ঈমানা জ্যোতি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই কেক তৈরি করতে এবং রান্না করতে ভালোবাসতেন। শুধু কেক তৈরি করতেই না, অলঙ্করণ’র কাজেও ছিলেন ভীষণ পটু। আর সেই পটুতা থেকে নাম দেন ‘আর্টিস্টিক ডাইন’। সবার উৎসাহ আর ভালোবাসায় ২০১৮ সালে শুরু করলেন কেকের ব্যবসা এবং হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা।
পড়াশোনা করেছেন ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ‘ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিং’ বিভাগে। তাই ঈমানা জ্যোতি’র ব্যাংকে চাকরি করাটাই প্রাসঙ্গিক ছিল। কিন্তু না, নিজের পচ্ছন্দের এবং আবেগের জায়গা থেকেই তিনি হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। খুবই সামান্য পুঁজি নিয়ে শুরু করেন এই উদ্যোক্তা। কেকের প্রতি দুর্বলতা থেকেই শুরু করেন। সবাই মিষ্টি কেক তৈরী করেন। কিন্তু ঈমানা জ্যোতি কেক-এ এনেছেন ভিন্নতা, স্পাইসি (ঝাল কেক) তৈরী করেন। অনেকে এটিকে স্যানডুইচ কেকও বলেন। নিজের রেসিপি এবং একদম নিজের মত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে তৈরী করেন। বিভিন্ন ওয়ার্কশপে খাবার পাঠান এবং বিভিন্ন মেলাতে অংশগ্রহণ করেছেন।
শুরুটা একটু কঠিন ছিল বলে জানান এই উদ্যোক্তা। তবে অনলাইন এবং মেলাতে অংশগ্রহণ করার ফলে অনেকটা সহজ হয়েছে তার বাবসা পরিচালনা করা।
উদ্যোক্তা বলেন, মেলায় এসে যারা কেকটা খেয়েছেন তখন বলেছেন, বাহ বেশ ভালো তো পরে তারা আবার তাদের পরিচিতদের পাঠিয়েছেন, ঐটা দেখে অনেক শান্তি লাগতো। মানসিক এক ধরনের শান্তি।
বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ডেলিভারি বাধাটা অনেক বেশি। বেশি অর্ডার নিতে পারি না। মাঝে মাঝে আমাকেই ডেলিভারি করতে হয়। পাঠাও বা উবার অর্ডার নিলে তিনি সাচ্ছন্দ্যে রাজি হবেন কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় যখন কেকের থেকে ডেলিভারি চার্জ বেশি হয়ে যায়।
সেক্ষেত্রে এই ডেলিভারি চার্জের বিষয়টা মাথায় রাখলে তিনি পাঠাও ফুড ও উবার ইটসের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। তাহলে গ্রাহকের চাহিদার পাশাপাশি কাজের পরিমাণটাও বাড়বে।
আনন্দের কথা বলতে গিয়ে বলেন, প্রথম মেলাটা ছিল অনেক আনন্দের কারণ আমি মেলা নিয়ে খুব ভীত ছিলাম। মেলায় খাবার বিক্রি হবে কি হবে না! পরে আমি বিকেলে মেলায় উপস্থিত হয়ে দেখি ২ ঘন্টার মধ্যে সব কেক শেষ হয়ে গিয়েছে। সবাই সামনাসামনি অনেক প্রশংসা করেছিল। তখন আমার সাহস অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে দ্বিধাহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি পক্ষাবলম্বন হিসেবে পেয়েছেন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত সব মানুষকে। নিজে হিমশিম খেলেও অন্যদের সহযোগিতা পেয়েছেন। ক্রেতাদের কাছ থেকে অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। হোমমেড খাবারে এবং কেকের জগতে নতুন নাম ‘আর্টিস্টিক ডাইন‘ বললেও ভুল হবে না। সর্বনিম্ন কেকের মুল্য ৫০০ টাকা এবং কেকের সাইজ বুঝে এক একটার দাম একেক রকম। চাকরি না করে উদ্যোক্তা কেন হয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, নিজে কিছু করবো এবং নিজের একটা পরিচয় তৈরী হবে। আমার কেক খেয়ে মানুষ খুশি হবে এইটা ভাবতেই আমার ভালো লাগতো। আর এই ভালোলাগা থেকেই আমার উদ্যোক্তা হওয়া।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য করে ঈমানা জ্যোতি বলেন, ইচ্ছা শক্তিটাকে কাজে লাগাতে হবে। এবং যে যেই বিষয়ে পারদর্শী সে সেইটা নিয়ে কাজ করলে সফলতা অবশ্যই আসবে। ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে ‘আর্টিস্টিক ডাইন’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট দেওয়ার ইচ্ছা আছে। যেখানে সব খাবার হবে স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুস্বাদু।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না