উদ্যোক্তা - ওয়াসিউল হক

ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশন এঞ্জিনিয়রিং ডিপার্ট্মেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব মালায়া, মালয়েশিয়া থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিলেন এক তরুণ, ওয়াসিউল হক।

দেশে ফিরে জব এপ্লাই করে মনঃপুত চাকরী হলোনা । কোনো চাকরী যেনো টানলোনা তরুণ ওয়াসিউলকে আর। ২০১৪ -১৫ সালে ওয়াসিউল দেখলেন বাড়িতে ইলেক্ট্রিসিটি যাওয়া আসা করছে, বা যাকে আমরা সাধারন ভাষায় বলি “কারেন্ট নাই”। কারেন্ট যাওয়া আসা বা ইলেকট্রিসিটি না থাকার সময়টা অন্ধকারে বসে থাকতে ভালো লাগেনি তরুণ ওয়াসিউল এর। অন্ধকারে বসে থাকা নয়। কোনো বয়স্ক মানুষ হোক বা হোক একজন শিশু শহরে কিংবা গ্রামে ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে বা যেখানে ইলেক্ট্রিসিটির পর্যাপ্ত আলো নেই বা চলতি পথে অন্ধকারে যাতে মানুষের চলাফেরার এবং জীবন যাত্রায় কোনো কষ্ট না হয় সে জন্য কিছু করার চিন্তা ভাবিয়ে তুললো ওয়াসিউল হক ভুইয়াকে।

অন্ধকার দূর করতে এবং অন্ধকারে যেন কারো অসুবিধা কিংবা ক্ষতি না হয় সে জন্য শুরু করলেন পড়াশোনা।
১ বছর পড়াশোনা এবং গবেষণা করলেন এই তরুণ উদ্যোক্তা, ম্যাজিক লাইট বা অটোমেটিক চার্জার লাইট তৈরী করে ফেললেন। অটোমেটিক সেন্সর চিপ খুব সহজেই বুঝতে পারে যে ঘরে আলো নেই বা ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে, স্বয়ংক্রিয় ভাবে জ্বলে ওঠে বাতি।

তৈরী হলো ওয়াসিউল এর ম্যাজিক লাইট। “ওহমটেক ইলেকট্রনিক্স “ একটি যুৎসই নাম বেছে নিলেন নিজের উদ্যোগ এর জন্য। এমন নাম বেছে নিলেন কেনো উদ্যোগ এর জন্য? উত্তর দিলেন মৃদু হেসে ওয়াসিউল “ এই নামে সার্চ করলে গুগল এ ওয়াসিউল এর প্রতিষ্ঠানের নাম প্রথমেই আসবে “ এটাই ছিলো লক্ষ্য।

লক্ষ্য সফল হয়েছে। ওয়াসিউল বাণিজ্যিক ভাবে তার উদ্যোগ ম্যাজিক ল্যাম্প এর উৎপাদনে গেলেন ২০১৫ সালে। একই বছরের মে মাসে বাজারে ছাড়লেন পণ্য এই এমএসএমই উদ্যোক্তা।
নিরন্তর চললো পণ্য নিয়ে গবেষণা। অনেক ধরনের মোল্ড, মডেল, সার্কিট ডিজাইনে আনলেন উন্নয়ন ক্রেতাদের ফিডব্যাক অনুসারে।

ওয়ারলেস লাইট তাই বাড়ির যে কোনো স্থানে রাখা সম্ভব এবং পাওয়া সম্ভব অন্ধকারে সয়ংক্রিয়ভাবে লাইট থেকে আলো। ৬ ঘন্টার চার্জে ৪ দিন স্ট্যান্ডবাই মোডে থাকে ওয়াসিউল এর ল্যাম্প এবং ফুল লোডে ৬ ঘন্টা আলো দেয় ম্যাজিক ল্যাম্প, ওয়াসিউল নিশিচত করেছেন ১ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি।

