১৯৯৩ সাল। মাত্র ১৬ বছর বয়স। কয়েকজন পরিচিত মানুষের দোকানে কিছু রিজেক্ট কাপড় পড়ে থাকতে দেখেন এক তরুণ। সেটি দেখে তার মাথায় একটি চিন্তা আসলো, তিনি ভাবলেন এই কাপড়গুলো যদি কম দামে বিক্রি করা যায় তবে সেখান থেকে কিছু টাকা উর্পাজন করা যাবে। বলছিলাম রাজশাহীর সফল উদ্যোক্তা আরিফ আল মাসুদ ফারুকীর কথা। আর্থিক অনটনে পারিবারিক অবস্থা যখন খুবই শোচনীয় তখন দিশেহারা তরুণ মাত্র ১৪ দিনের জন্য একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসায়ের যাত্রা শুরু করেন। তার সেই ভাবনার কথা তিনি কয়েকজন পরিচিত দোকানদারকে জানান, তারা তার সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং তাকে বিনা টাকায় সব রিজেক্ট কাপড় পাশাপাশি কিছু নতুন কাপড় দিয়ে দেন। তিনি রাজশাহীর সাহেব বাজারে মাত্র ১৪ দিনের জন্য একটি দোকান ভাড়া নেন । তারপর সেই দোকানে রিজেক্ট কাপড় এবং নতুন কাপড় বিক্রি করা শুরু করেন।
তিনি ১৯৯৩ সালে এস. এস. সি পরীক্ষায় ১ম বিভাগ অর্জন করেন। মাত্র ১৪ দিনের সেই ব্যবসায় তিনি ২৮ হাজার টাকা লাভ করেন। সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন স্কুল থেকে বার্ষিক পরীক্ষার বাদ পড়া খাতা কিনে বাজারে বিক্রি করে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। ১৯৯৪ সালে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মাত্র ৩ জন কর্মী নিয়ে রাজশাহীর আর. ডি. মার্কেটে ফয়সল গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন। প্রায় ৫ বছর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করার পর ২০০০ সালে তিনি ১৫ টি মেশিন কিনেন। সেখানে ১৮ জন কর্মী নিয়োগ দেন। সেই মেশিনগুলোতে বিভিন্ন ডিজাইনের শার্ট তেরি করে সেগুলো বিভিন্ন থানায় হোল সেল দিতে থাকেন। ২০০৪ সালে এসে তিনি ব্যবসায় লোকসানের সম্মুখীন হয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হন। ২০০৫ সালে রাজশাহীর ছোট বনগ্রাম এলাকায় ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মুরগীর ফার্ম কিনেন। সেই ব্যবসাতেও উন্নতি হলোনা। এক বছরের মধ্যে সেই ব্যবসাটিও বন্ধ করতে বাধ্য হন। হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর চিন্তা করলেন এমন একটি ব্যবসা করতে হবে যেটি খুব একটা প্রচলিত নয়। ২০০৬ সালে বন্ধুর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে আর. ডি. এ. মার্কেটে আবার একটি দোকান নিলেন। সেখানে বিভিন্ন স্কুলের পোশাক তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করলেন। ২০১০ সালে একটি কারখানা নিয়ে সেখানে অক্সফোর্ড শু এবং পাম শু তৈরি করা শুরু করেন। ২০১১ সালে বিসিক এলাকায় একটি জায়গা নিয়ে ২৪ টি পাওয়ার লোম (কাপড় তৈরি মেশিন) নিয়ে আসেন। সেখানে ৫০ জন কর্মী নিয়োগ করেন। রাজশাহীতে কর্মীরা পারদর্শী না হওয়ায় তিনি কারখানাটি কিছু দিনের জন্য বন্ধ করে দেন।
২০১৪ সালে সিরাজগঞ্জে মেশিনগুলো স্থানান্তর করে কাজ শুরু করেন। সিরাজগঞ্জে ফারুকী উইভিং ট্রেডার্স নামে প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে উন্নতমানের সুতি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও স্কুল ড্রেসের কাপড় উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব গাড়িতে সারা দেশে মালামাল ডেলিভারি করা হয়। ২০১৭ সালে রাজশাহী কোর্ট বাইপাস এলাকায় স্কুল সোয়েটার তৈরির কারখানা দেন তিনি। বর্তমানে ফয়সল গার্মেন্টসে উন্নত মানের রকমারী বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পোশাক , জুতা এবং ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং মাত্র তিন জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ২০০ জন কর্মী নিয়ে সফল ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন সফল উদ্যোক্তা আরিফ আল মাসুদ ফারুকী।
রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা