সময় বাঁচাতে এবং ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে বাংলাদেশে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন শপিং। বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইনে পণ্য বিক্রয় তথা ই-কমার্স সেক্টর একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাত। ই-কমার্স ব্যবসায় নতুন উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি রিটেইল ব্যবসায়ীরাও বিক্রয় সেবা শুরু করেছেন।
অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের প্রধান এবং প্রাথমিক মাধ্যম হলো নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট, যাতে হবে নিজস্ব ব্র্যান্ডিং এবং ব্যবসার সবকিছু থাকবে নিজের নিয়ন্ত্রণে।
তবে ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানানো, রক্ষণাবেক্ষন এবং পরিচালনার কাজটি বেশ জটিল, সময় সাপেক্ষ্য এবং ব্যয়বহুল। কারণ এর সাথে জড়িত আছে অনেকগুলো উপাদান যেমন ডোমেইন, হোস্টিং, সাইট ডেভেলপমেন্ট, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, পেমেন্ট গেইটওয়ে, মার্কেটিং ইত্যাদি। তবে এসব উপাদান এক জায়গায় পাওয়া যায় না। ফলে অনলাইন ব্যবসায়ীর প্রযুক্তির বিভিন্ন সেবার জন্য বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয় করতে বিলম্ব এবং অতিরিক্ত এককালীন খরচের সাথে সাথে নিয়মিত পরিচালন ব্যয়ও বাড়ে।
ই-কমার্স ব্যবসার একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ প্রযুক্তি। যেকোন অনলাইন উদ্যোক্তাই উপরে উল্লেখিত সমস্যায় পড়েন। কারিগরি জ্ঞান না থাকার কারণে ডেভেলপার এবং বিভিন্ন সার্ভিস প্রোভাইডারের উপরে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা এবং প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনলাইন ব্যবসা করাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।
অনলাইন ব্যবসায়ীদের এই প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে এক অভাবনীয় প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে স্টোরিয়া। এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কোনো ধরণের কারিগরি জ্ঞান ছাড়া ব্যবসায়ী নিজেই নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার সবকিছুই মিলবে এক জায়গায় সবচেয়ে সহজে, কম সময়ে এবং সাশ্রয়ী খরচে।
স্টোরিয়া একটি ক্লাউড বেইজড প্লাটফর্ম যেখানে থাকছে অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার জন্য ডোমেইন, হোস্টিং থেকে শুরু করে আকর্ষণীয় ডিজাইনের ওয়েবসাইট, পণ্য এবং ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, পেমেন্ট গেইটওয়ের সংযুক্তি, মার্কেটিং টুলের সাপোর্টসহ সবকিছুই।
প্লাটফর্মটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি, পরিবর্তন এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন হবে না। ন্যূনতম ইন্টারনেট চালাতে পারলেই যে কেউই প্লাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারবেন।
স্টোরিয়া প্লাটফর্মে আরো থাকছে বিজনেস অ্যানালিটিক্স যা বিক্রেতাকে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। ডেলিভারি পার্টনারের মাধ্যমে বিক্রেতা খুব সহজেই পণ্য ডেলিভারি করতে পারবেন, আর সাশ্রয়ী সাবস্ক্রিপশন মডেলে এককালীন বড় বিনিয়োগের ভার নিতে হয় না, এতে ব্যবসার ঝুঁকিও কমে যায় অনেকগুণ।
www.storrea.com এই ঠিকানায় গিয়ে কাঙ্খিত স্টোরের নাম, বিক্রেতার ইমেইল এবং ফোন নম্বর ব্যবহার করে মিনিটের মধ্যেই খুলে নিতে পারবেন নিজের অনলাইন স্টোর। সাথে সাথে বিক্রেতা পেয়ে যাবেন স্টোর অ্যাডমিন প্যানেল, সেখানে পছন্দমতো ওয়েবসাইট থিম বসিয়ে লোগো, ব্যানারসহ নিজের মতো করে পণ্যের ক্যাটাগরি এবং ইনভেন্টরিসহ পণ্য আপলোড করতে পারবেন। শিপিং এবং পেমেন্ট মেথড কনফিগারেশন করে বিক্রি শুরু করে দিতে পারবেন দ্রুততম সময়ে।
