দিন শেষে সবাই শান্তির নীড়ে ফিরে আসতে চান, পছন্দ করেন শান্তিময় পরিবেশ। গ্রাহকদের স্বপ্নের সেই ঠিকানা গড়ে দিতে এখন রয়েছে অসংখ্য আবাসন প্রতিষ্ঠান সকলের কাছে যা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি নামে বেশি পরিচিত। রাজশাহী নগরীতেও এখন গড়ে উঠেছে অসংখ্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। সিল্কসিটিতে এরকম যে প্রতিষ্ঠানটির কথা প্রথমে মাথায় আসে সেটি ‘আল-আকসা ডেভলপারস প্রা:লি:।’ কোয়ালিটি বজায় রেখে সঠিক সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করায় বর্তমানে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান কাজীর এই প্রতিষ্ঠানটি।
২০১১ সালে প্রথম প্রজেক্ট ‘এঞ্জেলিকা’ করেছিলেন এই উদ্যোক্তা এবং তার আরেক পার্টনার। সেসময় যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আল-আকসার প্রথম প্রজেক্ট কাঞ্চন টাওয়ারের কাজ শেষে সঠিক সময়ের মধ্যেই হস্তান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত আল-আকসার ১৫ টি প্রজেক্ট। এর মধ্যে চারটি ক্লায়েন্টদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, আটটির কাজ চলমানএবং তিনটি দ্রুতই হস্তান্তর করা হবে।
আল-আকসার ভবনগুলোর নাম দিয়েই এর চরিত্র বোঝা যায়। লক্ষীপুরে ‘বিজয় টাওয়ার’, সিএন্ডবি মোড়ে ‘স্বাধীনতা টাওয়ার’, সিএন্ডবি এন্ড লক্ষীপুরের মাঝে ‘একুশে টাওয়ারের’ কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে বারবার মুক্তিযুদ্ধের কথা, স্বাধীনতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নগরীর জনবহুল এসব এলাকার প্রজেক্টগুলোর নামকরণ হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তা। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের সামনে ‘সুপ্রিম টাওয়ার’, সাহেব বাজারে ব্যবসায়িক বহুতল ভবন ‘গোল্ডেন টাওয়ার’, সাগর পাড়ায় ‘সাগর বিলাস’, পুরাতন পাসপোর্ট অফিসের সামনে ‘অর্কিড’, উপশহর আমবাগানে রয়েছে ‘আদরী’। এই প্রজেক্টগুলো চলমান। এছাড়াও ইতোমধ্যে কাঞ্চন টাওয়ার, ডক্টরস টাওয়ার, সাউথ ব্রিজ এবং দক্ষিণা নিলয় ক্লায়েন্টদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের বিপরীতে ডক্টরস টাওয়ারে অবস্থিত আল-আকসার অফিসে উদ্যোক্তা বার্তার সাথে কথপোকথনে উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান কাজী বলেন: ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শুধু মানুষকে বুঝিয়েই গেছি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কী?’ বর্তমানে অসংখ্য মানুষ রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে ধারণা রাখলেও ২০১১-১২’র দিকে তেমন ধারণা ছিল না। আর রাজশাহীতে ছিল না বললেই চলে। সেসময় মানুষকে বোঝাতেই আমার এত বছর লেগে গেছে। এখন রাজশাহীতেও অনেক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি চলে এসেছে। আমি বেশকিছু বছর হলো এ উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি ‘সুন্দর বাড়ি, সুন্দর জীবন।’ আমার মূল লক্ষ্য ছিলো আমি যেটাই করি না কেন কোয়ালিটি মেইনটেইন করবো। তাই আমার প্রজেক্ট সংখ্যা লক্ষ্য করবেন তুলনামূলক কম। আমি বছরে ১৪টি না, প্রয়োজনে চারটি প্রজেক্ট করবো- চারটিই কোয়ালিটি হবে এবং সঠিক সময়ে দিতে হবে– বরাবর আমি এমন চিন্তাই করেছি এবং সে অনুযায়ী কাজ করেছি।
“ল্যাবরেটরি স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় একবার শরীরচর্চা ক্লাসে আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধার এবং পছন্দের শিক্ষক প্রয়াত নাঈমুল হক স্যার আমাকে কাছে ডেকে বলেছিলেন ‘তুমি যত ভালো কর্মী হবা তত ভালো নেতা হতে পারবা।’ সেদিনের ওই কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এবং সেভাবেই আমি চলার চেষ্টা করি। আমি স্বপ্ন দেখি রাজশাহী এক সময় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। সে অনুযায়ীই আমরা কাজ করছি। দৃষ্টিনন্দন ভবন অবশ্যই পর্যটন শিল্পকে আকৃষ্ট করবে।”
তার প্রতিষ্ঠান আল-আকসার নতুন সংযোজন ইন্টেরিয়র ডিজাইন। সেখানেও সফলতার ছাপ ফেলছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে আল-আকসাতে ২৭ জন স্থায়ী সহযোদ্ধা কাজ করছেন। টিম ওয়ার্কে বিশ্বাসী উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান কাজী নিজে অফিসে না আসলেও সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন হবে এভাবেই তৈরি করেছেন একেকজন সহযোদ্ধাকে। তবুও দৈনিক অফিসে আসা, প্রজেক্ট ভিজিট সবকিছুই করেন সঠিক সময়ে।
এই উদ্যোক্তার জন্ম থেকে বেড়ে উঠা রাজশাহীতেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। চাকরিও করেছেন বেশকিছু বছর। এরপর এগ্রো সেক্টরে চলে আসেন। সেখানেও দক্ষতার ছাপ রেখে এসেছেন এই উদ্যোক্তা।
এছাড়াও তিনি আবাসন ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান ‘রিডা’ তে যুক্ত রয়েছেন। সংগঠনটির মাধ্যমে ভবন নির্মাণ, কেনা-বেচা সংক্রান্ত সকল বিষয়ে সঠিক ধারণা এবং নির্ভয়ে বাড়ির মালিকরা বহুতল ভবন গড়ার ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে পারেন। বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে রাজশাহীর অন্তত ৫০০ বিঘা জমি বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যে তরুণরা আবাসন ব্যবসায় আসতে চান বা অন্য কোন উদ্যোগ নিতে চান– সকলকেই ওই বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে তারপর সে কাজে নামার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এই উদ্যোক্তা।
তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা