ভারতের বারাণসীর রাস্তাঘাটে একজন বাবা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালাতেন। আর রিকশায় প্রত্যেকটি পেডেল মারার সময় স্বপ্ন দেখতেন ছেলে একদিন ভারতীয় প্রশাসনে চাকরি করবে। এই স্বপ্নটা তার পরিশ্রমকে আরো সহজ করে দিত। ”রিকশাওয়ালার ছেলে তো রিকশাওয়ালা হবে” এই প্রথাকে যিনি ভেঙ্গে দিয়েছেন আসুন জানি তার কাহিনীঃ
স্বপ্ন দেখাটা সহজ কিন্তু বাস্তবে রূপ দেওয়া অনেক কঠিন। নারায়ন জয়সওয়াল এবং তাঁর পুত্র গোবিন্দ জয়সওয়াল সেটা জানতেন। স্বল্প আয়ের পরিবারে সাত সদস্য নিয়ে ছোট্ট একটি কামরায় থাকতেন তারা।
গোবিন্দ ছোটবেলা থেকেই দারুণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই নারায়নের পায়ে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি রিকশা চালাতেন এবং রোজগার করা টাকা থেকে কিছু টাকা আলাদা করে রাখতেন সন্তানদের পড়াশোনার জন্য।
গোবিন্দ বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন এবং সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন। ভারতে প্রতি বছর এই পরীক্ষায় ৪০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ৩ লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষা দেয়।
ছেলেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি কোচিং করানোর জন্য নারায়ন তার একমাত্র জমিটি ৪০,০০০ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেন এবং গোবিন্দকে সেই টাকা দিয়ে বলেন ভাল করে পড়াশোনা করতে। নারায়ন তাঁর নিজের পায়ের চিকিৎসা না করিয়ে ছেলেকে সব টাকা দিয়েছিলেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। এই সামান্য টাকা দিয়ে গোবিন্দ তার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করতে পারছিলেন না। তাই তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করাতেন।
২০০৬ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফলাফল দেবার আগে দুশ্চিন্তায় নারায়ন প্রায় দশ দিন ঘুমাতে পারেন নাই। ফলাফল দেওয়ার পর দেখা গেল নির্বাচিত হওয়া ৪৫০ জন প্রার্থীর মধ্যে গোবিন্দ ৪৮ তম স্থান অর্জন করেছেন। এই সময় গোবিন্দ তার বাবার কাছে গিয়ে শুধু একটি কথাই বলেছিলেন, “বাবা আমরা পেরেছি“। গোবিন্দ তার এই পুরো কৃতিত্ব তার বাবা এবং পরিবারকে দেন। যারা তার জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছেন। বর্তমানে গোবিন্দ অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ভারতের দিল্লিতে কর্মরত আছেন। তার বাবার স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে।