খুন্তি কড়াই আর মসলাপাতি নিয়ে লড়াই আজকাল সবাই পারে, কিন্তু সে লড়াই যদি কোনো ব্যক্তিকে আত্নপ্রত্যয়ী ও আত্ননির্ভরশীল করে তুলতে এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে সেই গল্পটা একটু অভিনব হয়ে দাঁড়ায় সবার সামনে।উদ্যোক্তা কোহিনূর আলমের গল্পটাও ঠিক তেমনই।
রন্ধনশিল্পের মতো সুপ্ত প্রতিভাকে শুধু পরিবারের মাঝে আবদ্ধ না রেখে সেই শিল্পের হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার সাহস করেছেন উদ্যোক্তা কোহিনূর।
প্রথমে বাকি ১০ জন মেয়ের মতোই রান্নার প্রতি ভালোবাসা থেকে মায়ের হাতে রান্না শেখা এবং বিয়ের পর নতুন পরিবার ও প্রিয় মানুষটির মন জয় করে নেওয়া। কিন্তু তার এই সুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিজে কিছু করার বা অন্য কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখলেন তিনি। ইচ্ছে জাগে নিজের একটা রেস্টুরেন্ট খোলার। স্বামী মনসুর আলম তার মনের সুপ্ত ইচ্ছের কথা জানার পর তাকে উদ্যত করেন নিজের শিল্পকে পোক্ত করে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার। তাই প্রথমেই উদ্যোক্তা কোহিনূর প্রশিক্ষণ নেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন নামীদামী রেস্তোরাঁর শেফদের কাছে।
২০০৯ সালে নিজেই বিভিন্ন কুইজিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যেশ্যে ক্লাস নেওয়ার প্রথম উদ্যোগ নেন, সেদিনই তার স্বপ্নের পথে প্রথম পা রাখা। প্রথম ক্লাস নিয়েই অনেক উৎসাহ ও সাড়া পান উদ্যোক্তা কোহিনূর। সেই থেকে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন কুইজিন যেমন মেক্সিকান, প্যাভিলিয়ান, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, কনফেকশনারি, কেইক, ফন্ডেন্ট, ডেজার্ট সহ রকমারি রান্না শেখান তার ক্লাসে।
২০১৩ সালে তিনি তার এই কাজের পরিধি আরো সমৃদ্ধ করতে অনলাইনেও একটি পেইজ খোলেন “এম.এম. কুকিং” নামে। অনলাইন জগৎ থেকেও প্রচুর সাড়া পান রন্ধনশিল্পী কোহিনূর আলম। ২০১৫ সালে ১৫ ই মে তিনি ও তার স্বামী, মনসুর আলম উদ্যোগ নেন “হানি বাইট ” নামে কনফেকশনারি শপ খোলার। সেই দোকানে তার হাতের রকমারি মিষ্টি, বিস্কুট, কেক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্নেকসও রাখা হয়। এছাড়া পাশাপাশি হোম ডেলিভারী ও ক্যাটারিং বিজনেসও চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তার কর্ম উদ্যোগের প্রবল উদ্দীপনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নিজের হাতে রান্না করে মানুষকে খাওয়ানোর ইচ্ছে থেকেই প্রথমটা শুরু, আর যদি পুরো পথচলায় কারো অনুপ্রেরণার কথা বলা হয়, তাহলে অবশ্যই আমার স্বামীর উৎসাহই পুরোটা জুড়ে রয়েছে, নইলে স্বপ্নটা শুধু স্বপ্নই থেকে যেত, বাস্তবায়ন হতোনা।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, “স্বপ্নটা সেই শুরুর দিককার, বাকি আছে রেস্টুরেন্ট করার, আশাকরি সেই কাজও শুরু হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই, এই নিয়ে মন জয় করে নিবো মানুষের।”
সবাই রান্না করতে পারে, কিন্তু অল্পসংখ্যক মানুষ পারে এতে প্রাণ সঞ্চার করতে। আর সেই আশা ও প্রতিভা নিয়ে উদ্যোক্তা কোহিনূর আলমের স্বপ্ন দেখা ও পথচলা। তার এই গল্প শুনে মনে হয়, সংসার, ছেলেমেয়ে এমনকি বয়স বাধা না হয়ে একজন সফল উদ্যোক্তার সাহস ও উদ্দীপনা হতে পারে একটি ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি।
চট্টগ্রাম থেকে উম্মে রোকাইয়া প্রিমা
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা