রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী শুরু হয়েছে চামড়াজাত শিল্পের প্রদর্শনী। আয়োজকরা বলছে এমন প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তারা বিভিন্ন চামড়ার সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ লাভ করছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন প্রদর্শনীর মাধ্যমে চামড়াজাত পণ্যের গুণগত মান ও চামড়াজাত শিল্পের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে তারা লাভবান হচ্ছেন।
মৃদু শব্দে কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত সারি সারি ছোট-বড় নানা মাপের সেলাইযন্ত্র চলছে। হরেক রকমের নকশার কারুকাজ শেষে চামড়ার ছোট ছোট টুকরো বের হয়ে আসছে। আর পুরো কাজ অবলোকন করছে উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের উৎসুক দৃষ্টি।
চামড়াজাত শিল্পের সব থেকে বড় প্রদর্শনী ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) ২ নং হলে তৃতীয় বারের মতো আয়োজিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার এন্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৯।’
গত ৩০শে অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন করেন এবং ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার মেলার উদ্বোধন করেছেন মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বাংলাদেশে তৃতীয় বারের মতো এ ধরনের আয়োজন বসেছে, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার প্রাঙ্গণে। তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর নাম- ‘লেদারটেক বাংলাদেশ-২০১৯’। প্রদর্শনীতে চামড়াশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র, জুতার সোল, চামড়া, রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে এসেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ, ভারত, চীন, তুরস্ক, ইতালি ও ভিয়েতনামের ৭০ থেকে ৮০ টি স্টল। অবশ্য সাত-আটটি ছাড়া বাকি সব বিদেশী প্রতিষ্ঠানের।
অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার সাদ্দাম হোসেন বলেন, জুতা তৈরী ক্ষেত্রে তিনটি সেকশন থাকে কাটিং মেশিন, সুচিং মেশিন, লাস্টিং মেশিন। আজ দুপুরের পর প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা গেল, দর্শনার্থীরা কেবল আসতে শুরু করেছেন।
তাঁদের বেশির ভাগই আবার সেলাইযন্ত্র বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভিড় করছেন। এমনই একটি হংকং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সি চিয়াং সুইং মেশিন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি চীনের গোল্ডেন হুইল ব্র্যান্ডের জুতা, চামড়ার বেল্ট, মানিব্যাগ ও কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ তৈরির বিভিন্ন ধরনের সেলাই যন্ত্র বিক্রি করছে।
৫০০ থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের এসব যন্ত্রের খোঁজখবর নিতে দেখা গেল বেশ কয়েকজনকে। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন নির্বাহী একজন বাংলাদেশী চামড়াজাত শিল্পের বড় ধরনের সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া শ্রমের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি চীনের অনেক উদ্যোক্তা শিল্পটি থেকে সরে আসছেন। ফলে চীনের বাজার ধরারও সুযোগ আছে।
একজন বিপণন নির্বাহী আরও বলেন, পুরোনো বা নতুন—সব উদ্যোক্তার জন্যই এই প্রদর্শনী অনেক সহযোগিতা করবে। কারণ, দেশি-বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে চামড়াজাত শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে। ফলে ‘লেদারটেক বাংলাদেশ-২০১৯’ এ আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা যাবে।
লেদার দিয়ে এই সুযোগটি কাজে লাগাতে জুতা ও চামড়াজাত পণ্যসামগ্রী তৈরির জন্য আমরা উন্নত মানের চামড়া নিয়ে এসেছি। বিক্রির চেয়ে মূলত উদ্যোক্তাদের এ ধরনের চামড়ার সঙ্গে পরিচিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
জুতার সোল, সোলের উপরের বোর্ড ও চামড়া, বিভিন্ন ধরনের আঠা বা গাম নিয়ে এসেছে এই প্রদর্শনীতে। বাংলাদেশ এ খাতে রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। রপ্তানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারে গুণগত মানের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা মেটাতে তাঁরা উৎপাদিত পণ্যে মূল্য সংযোজন ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণের পরামর্শ দেন।
কোরবান আষাঢ়