর্মবিমুখ না হয়ে কর্মের মধ্যে আরও বেশি প্রেবেশ করতে পারে তাহলে আমার জাপানে যেতে হবে না। আমার বাংলাদেশই আমার একটি জাপান।

 

 

অপু মাহফুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here