তাহলে চোর ধরবার বাতিটি কোনটি? প্রশ্ন জাগছে মনে?
বলছি, এর পর সেপ্টেম্বর মাসে চার্জার লাইট এর আদলে ওয়াসিউল প্রথম বানালেন হ্যান্ডি সাইজে স্বয়ংক্রিয় লাইট যে লাইট মোশন সেন্সর টাচ পদ্ধতিতে বুঝতে পারে ঘরের মাঝে কিংবা সেন্সর এরিয়ার মাঝে কেউ প্রবেশ করেছে কিংবা আপনি নিজ ঘরে প্রবেশ করেছেন, ব্যাস জ্বলে উঠবে লাইট।

২০১৯ সাল। দেশে এখন বিদ্যুৎ এর ঘাটতি নেই বললেই চলে, দেশ এগিয়েছে বিদ্যুৎ এ সয়ংসম্পুর্ণতার দিকে, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এখন গ্রাম বাংলাতেও। ওয়াসিউল তাই ৩য় ফেজে বানালেন তার নতুন গবেষণালব্ধ জ্ঞান দিয়ে এমন লাইট যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে।
বড় বড় পাঁচতারা হোটেল এ যারা থাকেন এবং সেই হোটেল গুলোতে দেখছেন লবি কিংবা সাইড লবি অথবা রুমের সামনে যে যখন আপনি ঘরে ঢুকলেন তখন লাইট জ্বলে উঠলো, কিংবা হোটেল রুম থেকে বের হলেন – লাইট জ্বলে উঠলো লবিতে, আপনি নেমে গেলেন লিফট দিয়ে বাতি আপনা আপনি নিভে গেলো এমনই কনসেপ্ট দেখে ওয়াসিউল বানালে তার পোর্টেবল চার্জার লাইট।

পাশের বাড়ীর মোবাইল ফোন জানালা দিয়ে চুরি হয়েছে জানলেন ওয়াসিউল, শুনলেন ল্যাপটপ খোয়া গেছে। চোর জানাল দিয়ে চুরি করে নিয়ে গেছে হাতের নাগালে যা যা ছিলো সব, মানিব্যাগ টাও ছড়েনি চোর, এমনকি পরনের পুরোনো গেঞ্জিটাও খুজে পাচ্ছিলেননা ওয়াসিউল এর প্রতিবেশী। ওয়াসিউল অনেক ভাবলেন এবং তার ম্যাজিক লাইট জাম্বোতে এবার যোগ করলেন এলার্ম। জানালার দিকে লাইট তাক করে রেখে ঘুম দিন, লাইট যেদিকে মুখ করে রাখা হবে তার ১২০ ডিগ্রি কৌনিক এলাকায় যা সরল হিসেবে র‍্যাডিয়াস ৮ ফিট হয়, এর মধ্যে কেউ হাত ঢুকিয়ে কিছু নেবার চেষ্টা করলে কিংবা হাত দিয়ে কিছু হাতড়াতে থাকলেই বেজে উঠবে এলার্ম সাথে সাথে জ্বলে উঠবে আলো।

দুই ধরনের বাতি ম্যাজিক লাইট এবং ম্যাজিক লাইট জাম্বো দুই ক্যাটাগরিতে তৈরি করছেন ওয়াসিউল।

তরুণ ওয়াসিউল ইতিমধ্যেই পেয়েছেন সম্মাননা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে আইডিয়া কম্পিটিশনে ।প্রথম ১০ জনের মধ্যে ছিলেন ওয়াসিউল।

তরুণ উদ্যোক্তা ওয়াসিউল স্বপ্ন দেখেন ইলেকট্রনিক্স পণ্যে দেশ সয়ংসম্পুর্ণ, সকল ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট তৈরীতেও সক্ষমতা অর্জন করে বাংলাদেশ হবে স্বনির্ভর।

একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে এ খাতে রাখতে চান নিজের অবদান।

 

মেহরাব হক 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here