পাসকোর্সে পড়াশোনা করবার সময় চাকুরীতে যোগদেন এক তরুণী। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মরত তিনি, অফিস সকাল ১০:০০ টা থেকে সন্ধ্যা ০৬:০০ টা পর্যন্ত। ফ্রন্ট অফিসে একজন কর্মী হিসেবে সারাদিনের ভীষণ কর্মব্যস্ত সময়। সে সময়টিতে কাজ শেষ করবার পর বাসায় ফিরে অলস সময়টিকে টিভি দেখা বা বই পড়া, ঘুমাতে যাওয়ার আগে যে কয়ঘন্টা হাতে সময় পাওয়া যায় এ সময়টিতে গঠনমূলক বা উৎপাদনমুখী করে কিভাবে নিজেকে আরও অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী এবং ব্যস্ত রাখা যায় সে চিন্তাটি তরুণী আলেয়া কে ভাবিয়ে তোলে। ছোট ছোট হাতের কাজ জানতেন নিজে আগে থেকেই। জানতেন নানান পণ্য তৈরি করা, কুশিকাঁটার কাজ, সেলাই এর কাজ, ছোট ছোট করে নানান ম্যাট কিংবা শো-পিস তৈরীর কাজ।
চিত্রঃ উদ্যোক্তা আলেয়া আফরিনের ফেসবুক পেজ
চাকুরীর বেতন থেকে হাতে কিছু টাকা জমেছে। ছোট ছোট হাতের কাজ জানা তরুণ আলেয়া ভাবলেন তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটাল যে অগ্রযাত্রা সে শক্তিটাকেই কাজে লাগাবেন। তৈরী করে ফেললেন একটি ফেসবুক পেজ, “বিবির আয়না”। নিজের ডিজাইনের জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে মাত্র ২৫ হাজার টাকা দিয়ে অর্ডার করলেন ২০টি পণ্য, ছবি তুলে ‘‘বিবির আয়না” ফেসবুক পেজে আপলোড করে সাজালেন এবং যাত্রা শুরু করলেন। ফোন করে বন্ধু বান্ধব, সহকর্মীদের অনুরোধ করতে থাকলেন পেজটিতে লাইক দেয়ার জন্য। নিজের অনলাইনে ফেসবুক পেজে তথা দোকানটিতে ২৫ থেকে ২৬ জনের মত ব্যক্তি লাইক দিলেন। উদ্যোক্তা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন কখন একটি ফোন আসবে। হটলাইন নাম্বারে ক্রেতারা কথা বলবেন পণ্য নিয়ে।
উদ্যোক্তার সফলতার গল্প দেখুন ইউটিউবে-দেখতে ক্লিক করুন
প্রতীক্ষার ৭২ ঘণ্টা শেষে আসলো প্রথম কল। প্রথম কলেই একটি শাড়ী বিক্রি হয়ে গেলো। এরপর একটি সপ্তাহে ৪টি শাড়ী , ৪টি পণ্য “বিবির আয়না” থেকে ক্রেতারা কিনলেন। উদ্যোক্তা কষ্ট করে ডিজাইন পছন্দ করে, নিজের অনলাইন স্টোর বিবির আয়নায় পণ্যের পসার সাজিয়েছেন। ভালো লভ্যাংশ এলো, উৎসাহ বেড়ে গেলো কয়েকগুন বেশি। সারাদিন অফিস সকাল ১০:০০ টা থেকে সন্ধ্যা ০৬:০০ টা, অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে শুরু হয় এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার স্বপ্নের ভূবন সাজানো। বিবির আয়নার নতুন নতুন পন্যের ছবি তোলা, নতুন পণ্যের জন্য নতুন ভাবনা-চিন্তা, ডিজাইন নির্বাচন করা, ডিজাইনের অর্ডার দেয়া, সারাদিনের অফিস শেষ করে কেরানীগঞ্জে নদীর ঐ পাড়ে গিয়ে অথবা নিউমার্কেটে ব্লক, বাটিক, টাইডাই, স্ক্রীনপ্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট, কারচুপীর কাজ করা, কর্মীদের সাথে গিয়ে সব করা শুরু করলেন তরূণী উদ্যোক্তা।
চিত্রঃ উদ্যোক্তা আলেয়া আফরিন পণ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য কুরিয়ার অফিসে
অফিসে সঠিক সময়ে উপস্থিত এবং সঠিক সময়ে প্রস্থান , এবং তার পরে পণ্যের অর্ডার, অনলাইনে পণ্যের পোস্টিং, পণ্য নিয়ে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ, অর্ডার নেয়া পণ্য সঠিক প্যাকিং এবং কুরিয়ার বা ডেলিভারির জন্য নিয়ে যাওয়া-সব কিছুই নিজে একা একা করতে থাকলেন তরুণী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আলেয়া আফরিন। একটি বছরেই নিজেই ফেসবুক পেজে প্রায় ৯০০ পণ্য সঠিক মানে এবং সময়ে ডেলিভারি করতে সক্ষম হলেন আলেয়া আফরিন । একটি ফেসবুক পেজই যেন একটি দোকান। পেজের লাইক হুট করে বাড়তে থাকে ।
চিত্রঃ কর্মব্যস্ত উদ্যোক্তা আলেয়া আফরিন
২০১৬ সাল। কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও মননের সংমিশ্রনের এবং যুগোপযোগী পণ্য উদ্যোক্তার জন্য বহু হাতিয়ার হয়ে দেখা দেয় জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে । ২২০০০ এর উপর লাইক আজ “বিবির আয়না”র পেজে। আলেয়া আফরিন প্রতিদিনই দোকান সাজান। সাজান স্বপ্ন নানান পণ্য। শাড়ী, সালোয়ার কামিজ, পার্টি পোষাক, চাদর, শতরঞ্জী কয়েকটি প্রোডাক্ট প্রায়’শ খানেক পণ্যের অধিকারী আজ এই তরুণ উদ্যোক্তা। স্বপ্ন ভরা চোখ উদ্যোক্তার, একদিন সবাই “বিবির আয়না”চিনবে। অনেক কেনাকাটা করবেন অনলাইনে। শুধুমাত্র অনলাইনে নয় মেলায় বা যে কোন উৎসবেও ছোট্ট করে স্টল সাজান উদ্যোক্তা কারণ ক্রেতারা হাতে তার পণ্যটি নিয়ে গুণগত মান বা দাম সবকিছুই যেন যাচাই করতে পারেন। আজ সবাই অনলাইন এ যে কেনাকাটা করেন, তারই এক বিরাট হাব হতে চান উদ্যোক্তা।