নিজে কিছু একটা করার দৃঢ় প্রত্যয় ছিল ছোটবেলা থেকেই। স্থানীয় একজন বিউটিশিয়ানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পরিসরে পার্লারের কাজ করতেন আইরিন। কিছুদিন পর সে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে অনলাইনে রিসেলার হিসেবে কাজ শুরু। ২০২০ এ উইমেন্স অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) গ্রুপের সন্ধান পান এই উদ্যোক্তা। সেখান থেকেই জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। গ্রুপটিতে লক্ষ্য করেন সকলে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। তখন তিনি ভাবলেন ‘আমি কেন নই!’ এরপর বুটিক আইটেম নিয়ে যাত্রা। ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় সম্প্রতি তিনি আয়াত বুটিকস নামে নিজ এলাকায় একটি শো-রুম চালু করেছেন।
বুটিকস এর পাশাপাশি অন্যরকম কিছু নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থেকে ২০২১ এ উই গ্রুপে কোরবানির পশু নিয়ে কাজের সিদ্ধান্ত নেন। পোস্ট দেওয়ার পরপরই ক্রেতারা নক করতে শুরু করেন। উই গ্রুপের মাধ্যমে প্রথম বছরেই ২১ লাখ টাকার গরু এবং ছাগল বিক্রি করেছিলেন উদ্যোক্তা আইরিন আক্তার।
এ বছর কোরবানির ঈদের প্রায় দেড়মাস আগ থেকেই গরুর অর্ডার আসতে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩টি গরুর অর্ডার কনফার্ম করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতারা। এ বছর ৭০টির বেশি গরু-ছাগল বিক্রির আশা করছেন তিনি।

গরু-ছাগল সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি বলেন, নাটোরের গ্রামে-গ্রামে যাওয়ার সময় আমার স্বামীও আমার সাথে যায়। সেখানে অনেক পরিবার আছে যারা স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গরু-ছাগল লালন-পালন করেন। তাদের থেকে আমরা গরু-ছাগল সংগ্রহ করি। আমাদের প্রতিটি গরুই দেশীয়। এখানে খামারের গরু নেই, সব বাড়িতে পালা। তাই ইঞ্জেকশন পুশ করে গরু মোটাতাজাকরণের কোন ভয় এখানে থাকছে না। গরুগুলোকে গ্রামের মাঠে ঘাটে হওয়া ঘাস, পাতা, খড় ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। গরু, ছাগল সংগ্রহের পর তা ট্রাকে করে ক্রেতার বাসায় পৌঁছানো হয়। এ কাজে আমাকে এবং আমার স্বামীকে দু’জন সহযোদ্ধা সহযোগিতা করেন।
তিনি বলেন: এতোদিন আমি উই গ্রুপের মাধ্যমেই গরুছাগল বিক্রয় করেছি। আমার নিজস্ব কোন পেজ ছিল না, সকলের চাওয়ায় চার পাঁচদিন আগে আয়াত এগ্রো ফার্ম নামে একটি পেজ চালু করেছি। উই এর কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। আমার জীবনের পরিবর্তন ঘটিয়েছে উই।

আমাদের সমাজে নারীরা পরিচিত নিয়ম ভেঙে সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখলেও সমালোচনায় পড়তে হয়। উদ্যোক্তা আইরিন আক্তারও প্রথম বছরেই এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, শুনতে হয়েছে ‘অমুকের বউ গরুর ব্যবসা করছে’ এসব কথা। তবে কারও কথায় কখনোই দমে যেতেন না আইরিন। তিনি বিশ্বাস করতেন ‘আমি ভালো কাজ করছি, অনেকেই এটা দেখে খুশি হচ্ছেন, অনেকেই আমার সাফল্য দেখে খুশি হতে পারছেন না, তারাই সমালোচনা করছেন।’
অন্যরা দূর্বল করার চেষ্টা করলেও উদ্যোক্তা আইরিন আক্তারের পরিবার, স্বামী, মা-বোন সকলেই সাহস যুগিয়ে চলেছেন অবিরাম। আগামী বছর নিজস্ব গরুর খামার করার পরিকল্পনা করছেন আইরিন আক্তার।
তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা