জীবনে বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে উল্লেখ করে ‘নিজের বলার মতো একটি গল্প’ প্রতিষ্ঠাতা ও মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ বলেছেন, অন্তত একজন মানুষের জন্য জীবনে বলার মতো কিছু করতে হবে। তাহলেই নিজে বলার মতো গল্প তৈরি হবে।
শনিবার রাজধানীর মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়ামে দেশের ৬৪ জেলা হতে আগত পাঁচ হাজার তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালা প্লার্টফর্ম “নিজের বলার মতো একটি গল্প” এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও উদ্যোক্তা মহাসম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দুই লাখ তরুণ-তরুণীদের উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া প্লার্টফমর্টির প্রতিষ্ঠাতা ও মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ বলেন, আপনার রোজগারে শুধুমাত্র আপনার ও আপনার পরিবারেরই হক নেই, কিছু হক আছে এমন কিছু মানুষের যাদেরকে আপনি চেনেনই না।
কেউ একা বড় হতে পারে না। একা বড় হয়ে কোন গল্প তৈরি হয় না। জীবনে বলার মত একটা গল্প তখনই হয় যখন আপনি অন্তত একজন মানুষের জন্য জীবনে বলার মত কিছু করেছেন।
তিনি বলেন, কাউকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন বা কারো লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন, কারো মাথাগোজার জন্য একটা ঘর তৈরিতে সাহায্য করেছেন বা কাউকে জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে।
আমি গত ৪ বছর যাবত প্রায় ১২০টি নলেজ ইনিশিয়েটিভ প্রোগ্রামে তরুণদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছি এবং ছুটে গিয়েছি ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ও শহরের অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও অডিটোরিয়াম মঞ্চে।
এই পুরো কাজটি করেছি কোন পারিশ্রমিক ছাড়া অর্থাৎ কোন টাকা নেইনি কারো কাছ থেকে যেহেতু এটা আমার একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা। আর এখন “নিজের বলার মতো একটা গল্প” প্লাটফর্ম নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। ইনশাল্লাহ করে যাবো, যতদিন বেঁচে থাকবো।
ইকবাল বাহার বলেন, আমাদের নিজেদের এগিয়ে যাওয়া ছাড়াও আমাদের গ্রামের প্রতি, আমাদের সমাজের প্রতি ও আমাদের দেশের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা আছে – এটা আমাদের সবার মাথায় রাখতে হবে।
কাউকে একটা ভালো পরামর্শ দিয়ে বা উপকার করে তার জীবনটা বদলে দিয়েছেন বা কাউকে রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন বা কারো জমিতে অন্তত ১ টা গাছ লাগিয়ে উপহার দিয়েছেন যে গাছ একদিন বড় হয়ে তাঁর একটা ঘর বানাতে সাহায্য করবে এটাই নিজের বলার মত একটা গল্প!
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘চাকরি করবো না চাকরি দিবো’ এই প্লাটফর্মে উদ্যোক্তাদের শেখানো হয়। যাতে করে নিজের অবস্থান থেকে কর্মসংস্থান তৈরির চিন্তা ভাবনা জাগতে পারে।
শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনব্যাপী দেশের সেরা স্পিকার ও উদ্যোক্তারা ওয়ার্কশপে অংশ নেন এবং সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠান হয়।
এরআগে সকাল থেকে মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সারাদেশের উদ্যোক্তারা সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধ ভাবে ভেন্যুতে প্রবেশ করেন।
উদ্যোক্তাদের এই মিলনমেলায় প্রতিটি জেলা হতে ৬৪ টি স্টল সহ মোট ১৫০স্টল ছিল উদ্যোক্তাদের। স্টলে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিপণন করে।
“নিজের বলার মতো একটা গল্প” উদ্যোক্তা হবার যাবতীয় প্রশিক্ষন ও মূল্যবোধ সংক্রান্ত অনলাইন কর্মশালার প্লাটফর্ম।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ও ৫০টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী সহ মোট দুই লাখ তরুণ-তরুণীদেরকে ৮টি ব্যাচের মাধ্যমে টানা ৯০ দিন করে বিনামূল্যে অর্থাৎ কোন ফি ছাড়া উদ্যোক্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এই প্লাটফর্ম থেকে। প্রতি সপ্তাহে সারা দেশে ও বিদেশে মিটআপের মধ্য দিয়ে চলছে আর অফলাইন কার্যক্রমও।
ইতিমধ্যে এই প্লাটফর্ম থেকে দুই হাজার জন উদ্যোক্তা হয়েছেন তারমধ্যে ২০০ নারী উদ্যোক্তা। এই অনলাইন প্লাটফর্মে পার্টনার পাবার সুযোগ, ব্যবসা করা, কেনাবেচার সুযোগ, ভলান্টিয়ারিং, সামাজিক কাজ এবং ভালোমানুষি চর্চা সব একসাথে সুযোগ রয়েছে। প্লাটফর্মটির লক্ষ্য আগামী ১ বছরের মধ্যে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা অন্তত পাঁচ হাজার উদ্যোক্তা হওয়ার মধ্য দিয়ে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা