চাকরিই করতে হবে মগজ থেকে ঝেড়ে ফেলুন: রিড হফম্যান

0

‘মানুষ যখন গুহায় বাস করত, তখন তারা সবাই ছিল এক অর্থে উদ্যোক্তা।কারণ তারা নিজেরাই খাবার সংগ্রহ করত, নিজেদের কাজের সংস্থানও করত। কিন্তু সময় যত পেরিয়েছে, আমরা আমাদের উদ্যোক্তাসুলভ মনোভাবকে তত দমিয়ে ফেলেছি। আমরা উদ্যোক্তা থেকে পরিণত হয়েছি শ্রমিকে। আমাদের মগজে পাকাপাকিভাবে এই ধারণা ঢুকে গিয়েছে যে আমাদের চাকরি করতে হবে। এই ধারনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।’

‘উদ্যোক্তারা হলো সেসব হাতেগোনা কিছু মানুষ যারা সমাজের প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নিজেদের পথটা নিজেরাই সৃষ্টি করে নেয়। তারা নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পাশাপাশি অন্যদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেন।’

রিড হফম্যান উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য এসব কথা বলেছিলেন যা আজ হাজারো ব্যক্তিকে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করে।সবাই যাকে একজন উদ্যোক্তা ও লিংকডইনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চিনেন।
মানুষ ছোট থেকেই একটি স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই স্বপ্নের রং বদলায়। তবে কিছু মানুষ থেকে যায়, তাদের স্বপ্ন পূরণের আশায়।আর সেই স্বপ্নকে আকড়ে ধরে থাকা মানুষগুলোর মধ্য একজন হচ্ছেন রিড হফম্যান।আসুন জেনে নেই সেই স্বপ্নবাজ মানুষটার কথা?

রিড হফম্যান ১৯৬৭ ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন।ছোটবেলা থেকেই দারুন মেধাবী আর কম্পিউটারের মধ্য আলাদা জগৎ তৈরী করে নিয়েছিলেন তিনি। ছাত্রজীবনে সবাই যেখানে স্বপ্ন দেখে, ভালো পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করা। কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখতেন কিভাবে তিনি বৃহত্তর উন্নতির মধ্য দিয়ে জনগণের উন্নয়ন করবেন?

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কিন্তু এত বছর এই পড়াশোনার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরও স্কুল জীবনে দেখা স্বপ্নটি তিনি ভুলতে পারেননি। প্রথমে চিন্তুা করেছিলেন একজন বড় শিক্ষক হওয়ার কিন্তু পরবর্তীতে দেখলেন যে শিক্ষকদের লেখা বই খুব কম পাঠকই পড়ে। কিন্তু তিনি এমন কিছু চেয়েছিলেন যেটি জনগণের মধ্য প্রভাব বা চাহিদার সৃষ্টি করবে। এই বইয়ের লেখালেখির মধ্য দিয়েই তার মাথায় উদ্যক্তা হওয়ার চিন্তা আসে। কিন্তু উদ্যক্তা কিভাবে হওয়া যাবে এর জন্য তো দরকার অভিজ্ঞতা?
এই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তিনি ১৯৯৪ সালে অ্যাপল কোম্পানিতে ডিজাইনার হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ই-ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল, গ্লোবাল এক্সেস সহকারী এবং অন্যান্য কৌশলগত প্রকল্প নিয়ে কাজ করতেন। সেখান দুবছর কাজ করার পর ১৯৯৬ সালে ফুজিৎসু সফটওয়্যার কর্পোরেশনে যোগদান করেন এবং সেখানে দেড় বছরের মত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উন্নয়ন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৭ সালে তিনি অনলাইনে একটি ডেটিং সাইট চালু করেছিলেন। সাইটটি জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।তখন তিনি একটি জিনিস শিখেছিলেন ”একটি গুরুত্বপূর্ন পণ্য তৈরী করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে সেই জিনিসটা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া।”

২০০০ সালের দিকে তিনি ডেটিং সাইটটি (সোশ্যালনেট) বন্ধ করে দেন এবং পেপালে যোগদান করেন। কারণ সেই সময় তিনি পেপালের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। তখন তিনি পেপালের অবকাঠামো, ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং আইনি বিষয়গুলো দেখতেন। এরপর তিনি পেপাল থেকে বের হয়ে তৈরী  করেন সর্ব প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃহত্তম পেশাগত নেটওয়ার্কিং সাইট লিংকডইন।

দীর্ঘদিন থেকে, রিড একটি ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন যেটা পেশাদার বিশ্বের একে অপরের সাথে নেটওয়ার্ককে সহায়তা করবে। তাই পেপ্যাল ছাড়ার পর, রিড সোশ্যালনেটের দুই সাবেক সহকর্মী, ফুজিৎসুর একজন প্রাক্তন সহকর্মী এবং কলেজ সহপাঠীকে সাথে নিয়ে ২০০২ সালে লিংকডইন প্রতিষ্ঠা করেন।

২০০৩ সালের মে মাসে চালু হওয়া কোম্পানিটিতে সর্ব প্রথম পিটার থাইল এবং কিথ রাব্বিসের প্রাথমিক বিনিয়োগ করেন। অন্যান্য ব্যবসায়ের মতো, লিংকডইনেও খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়নি। শুরুটা বেশ ধীরই ছিল। তবে কিছুদিনের মধ্যে তারা ২০টি মত সাইনআপ পেল। সেখান থেকেই শুরু হল আর কখনও পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি লিংকডইনকে।

২০০৩ সালের শেষের দিকে এবং ২০০৪ সালের প্রথম দিকে লিংকডইন একটি নতুন বৈশিষ্ট্য চালু করে যেখানে অ্যাড্রেস বইগুলি আপলোড করতে যেত, যা লিংকডইনকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। এছাড়াও, তারা ছোট ব্যবসায়ীদের উৎসাহ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য গ্রুপ এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস যুক্ত করে।
পরবর্তী দুই বছরে, লিংকডইন ব্যবসায়, পাবলিক প্রোফাইল, বেকার ব্যক্তিদের জন্য জবসের বিষয়গুলো সূচনা করেছিল। ফলে ২০০৬ সালের মধ্যই কোম্পানিটি সাফল্য অর্জন করে।

পরবর্তী দুই বছরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ ওয়েনারকে পিছে ফেলে রিড চেয়ারম্যান হয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

২০১০ সালের মধ্যে, লিংকডইন বহু আন্তর্জাতিক অফিসের সত্তা হয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং এটিকে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যে মূল্যায়ন করা হয়।

একই বছরে, লিংকডইন একমাত্র বিজ্ঞাপন রাজস্বের জন্য ১৫৪.৬ মিলিয়ন ডলারের উপার্জন ঘোষণা করেছিল যা টুইটারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

সময়ের সাথে সাথে, লিংকডইনটি প্রথম এবং সর্বাধিক পেশাদার নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। যা এখন প্রায় ২০০টির বেশি দেশে ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে।

মো.হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here