মাটি দিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস বানাতেন শরিফা ছোট্ট বেলা থেকেই। খেজুর পাতার পাটি, সেলাই, বাঁশের কাজ, পুতির কাজ সবই জানতেন শরিফা। এইচএসসি শেষ করে দক্ষ হাতের কাজে শরিফা জয় করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে।
২০০৭ এর ফেব্রুয়ারিতে রূপচর্চা ও প্রসাধনী সামগ্রীর একটি নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন নার্গিস আক্তার শরিফা। ৩০ জন কর্মী সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায় পা রাখেন উদ্যোক্তা শরিফা। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন এনএস কেমিক্যাল, যা কিনা লুক মি ব্র্যান্ডে প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদন শুরু করলো ব্যাপক ভাবে। ২০টিরও বেশি পণ্য বাজারজাত করণে সক্ষম হলেন নার্গিস আক্তার। নিজে গিয়ে সকল পণ্য বাজারজাত করলেন উদ্যোক্তা। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে সু-প্রতিষ্ঠিত করলেন ব্যবসার জগতে।
২০০৯ সাল। রান্না করতে গিয়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলেন উদ্যোক্তা শরিফা। অগ্নিকাণ্ডে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গেল। ডাক্তাররা আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন, কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে জীবন যুদ্ধে জয়ী যে উদ্যোক্তা সে তো সহজে হাল ছেড়ে দেবার প্রাণ নয়, হাল ছাড়বার পাত্রীও নয়। ভীষণ আত্মবলে বলীয়ান, দৃঢ় ইস্পাত সমান মনোবল নিয়ে জীবন যুদ্ধ জয় করলেন উদ্যোক্তা শরিফা। দুই বছর বিছানায় থেকেও এতটুকু মনোবল হারাননি শরিফা। স্বামী আব্দুর রহিম পরম মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন উদ্যোক্তার সাথে সেই পুরোটা সময়।
দীর্ঘদিন উদ্যোক্তা সরাসরি তত্ত্বাবধানে না থাকায় একটা সময় ব্যবসা নুইয়ে পড়ে। ঠিক সে সময় “ভোরের আলো মহিলা সমাজ কল্যাণ সংস্থা” যার মাধ্যমে একটি সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে নিজের ঘর থেকে আবারও উদ্যোগ শুরু শরিফার। শত শত নারীকে কাজ করবার অনুপ্রেরণা দিতে পারে এমন এক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা শরিফা। আজ তিনি নিজেই ৫০ জন সদস্যকে নিয়ে নিয়মিত ভোরের আলো মহিলা সমাজ কল্যাণ সংস্থায় প্রতিবন্ধকতা জয় করছেন।
একটি কাগজের ঠোঙা, মাটির তৈরি দৃষ্টি নন্দন শো-পিস, বাচ্চাদের পোশাক, পুতি-পাথরের পণ্য, নকশি কাঁথা, বিছানার চাদর, কুশন-কাভার, গায়ের চাদর, পুতুল এমন শত শত পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তা শরিফা। কাজ শেখাচ্ছেন নতুন সদস্যদের, তৈরি করছেন নতুন কর্মসংস্থান।
কেউ ফুল তুলছেন, কেউ একটা হাতের কাজ করছেন, এভাবেই এক এক করে নতুন সদস্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এই সংস্থায়।
ভোরের আলোর সদস্যরা আজ নিজেদের তোলা মাসিক চাঁদায় নিজেদেরকে করে তুলেছেন স্বাবলম্বী। নতুন সদস্যরা আজ ছোট্ট ছোট্ট করে নিজেদের কাজ সম্পাদন করছেন। কেউবা বানাচ্ছেন কুমড়ো বড়ি, কেউ করছেন হাতের কাজ, কেউ কেউ সামান্য পুঁজি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন স্বপ্ন পূরণে, কর্ম-শিক্ষণে, স্বপ্ন অর্জনে। ভোরের আলোয় যেন প্রতিদিন একটি আশার সূর্য ওঠে মনে, প্রতিবন্ধকতা পেড়িয়ে, সীমানা ছাড়িয়ে স্বপ্ন দেখবার, স্বপ্ন দেখাবার।
স্বপ্ন দেখাবার ছোট্ট একটি আশার স্থল যেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা জয়ী উদ্যোক্তা নার্গিস আক্তার শরিফা।কর্ম-জীবনে পুরস্কার মিলেছে, মিলেছে অনুপ্রেরণা, প্রতিবন্ধকতা জয় করা জয়ী উদ্যোক্তা শরিফার।
আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল প্রতিবন্ধী নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পুরস্কার মিলেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পেয়েছেন নতুন উদ্যোমে জীবন পরিচালনার জন্য রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ ‘জয়িতা’ পুরস্কার।
অপু মাহফুজ