স্টোরিয়া প্লাটফর্মে পাওয়া যাবে আনলিমিটেড ব্যান্ডউডথের ফ্রি অ্যামাজন ক্লাউড হোস্টিং। স্টোরিয়ার থিম পুল থেকে যেকোন থিম বেছে নিতে পারবেন বা চাইলে পছন্দের ডিজাইনের কাস্টম থিমও বানিয়ে নিতে পারবেন। থাকছে সহজ প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, পেইজ ম্যানেজমেন্ট এবং কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট।
ইমেইল এবং এসএমএসের মাধ্যমে অর্ডার নোটিফিকেশন, অর্ডার প্রসেসিং এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম, ইনভয়েস জেনারেশন, লাইভ চ্যাটের মত প্রয়োজনীয় ফিচারগুলোও থাকছে। ইন্টিগ্রেটেড পেমেন্ট গেইটওয়ের মাধ্যমে বিক্রেতা বিকাশ, রকেট সহ যেকোন দেশী বিদেশী কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
এছাড়া স্টোরিয়া প্লাটফর্মে মার্কেটিং টুল হিসেবে অন পেইজ এসইও, ফেসবুক স্টোর অ্যাপ, ডিসকাউন্ট কুপন, প্রোডাক্ট রিভিউ সিস্টেম, নিজস্ব ইমেইল মার্কেটিং অ্যাপ ইত্যাদি আছে।
ভিজিটর রিপোর্ট, সেলস রিপোর্ট, ট্রানজেকশন রিপোর্ট, গুগল অ্যানালাইটিক্স ইত্যাদি ব্যবহার করে বিক্রেতা অনায়াসে ব্যবসার গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারবেন।
দেশের চার তরুণের স্বপ্ন ‘স্টোরিয়া’ অফিসিয়ালি যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে। অনলাইন ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ফ্লেক্সিবল ফিচার এবং প্রাইসিং নিয়ে স্টোরিয়া তিনটি ভিন্ন প্যাকেজ ‘স্বপ্ন’, ‘সাহস’ এবং ‘সফল’ নিয়ে তাদের সার্ভিস পরিচালনা করছে। এছাড়াও অনলাইন ব্যবসার নানা মার্কেটিং কলাকৌশল নিয়ে স্টোরিয়া ব্লগ (blog.storrea.com) চলছে শুরু থেকেই।
অনলাইন বিজনেস সলিউশনের পাশাপাশি স্টোরিয়া উদ্যোক্তাদের দিচ্ছে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক কন্টেন্ট, ফেসবুক মার্কেটিং, প্রোডাক্ট ডেলিভারির মত প্রয়োজনীয় সেবাগুলোও।
বর্তমানে স্টোরিয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করছে প্রায় দেড়শ প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে রয়েছে বেশকিছু স্বনামধণ্য অনলাইন ব্র্যান্ডও।
স্টোরিয়ার সার্ভিস প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আল আরমান বলেন, “প্রযুক্তিগত দিক থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্টোরিয়া নতুন একটি কনসেপ্ট, যেটি SAAS (Software as a Service) নামে পরিচিত। বাংলাদেশে ই-কমার্স সলিউশনের এধরনের সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতির প্রচলন নেই। দেশে সাধারণত বেশিরভাগ ওপেন সোর্স সিএমএস ব্যবহার হয়ে থাকে, তবে এগুলোর কাস্টমাইজেশন এবং মেইন্টেনেন্স তুলনামূলক জটিল, টেকনিক্যাল এবং ব্যয় সাপেক্ষ। আর প্রয়োজনীয় সব ধরণের সেবা এক জায়গায় পাওয়াও যায় না। অপরদিকে স্টোরিয়ার মত প্লাটফর্মগুলো অনেক বেশি ইউজার ফ্রেন্ডলি। আর সবচেয়ে বড় কথা এটি ই-কমার্স ব্যবসার জন্য একটি পরিপূর্ণ ম্যানেজড সার্ভিস, টেকনিক্যাল কোনকিছু নিয়ে ব্যবসায়ীর চিন্তা করতে হয় না। বিশ্বে এধরণের ই-কমার্স প্লাটফর্মের কার্যকারিতা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে। আমরা স্টোরিয়া প্লাটফর্মকে দেশীয় উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করেছি। ই-কমার্সের জন্য দেশীয় প্রয়োজনীয় সার্ভিসগুলোকে প্লাটফর্মে ইন্টিগ্রেট করেছি, পার্টনারশিপের মাধ্যমে সার্ভিসে বৈচিত্র্যতা এনেছি। পাশাপাশি নিত্যনতুন বিভিন্ন উপযোগী ফিচারের মাধ্যমে প্লাটফর্মটিকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রযুক্তির ব্যবহারে বেশিরভাগ সময়ই পিছিয়ে থাকে, কিন্তু বাংলাদেশের তরুণদের প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর সেই মেধা, দক্ষতা এবং উদ্যম আছে যা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। বাংলাদেশের অনলাইন ব্যবসায়ীদের প্রযুক্তি সংক্রান্ত যেকোন সেবা নিশ্চিত করতে চায় স্টোরিয়া। স্বপ্ন তাদের আরো বড়।
প্লাটফর্মটিকে সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে গিয়ে আগামী বছরের মধ্যে দেশের বাইরেও এই সেবা বিস্তৃতির ব্যাপারে স্টোরিয়ার উদ্যোক্তাগণ আশা প্রকাশ করেন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তাবার্তা